আগামী দেড়-দু’শকের মধ্যে মহাকাশে উপনিবেশ গড়তে চাইছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেখানে ইমারত গড়া হবে কীভাবে? গবেষকরা বলছেন, পৃথিবী থেকে ইমারত সামগ্রী নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। বিকল্প হিসেবে মানুষের ঘাম-রক্ত-মূত্র ও চোখের জলকে নাকি কাজে লাগানো হবে। ব্যাপারটা কী? আসুন শুনে নিই।
কথাই ছিল, একদিন না একদিন মহাকাশে উপনিবেশ গড়বে মানুষ। তাই বলে সেই উপনিবেশ গড়তে কাজে আসবে মানুষেরই ঘাম, রক্ত? থেকে যাবে হাজার বছরের সভ্যতার চিহ্ণ? কে ভেবেছিল এমন কথা? কেউ ভাবুক আর না ভাবুক, তেমন কাণ্ডই ঘটতে চলেছে এবার। কীভাবে?
বাস্তব হতে চলছে কল্পবিজ্ঞান। চাঁদে ও মঙ্গলে উপনিবেশ গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। সেক্ষেত্রে ভিনগ্রহে তো ঘর-বাড়ি গড়তে হবে। সমস্যা হল, ভিনগ্রহে ইমারত গড়তে পৃথিবী থেকে ইট-বালি-সিমেন্ট নিয়ে যাওয়া সম্ভব না কোনওভাবেই। যেহেতু তা অতি ব্যয়বহুল ও দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ। নাসার একটি রিপোর্ট বলছে, পৃথিবী থেকে মহাকাশযানে চাপিয়ে মঙ্গলে একটি ইট নিয়ে যেতে খরচ পড়বে ২০ লক্ষ আমেরিকান ডলার। তাহলে? উপায়?
আরও শুনুন: সিনেমার মতো… রাস্তায় চলতে পারে আবার প্রয়োজনে উড়েও যেতে পারে এই গাড়ি
অভিনব উপায় ভেবে ফেলেছেন গবেষকরা। কী সেই উপায়? এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হবে মহাকাশচারীদের ঘাম, রক্ত, চোখের জল, এমনকী মূত্রকেও। যে সব মহাকাশচারীরা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে রয়েছেন, এরপর যাঁরা মহাকাশে যাবেন, উপনিবেশ গড়ার কাজে তিন-চার বছর পর থেকে যাঁরা নিয়মিত যাবেন চাঁদে ও মঙ্গলে, সেখানে টানা বেশ কিছু দিন থাকবেনও, তাঁরাই দুই গ্রহে ইমারত গড়তে প্রতি দিন দেবেন তাঁদের ঘাম, রক্ত, চোখের জল আর মূত্র।
বিষয়টি একেবারেই গালগল্প নয়। একটি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকেই জানা গিয়েছে ঘাম, রক্ত, চোখের জল আর মূত্রের আশ্চর্য ক্ষমতার কথা। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘মেটিরিয়্যালস টুডে বায়ো’–তে। ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সেই দুর্দান্ত শক্তপোক্ত পদার্থটি বানিয়েও ফেলেছেন, যাতে মেশানো হয়েছে মানুষের ঘাম, রক্ত, অশ্রু ও মুক্ত। যা চাঁদে ও মঙ্গলে ইমারত গড়তে কাজে আসবে। ঠিক কীভাবে বানানো হয়েছে?
গবেষকরা চাঁদ ও মঙ্গলের পৃষ্ঠের ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন মানবরক্তের প্লাজমায় থাকা প্রোটিন অ্যালবুমিনকে। এর ফলে যে পদার্থটি তৈরি হয়েছে তা পৃথিবীর নিত্য ব্যবহার্য কংক্রিটের মতোই শক্তপোক্ত। সদ্য উদ্ভাবিত পদার্থটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অ্যাস্ট্রোক্রিট’। যা ভিনগ্রহের বায়ুমণ্ডলের চাপ সহ্য করতে সক্ষম হবে। গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, উদ্ভাবিত নতুন পদার্থটির সঙ্গে যদি ঘাম, চোখের জল আর মূত্রে থাকা ইউরিক অ্যাসিড মিশিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে তা আরও বেশি শক্তপোক্ত হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে এই বিষয় হিসেব কষে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। কেমন হিসেব?
আরও শুনুন: মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হতে পারে ১৫০ বছর! কীভাবে সম্ভব?
গবেষকরা জানিয়েছেন, ছ’জন মহাকাশচারী যদি টানা দু’বছর ধরে রক্তদান করেন তা হলে সেই রক্তের অ্যালবুমিন দিয়ে তৈরি হতে পারে ৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের অ্যাস্ট্রোকিট। চাঁদে, মঙ্গলে ইমারত গড়তে যা কাজে আসবে। অতএব, মহাকাশে উপনিবেশ গড়ায় আর দেরি নেই মানুষের। সবচেয়ে বড় কথা তাতে থাকবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা, রক্ত জল করা মানব সভ্যতার চিহ্ন। দাম মিলবে পার্থিব পৃথিবীর চোখের জলেরও।