পরিণাম হাজতবাস জেনেও চুরি করেছেন এক বছর ৮১-র বৃদ্ধা। তারপর কী হল তাঁর? ধরা কী পড়লেন? আর চুরিই বা কেন করতে গেলেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পৃথিবীর উদ্বাস্তুদের যদি এক করা যায়, একটা গোটা দেশ তৈরী হয়ে যাবে। তবে, মানুষের গড়ে তোলা এই কৃত্রিম দুনিয়াতে, উদ্বাস্তুদের অবস্থা পোকামাকড়ের থেকে বেশি কিছু নয়। কেউ ফিরেও তাকায় না তাঁদের দিকে। জঞ্জালে পরে থাকা অব্যবহৃত, ভাঙা আসবাবের মতোই অবহেলিত এই উদবাস্তুরা। পরোপজীবি, উচ্ছিষ্টভোজী। ইতিহাস বলে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই, দেশভাগের পর পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারতে প্রচুর মানুষ বহু বছর ধরে উদবাস্তুদের মতো করে জীবন কাটিয়ে চলেছেন। স্রেফ তাই নয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও দুই দেশের অনেক বাসিন্দাই নিজের জীবনের কথা ভেবে অন্য দেশে গিয়ে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন উদবাস্তুর জীবন।
:আরও শুনুন:
আবাদ করে সোনা নয়, বাগানে ৩ লাখি জাপানি আম ফলালেন দেশের ‘শিল্পী’ কৃষক
শুধু যে রাজনৈতিক বা ধর্মযুদ্ধের কারণেই উদবাস্তুর সমস্যা দেখা যাচ্ছে তা নয়। এর মধ্যেও অনেকে আছেন যাদের পরিবার-পরিজন থেকেও নেই। কারণ সেই পরিবারের লোকজনই, বাড়ির সেই অতিরিক্ত হয়ে যাওয়া, সদস্যকে বের করে দেন বাড়ি থেকে। নিজের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলেন কর্তব্যের বোঝা। সেরকমভাবেই হঠাৎ উদ্বাস্তু হয়ে গিয়েছিলেন জাপানের এক বছর ৮১-র বৃদ্ধা আকিও। তারপর তিনি গেলেন চুরি করতে। ধরা পড়বেন জেনেও। কেন? তাহলে কী তিনি কপর্দকশূন্য হয়ে চুরিকে জীবিকা করলেন? একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাপানে বসবাসকারী ৮১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে বাস্তুছাড়া করেছে তাঁর নিজের ছেলে। বৃদ্ধার নাম আকিও।
ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর তিনি রাস্তায় রাস্তায় খুঁজে বেড়িয়েছেন একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই। স্থায়ী ঠিকানার অভাবে কখনও গাছের নিচে, কখনও ফুটপাতে ল্যাম্পপোস্টের নীচে, কখনও কারও বন্ধ দোকানের সামনে তো কখনও রেলস্টেশনে রাত কাটাতে হয়েছে তাঁকে। বাধ্য হয়েই এই উদ্বাস্তু জীবন মেনে নিতে হয়েছে আকিওকে। কিন্তু একটু নিশ্চিন্তির ঘুম? উদবাস্তুদের কী এটুকু চাহিদা থাকতে পারে না? তাই ৮১-র আকিও একদিন চুরি করার প্ল্যান করলেন। ভাবছেন তো, সর্বনাশ! চুরি করলে যে হাজতবাস করতে হবে! সেখানে কী শান্তি মিলবে? উত্তর জানা ছিল আকিওর। উত্তরটা হল হ্যাঁ। চুরি করে ধরা পড়তে হবে। এটাই ছিল মিশন। তবেই মিলবে শান্তির নিদ্রা। বলা বাহুল্য সেটা হাজতে। আর হাজতে থাকাকালীন খাবারও মিলিবে। তাই দুবেলা-দুমুঠো খাবারের জন্যেও আকিও-কে ঘুরে বেড়াতে হবে না আর।
:আরও শুনুন:
পর্যটকদের জ্বালায় অতিষ্ঠ, পাহাড় ঢেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জাপানে
এই তাঁর কাছে ঢের। তবে স্রেফ আকিওই একা নন, দেশে-বিদেশে এমনও অনেক মানুষ আছেন যারা স্থায়ী বসতির অভাবে, বাধ্য হয়েই চুরি করেন। সরকার বা পরিবারের সদস্যের অবহেলার ফলে এমন পথই বেছে নিতে হয় তাঁদের। যুগের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশ হয়তো প্রগতির পথে এগিয়ে যাবে ঠিকই, কিন্তু এই উদবাস্তুদের সমস্যা কতদিনে মিটবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে ।