পেশায় অটোচালক। কিন্তু তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ডক্টরেট উপাধি। বরাবর স্বপ্ন দেখতেন অধ্যাপক হওয়ার। তাই হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষার পথে হেঁটেছেন এই ব্যক্তি। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
রুজিরোজগারের প্রয়োজনে অটো চালাতে হয় তাঁকে। পথচলতি যাত্রীরা অটোর চালকের যেমন কথা বলেন, সেভাবেই কথাবার্তা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। স্টিয়ারিং-এ হাত রেখে যাঁর দিন কাটে, তাঁর ঝুলিতে আছে কিনা ডক্টরেট ডিগ্রি! যাত্রীদের যাঁরা এ গল্প শোনেন, তাঁরাই স্তম্ভিত হয়ে যান।
আরও শুনুন: রমজান মাসেই ভাঙা পড়ল ২৫০ বছরের পুরনো মসজিদ-সংলগ্ন মাদ্রাসা, শুরু বিতর্ক
আসলে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী কেউ অটো চালাচ্ছেন, এমনটা ভাবা সহজ নয়। কিন্তু বাস্তবেই রয়েছে এমন একজন, যিনি এক লহমায় এই ধারণা বদলাতে দিতে পারেন। কথা বলছি, দীপক কুমার দুবে সম্পর্কে। ছাপোষা চেহারা। নম্র আচরণ। উচ্চশিক্ষিত বলেই শিক্ষার অহং তাঁকে আচ্ছন্ন করেনি। আর তাই এক ঝলক তাঁকে দেখে কেউ বুঝতেই পারে না, যে, একজন অটোচালক হয়েও তিনি আসলে পিএইচডি। অন্যান্য অটোচালকদের মতোই সারাদিন অটো নিয়ে শহরের এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ান। আর তাঁর গল্প শুনে সকলেই অবাক হয়ে যান। কেননা দীপকের জীবনের গল্প অনেকটা বিস্ময়ের, অবাক করোর মতোই।
তবে তাঁর এই অবস্থা ঠিক বেকারত্বের পরিহাস নয়। মানে উচ্চশিক্ষিত হয়েও তিনি আর কোনও চাকরি পাননি, তাই অটো চালাচ্ছেন, এমনটা ঠিক নয়। বরং তাঁর ক্ষেত্রে ঘটেছে ঠিক উল্টোটা। এই পেশায় যোগ দেওয়ার পরই তিনি পিএইচডি করেছেন। যদিও বরাবরই অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। শুধু সংসারের চাপে সে সুযোগ হয়নি। পড়াশোনা সম্পূর্ণ শেষ করার আগেই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়। কিন্তু স্বপ্ন দেখা থামাননি দীপক। নিজের পেশা বজায় রেখেই মুম্বই ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন। যদিও কাজ বন্ধ রেখে নিয়মিত কলেজ যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই ডিস্ট্যান্ড এডুকেশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এরপরেও তাঁর লড়াই থামেনি। অধ্যাপক হতে গেলে ডক্টরেট ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। তাই দীপক ঠিক করেন তিনিও পিএইচডি করবেন। সেইমতো যাবতীয় পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয়ে পিএইচডি আরম্ভও করেন তিনি। তাঁর বিষয় ছিল হিন্দি। নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর পড়াশোনা শেষ হয়। গবেষণাপত্র জমা দিয়ে ঝুলিতে ভরেন ডক্টরেট উপাধি। এতদসত্ত্বেও অটো চালানো বন্ধ করেননি তিনি। বলা বাহুল্য অন্য কোনও বিকল্প পেশায় যাওয়ার ইচ্ছাও ছিল না তাঁর। কেবলমাত্র অধ্যাপনার সুযোগ পেলেই সে পথে হাঁটবেন বলে ঠিক করেছিলেন দীপক।
আরও শুনুন: যেন উলটপুরাণ! সনাতন ধর্ম রক্ষায় ‘বেদ বিদ্যালয়ে’ জোর কংগ্রেসেরই
এখনও পর্যন্ত সেই সুযোগ তিনি পাননি। মাঝে কোনও এক কলেজে অতিথি হিসেবে অধ্যাপনার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তা স্থায়ী ছিল না। তাই ঝুলিতে ডক্টরেট উপাধি আর চোখে এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে অটো নিয়ে ছোটেন তিনি। এখনও মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন একদিন তাঁর অধ্যাপনার স্বপ্নও ঠিক পূরণ হবে।