মাটির তলায় জেগে রয়েছে আস্ত একটা শহর। রয়েছে বাজার, দোকান, বাড়ি, এমনকি চার তারা হোটেলও। সেখানেই বসবাস মানুষের। কোথায় রয়েছে এমন পাতাল শহর? শুনে নিন।
পাতাল রেল তো শুনেছেন? পাতাল শহর শুনেছেন কী? না, কোনও রূপকথার গল্প বলছি না মোটেই। বাস্তবেই রয়েছে এমন শহর। যেখানে মাটির নিচে মিলবে গোটা একটা শহর। গির্জা থেকে বাজার, দোকান থেকে বাড়িঘর সবই রয়েছে ভূগর্ভেই। এমন আশ্চর্য শহরখানা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বুকে।
আরও শুনুন: সবথেকে কম সময়ে বিশ্বপরিক্রমার রেকর্ড, গিনেস বুকে নাম ভারতীয় গিটারিস্টের
কুবার পেডি নামে ওই শহরে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম উপল খনি। ১৯১৫ সালে গড়ে উঠেছিল এই মাটির তলার নগরী। বাহারি পাথর বা উপলের খোঁজ পেয়ে অনেক ভাগ্যান্বেষীই চলে এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে ৮৪৬ কিলোমিটার দূরে এই এলাকায়। আদতে জায়গাটা মরুভূমি। কিন্তু সেখানেই মাটি খুঁড়ে চলতে লাগল উপলের খোঁজ। খোঁড়াখুঁড়ির ফলে মাটির নিচে তৈরি হল বড় বড় সব গুহা। সেখানেই ক্রমে গড়ে উঠল গোটা একটা শহর। স্থানীয় শব্দ কুপা পিটি থেকে এসেছে কুবার পেডি শব্দটা। যার অর্থ ‘হোয়াইট ম্যান’স হোল’ বা ‘সাদা মানুষের গর্ত’। সম্ভবত ভাগ্যান্বেষীরা এসে সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছিলেন বলেই এমন নাম। ২০১১ সালের আদমসুমারী অনুযায়ী, এই শহরে বসবাস করেন প্রায় ১৭০০ মানুষ। মরুভূমি এলাকা, কাজেই দিনের বেলা প্রচুর গরম থাকে কুবার পেডিতে। রাতের বেলা তুলনামূলক আবহাওয়া অনেক আরামদায়ক। তাই এখানকার লোকেরা রাতের বেলা গল্ফ খেলতে পছন্দ করেন। মাটির তলায় রয়েছে একটি ফুটবল ক্লাবও। শুধু কি ফুটবল ক্লাব, রেস্তরাঁ, বইয়ের দোকান, সিনেমা হল, দোকানপত্তর সবই রয়েছে মাটির তলাতেই।
খনিজ সম্পদের দিক থেকে কুবার পেডির মতো সমৃদ্ধশালী জায়গা বোধহয় কমই আছে। পৃথিবীর বৃহত্তম উপলের ভাণ্ডার এই কুবার পেডি। অন্তত ৭০টি উপল খনি রয়েছে এখানে। শুধু উপলই নয়, ১৯ শতকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে লৌহ আকরিক সমৃদ্ধ এলাকা ছিল এই কুবার পেডিই। ২০১৩ সালে কুবার পেডির পাশে আর্কারিনজা বেসিন বলে একটি জায়গায় প্রচুর পরিমাণে তেলের সন্ধান পান গবেষকেরা। যা ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়াকে অন্যতম তেল রফতানিকারক দেশ হিসেবে তুলে আনতে পারে বিশ্বের ম্যাপে।
আরও শুনুন: নকল ট্রেন, নকল রেললাইন! তৈরি হয়েছিল নকল প্যারিস, কেন জানেন?
এর আগে বেশ কয়েকবার পর্দায় ধরা পড়েছে এই মাটির নিচের এই রহস্যময় দেশ। ঘাস নেই, নেই একটা সবুজ গাছও , আছে বলতে শুধু তৈলাক্ত বালি। মরুভূমি এলাকার জীবন সহজ নয়। তাই বসতি গড়ে উঠল মাটির নিচেই। যা বাইরের চরম আবহাওয়ার থেকে অনেকটাই আরামদায়ক। তবে মাটির নিচে হওয়ায় দোকান, বাড়ি সবটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে তৈরি করতে হয় এই এলাকায়। পর্যটকদের কাছেও ক্রমশ দারুণ আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠেছে এই কুবার পেডি। মাটির নিচেগোটা একটা শহর যদি নিজের চোখে দেখতে যান, তবে ঘুরে আসতেই হবে এই সাদা মানুষের গর্ত থেকে।