নিতান্তই অবলা জীব। আইন-কানুন সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। তবু অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয়েছে তাদেরও। শুনতে অবাক লাগলেও, বিভিন্ন অপরাধের কারণে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে টিয়াপাখি কিংবা ছাগলকেও। কী এমন অপরাধ করতে পারে এই পশুপাখিরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
হেঁটে চলেছেন এক বৃদ্ধা। তাঁকে দেখে হঠাৎ অশ্রাব্য শব্দ উচ্চারণ করতে শুরু করল এক টিয়া পাখি। ব্যস মানহানির মামলায় সোজা গারদের ওপারে। শুনতে অবাক লাগলেও এক্ষেত্রে শাস্তি হয়েছিল সেই টিয়া পাখিটিরই। এখানেই শেষ নয়। জজ সাহেবের বাগানে ঢুকে নির্বিচারে গাছ নষ্ট করা থেকে আরম্ভ করে টাকা চুরি করা, বিভিন্ন অপরাধে গারদের ওপারে ঠাঁই হয়েছে ছাগল কিংবা কুকুরেরও। অবাক করা এরকমই কিছু অপরাধ আর গ্রেপ্তারির ঘটনা আমরা শুনে নেব, যেখানে মানুষ নয়, অপরাধী আসলে মনুষ্যেতর পশুপাখিরাই।
আরও শুনুন: যক্ষ-যুধিষ্ঠিরের কথোপকথনের সাক্ষী সেই জলাশয় এখন পাকিস্তানে
সবথেকে অদ্ভুত কাণ্ডটি ঘটিয়েছিল বিহারের একটি কুকুর। নিতান্তই সাধারণ ওই পথকুকুরটির তথাকথিত কোনও মালিক ছিল না। স্থানীয় লোকেরা যেদিন যেমন খেতে দিত তাই খেয়েই দিন কাটত তার। একদিন সেই এলাকার এক ব্যক্তি ব্যাগে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা বাড়িতে নিয়ে আসেন। ঘরের ভিতর সেই টাকা রেখে কোনও কাজের জন্য তিনি একবার বাইরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না আড়াল থেকে তাঁর সমস্ত গতিবিধি লক্ষ্য করছিল সেই কুকুরটি। যেই না সুযোগ মিলেছে, ওমনি ব্যাগ মুখে করে দৌড়। অবলা প্রাণীটি বুঝতে পারেনি ব্যাগের ভিতর ঠিক কী আছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে ব্যাগটি নিয়ে বেশ কিছুদূরে চম্পট দেয়। এদিকে এতগুলো টাকা নিয়ে কুকুরটি পালিয়ে যাচ্ছে দেখে সঙ্গে সঙ্গে তার পিছু নেন ওই ভদ্রলোকও। রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়েই কিছু টাকার নোট তিনি কুড়িয়ে পান। সেভাবে অন্তত লাখ দেড়েক তিনি উদ্ধার করতে পেরেছিলেন। কিন্তু গোটা ব্যাগটি নিয়ে কুকুরটি যে কোথায় পালিয়ে গিয়েছিল তার হদিশ কেউ পায়নি। রাগের মাথায় পুলিশের কাছে গিয়ে কুকুরটির নামেই ফৌজদারি মামলা করেছিলেন সেই ব্যক্তি।
এরপরেই বলতে এক ছাগলের অপরাধের কথা। চেন্নাইয়ের রাস্তায় একবার একদল ছাগল হঠাৎ ধাক্কা মারে একটি পুলিশের গাড়িতে। ঠিক কী কারণে ছাগলগুলি ওরকম আচরণ করেছিল বোঝা না গেলেও, পুলিশ ভ্যানটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের ধাক্কার চোটে। সেখানে ছিল প্রায় ১২টি ছাগল, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কর্মীরা সেই ছাগলগুলিকে আটক করে। প্রাথমিক ভাবে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। পরে ছাগলগুলির মালিক সেখানে পৌঁছালে তাঁর কাছ থেকেই জরিমানা আদায় করে পুলিশ। এছাড়াও ছত্রিশগড়ের এক গ্রামে একটি ছাগলকে গ্রেপ্তার করা হয় স্বয়ং জজ সাহেবের বাগান নষ্ট করার অপরাধে।
তালিকা এখানেই শেষ নয়। একবার কেরলে তিনজন নিরীহ মানুষকে পিষে দেয় এক হাতি। সরাসরি পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে প্রাণীটিকে। এভাবেই কখনও কারও জিনিস কেড়ে নেওয়া কিংবা বিনা অনুমতিতে ভারত-পাকিস্তানের বর্ডার পার করার অপরাধে শাস্তি পেতে হয়েছে বাঁদরকে। তালিকায় বাদ নেই বেড়ালও। এমনিতেই মাছ চুরির অপবাদের বেড়ালের কথাই সব ক্ষেত্রে উঠে আসে, সেই বেড়াল নাকি একবার চুরি করেছিল আস্ত মোবাইল ফোন। এছাড়াও খুনের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিল এক গরু। কিংবা গুপ্তচর হিসেবে ধরা পড়েছিল এক পায়রাও। প্রত্যেকেরই শাস্তি হয়েছিল বেশ জোরদার।
আরও শুনুন: মেয়ে গেল কলেজে, ফেরার পথে হাপুস নয়নে কান্না বাবার, দেখে আপ্লুত নেটদুনিয়াও
দুঃখের বিষয় এই যে, মানুষের দুনিয়ার আইন-কানুন এই পশুরা জানেই না। তবু এই সব ক্ষেত্রে মানুষের দেওয়া শাস্তি তাঁদের মাথা পেতেই নিতে হয়।