রাজনৈতিক নেতানেত্রী মানে তিনি নানাভাবে সুবিধা পেতে অভ্যস্ত, এমনটাই দেখে থাকি আমরা। কিন্তু খোদ দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েও ব্যতিক্রমী ছিলেন এপিজে আবদুল কালাম। এমনকি বিনামূল্যে কোনও উপহার পর্যন্ত গ্রহণ করতে রাজি ছিলেন না তিনি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তেমনই এক ঘটনার কথা।
কেউ উচ্চপদে রয়েছেন মানেই তাঁকে নানাভাবে তোয়াজ করার চেষ্টা চলে বাকিদের মধ্যে। নামীদামি মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রে যাতে পরবর্তীতে কোনও সুবিধা পাওয়া যায়, সেদিকটি নিশ্চিত করতেই এই চেষ্টা চলে। তাই উচ্চপদস্থ মানুষদের নানারকম ভেট পাঠিয়ে থাকেন অনেকেই। উলটোদিকে, ওই উচ্চপদস্থ মানুষেরাও অনেকেই এইরকম সুযোগসুবিধা, বাড়তি সমাদর পেতে অভ্যস্ত হয়ে যান। বিশেষ করে এ দেশে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের যে বিপুল ক্ষমতা, তার দরুন রাজনৈতিক মহলে এই লেনদেনের প্রবণতা আরও বেশি করেই চোখে পড়ে। কিন্তু সকলে তো একরকম হন না। সে কথাটিই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের একসময়ের রাষ্ট্রপতি, এপিজে আবদুল কালাম।
আরও শুনুন: ভারত জয় করেন মুসলিম শাসকরা, তবে ভিনদেশ দখলের অভ্যাস ছিল না হিন্দু রাজাদের… সত্যি?
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি চেকের ছবি পোস্ট করেছিলেন এক আইএএস আধিকারিক, যে চেকে কালামের সই রয়েছে। চেকটির অর্থমূল্য ৪৮০০ টাকা। আর এই চেকের সূত্রেই রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন কালামের এক আচরণের কথা সামনে এনেছেন ওই আমলা। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন কালাম। সেই অনুষ্ঠানের স্পনসর ছিল একটি গ্রাইন্ডার সংস্থা। সংস্থার তরফ থেকে রাষ্ট্রপতিকে একটি গ্রাইন্ডার উপহার দেওয়া হয়। যদিও সেই উপহার নিতে ঘোর আপত্তি ছিল কালামের। তবে সংস্থার কর্তৃপক্ষের জোরাজুরিতে সেটি নিতে কার্যত বাধ্যই হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কালাম তো হার মানার পাত্র নন। অনুষ্ঠান শেষে ফিরেই ওই গ্রাইন্ডারটির বাজারদর অনুযায়ী একটি চেক লিখে তিনি সংস্থার নামে পাঠিয়ে দেন। খোদ রাষ্ট্রপতির থেকে চেক পেয়ে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়েন সংস্থার কর্ণধারেরা। তাঁরা স্থির করেন, এই চেকটি তাঁরা ব্যাঙ্কে জমা করবেন না, স্মারক হিসেবেই রেখে দেবেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে ওই অঙ্কের টাকা ডেবিট হয়নি দেখে ফের তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কালাম। সাফ জানিয়ে দেন, চেক ভাঙানো না হলে গ্রাইন্ডারটি ফেরত দিতে বাধ্য হবেন তিনি। শেষ পর্যন্ত চেকটি ভাঙাতে বাধ্য হয় সংস্থা, তবে চেকের একটি কপি করে সেটি বাঁধিয়ে রাখে তারা।
আরও শুনুন: মুসলিম বা ব্রিটিশ আমলে নয়, হিন্দু রাজাদের সময়েই কি বেশি ধনী ছিল দেশ?
সম্প্রতি সেই চেকের ছবির সঙ্গে সঙ্গেই এই ঘটনার কথা ভাগ করে নিয়েছেন ওই আইএএস অফিসার। যেখানে সকলে বিন্দুমাত্র ক্ষমতা পেলেও তার সুবিধা নিতে তৎপর, সেখানে এই ঘটনা সত্যিই ব্যতিক্রম। আর সেই ঘটনাই আরও একবার চিনিয়ে দিল এপিজে আবদুল কালামের মতো ব্যতিক্রমী রাষ্ট্রনেতাকে।