রেস্তরাঁয় গিয়ে আয়েশ করে জমিয়ে খানাপিনা, বর্তমান সময়ে এ তো খুব চেনা ছবি। বিশেষ মুহূর্ত উদযাপন বা যে কোনও চুতোনাতায় আমরা রেস্তরাঁইয় গিয়ে ভিড় জমাই। তবে তা যে শুধু এখনকারই রীতি-রেওয়াজ, তা কিন্তু নয়। হাজার পাঁচেক বছর আগেও মানুষ যেতেন পানশালায়। সম্প্রতি এমনই নিদর্শন খুঁজে পেলেন পুরাতত্ত্ববিদরা। কোথায় মিলল এই নমুনা? আসুন শুনে নিই।
ছবিটা মনে মনে কল্পনা করে নেওয়া যায়। সারি সারি বেঞ্চ পাতা রয়েছে। বাটিতে বাটিতে সাজানো খাবার। মাছের কাঁটা বা মাংসের হাড়ের নমুনা দেখে আন্দাজ করা যায় খাবারের ধরন। সেই সঙ্গে আয়োজন ছিল সুরারও। ঠিক আধুনিক কালের মতো না হলেও, সেকালে ছিল রেফ্রিজারেটরও। না, এ কোনও আধুনিক রেস্তরাঁর ছবি নয়। এই রেস্তরাঁ কিংবা পানশালা – একে যা-ই বলা যাক না কেন – তা পৃথিবীতে ছিল অন্তত ৫০০০ বছর আগে। সম্প্রতি ইরাকে খনন চালিয়ে এই প্রাচীন পানশালার হদিশ পেলেন পুরাতত্ত্ববিদরা।
আরও শুনুন: সম্ভাবনা এল নিনোর, গরমের তীব্রতায় কি নাজেহাল হবে দেশ?
পূর্বপুরুষ অর্থাৎ প্রাচীন মানুষদের জীবনশৈলী ঠিক কেমন ছিল, তা জানার কৌতূহল আমাদের চিরকালেরই। আর তাই আধুনিক সময়ে নিরন্তর চলে সেই খোঁজ। প্রাচীন শহর, সড়কের খোঁজ থেকে যেমন বহু পুরনো সময়ের জীবনযাত্রার ছবি স্পষ্ট হইয়েছে আমাদের কাছে। ঠিক সেভাবেই এই প্রাচীন পানশালার খোঁজ মেলাতেও বহু নতুন তথ্য সামনে উঠে এসেছে। পেনসিলভিনিয়া ও পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের যৌথ উদ্যোগে চলে এই খননকার্য। হলি পিটম্যানের নে্তৃত্বে চলছিল সন্ধানকাজ। তিনি জানাচ্ছেন, ইরাকে খননের ফলে যে পানশালা বা রেস্তরাঁর হদিশ মিলেশে সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে অসংখ্য বাটি। মনে করা হচ্ছে, এই বাটিতে করেই খাবার পরিবেশন করা হত। ক্রেতারা এসে বসতেন সার দিয়ে সাজিয়ে রাখা বেঞ্চে। তারও নমুনা মিলেছে। আর পাওয়া গিয়েছে একটি রেফ্রিজারেটর-সদৃশ বস্তুর নমুনা। তার পিছনেই আছে একটি উনুন। সেখানেই রান্নাবান্না হত বলেই অনুমান। এখানে যে সুরাপানেরও রেওয়াজ ছিল, তারও নমুনা মিলেছে। পিটম্যান বলছেন, সুমেরিয়ানদের মধ্যে এই রীতি বহুল প্রচলিত ছিল। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা জলের থেকেও বেশি বিয়ার জাতীয় পানীয় পান করতেন। ফলত এই রেস্তরাঁ যে আদতে পানশালা, এমনটাই অনুমান তাঁদের।
আরও শুনুন: পাহাড় কেটে রাস্তা থেকে ‘নিজস্ব তাজমহল’, প্রেমের জন্য অসাধারণ কীর্তি সাধারণ মানুষের
দক্ষিণ ইরাকের যে জায়গায় এই পানশালার খোঁজ মিলেছে, তাকে এককালে বলা হত ‘ঈশ্বরের উদ্যান’। কেননা এখানকার মাটি ছিল খুব উর্বর। ফলত সেকালের মানুষ, যাঁরা এই পানশালায় আসতেন, তাঁদের পেশা ঠিক কী ছিল, তা জানতে এখন দারুণ আগ্রহী গবেষকরা। সব মিলিয়ে এই সন্ধান রীতিমতো নতুন একটি অধ্যায়েরই সূচনা করেছে গবেষণা মহলে। প্রাচীন মানুষের পেশা, বসবাস, খাদ্যাভাস সম্পর্কে বহু নতুন জিনিস এর থেকে জানা যাবে বলেই আশা পুরাতত্ত্ববিদদের।