‘টাকা মাটি, মাটি টাকা’- এ কথা বলেছিলেন যুগপুরুষ রামকৃষ্ণ। তা তাঁর দূরদৃষ্টি যে কতখানি তা এ দেশে এলেই টের পাবেন হাতে-নাতে। কারণ তাঁর সেই বক্তব্যই অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একটি শহর। না, সোনা, রূপো, তামা, অ্যালুমিনিয়াম কিচ্ছু না, মাটি দিয়েই মুদ্রা বানিয়ে ফেলেছে এই শহরটি। আসুন, শুনে নিই, সেই মুদ্রার ইতিহাসই।
এককালে সে শহরের বিশেষ খ্যাতি ছিল সোনার জন্য। ১৮০০ শতকে নাকি অস্ট্রেলিয়ার এই ক্যাসেলমেইন শহরের তলা থেকে মিলেছিল প্রচুর সোনাদানা। বিশ্বের সব চেয়ে ধনীতম স্বর্ণনগরী বলেও খ্যাতি ছিল এর। তা সোনার শহরে সোনার কয়েন থাকবে, এ আর আশ্চর্য কী! না, তবে সেই পথ দিয়ে হাঁটেনি এই শহর। সোনা তো দূরের, নিদেন পক্ষে অ্যালুমিনিয়াম বা লোহার মতো ধাতুরও ধার ধারেনি ক্যাসেলমেইন। বরং তার বদলে বের করে ফেলেছে মাটির মুদ্রা।
আরও শুনুন: এনেছিলেন ‘স্বপ্নের’ ন্যানো গাড়ি, এতদিনে তার কারণ খোলসা করলেন রতন টাটা
হ্যা, ব্যাপারটা আশ্চর্য হলেও সত্যি। পোড়ামাটির মুদ্রা দিয়েই সমস্ত লেনদেন চালানোর কথা ভেবে ফেলেছে সেখানকার একদল শিল্পী। পরীক্ষানিরিক্ষা হিসেবেই প্রাথমিক ভাবে শহরে চালু হয়েছে এই মাটির মুদ্রা।
সিলভার ওয়াটেল নামে স্থানীয় একটি গাছের নামেই রাখা হয়েছে মুদ্রার নাম। আপাতত দুটি দশ ডলারের জন্য ১ লেখা মুদ্রা ও ৫০ ডলারের জন্য ৫ লেখা মুদ্রা আনা হয়েছে বাজারে। মাটির মুদ্রা নিয়ে কিছু দিন আগে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছিল শহরে।
আরও শুনুন: পিঠেতে ঋণের বোঝা! পড়াশোনার খরচ চালাতে ডিম্বাণু বিক্রি তরুণীর
এই ভাবনার নেপথ্যে রয়েছেন ডালে কক্স নামে এক অস্ট্রেলিয়ান শিল্পী। ওই অর্থ যাতে স্থানীয় ভাবে খরচ হয়। বিদেশি ব্যাঙ্কে যাতে ওই অর্থ না জমা হয় কোনওভাবে, সেই ভাবনা থেকেই মাটির মুদ্রা বানানোর সিদ্ধান্ত নেন কক্স। আপাতত ক্ষুদ্র প্রকল্প হিসেবেই ব্যাপারটিকে শুরু করা হয়েছে এবং পরীক্ষানিরিক্ষার স্তরেই রয়েছে বিষয়টি এখনও। আয়করদপ্তরের যাতে কোনও বড় অঙ্কের ক্ষতি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত শহরের আট বড় ব্যবসায়ী এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন। পরিবেশ ও অর্থনীতি এই দুটোকে এক জায়গায় এনে ভাবার চেষ্টা অভিনব বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইতিমধ্যেই শহরের বেশ কিছু দোকানে চালু করা হয়েছে এই বিশেষ মুদ্রার আদানপ্রদান। ক্যাসেলমাইন শহরে একটি ছোট্ট বেকারি চালান জনি বেকার নামে এক ব্যাক্তি। তাঁর দোকানে এই মাটির মুদ্রা ব্যবহার শুরু হয়েছে। বেকারের কথায়, ক্যাসেলমেইন বরাবরই সৃষ্টিশীল শহরগুলির মধ্যে একটি। এই শহর বহু গুণী শিল্পীদর বাস। তাঁদের এই অভিনব ভাবনা শহরের খ্যাতি বাড়াবে বলেই মত তাঁর। তা এই মাটির টাকা অস্ট্রেলিয়ার সেই শহরের অর্থনীতিতে জোয়ার নিয়ে আসতে পারে কিনা সেটাই এখন দেখার।