প্রবল ঝড়, মাটি ধসে তছনছ হয়ে গিয়েছে ঘর। মাথা বাঁচাতে বাড়ির ফ্রিজের মধ্যে গিয়ে লুকিয়েছিল একরত্তি। পরদিন নদীর ধার থেকে মিলল সেই ফ্রিজ। ভিতরে মিলল অক্ষত শিশু। ওই যে কথায় বলে, রাখে হরি, মারে কে! আসুন, শুনে নিই মারাত্মক বিপদের মুখ থেকে ওই খুদের বেঁচে ফেরার গল্প।
২০ ঘণ্টা টানা ফ্রিজের ভিতরে বন্ধ! সহজ ছিল না বেঁচে থাকা। তবে সেই যুদ্ধটাই জয় করে ফেলেছে বছর এগারোরর এই খুদে। প্রবল ঝড় মেগিতে ওলটপালট হয়ে গিয়েছে ফিলিপ্পিনসের লেইটে প্রদেশ। একা ঝড়ে রক্ষে নেই, সঙ্গে দোসর মাটি ধস। প্রবল ঝড়ের মধ্যে যখন ধসের মুখে পড়ল তাদের বাড়িটা, কোনও মতে মাথা বাঁচাতে বাড়ির ফ্রিজের মধ্যে গিয়ে সিধিয়েছিল বছর এগোরোর ওই খুদে। সেভাবেই কেটে গিয়েছিল প্রায় ২০ ঘণ্টা।
আরও শুনুন: আকাশে হঠাৎ খুলে গেল বিমানের দরজা! হাত দিয়ে আটকে সবার প্রাণ বাঁচালেন দুই যাত্রী
বদ্ধ ফ্রিজের ভিতরে বন্দি শিশুটি যে বেঁচে যাবে, তা আন্দাজ করাও ছিল কঠিন ব্যাপার। তবে পরের দিন নদীর ধারে মেলে সেই ফ্রিজটি। আর সেটির দরজা খুলেই অবাক হয়ে যান উদ্ধারকারীরা। ওই ফ্রিজের মধ্যেই যে কোনও ক্রমে আটকে রয়েছে একটি বালক। প্রাণে বাঁচলেও একটি পা ভেঙে গিয়েছে জেসমি নামে ওই খুদের। উদ্ধারকারীরা জানান, ফ্রিজের দরজা খোলার সময়েও জ্ঞান ছিল জেসমির। উদ্ধারকারীদের দেখেই সে জানায়, তার খুব খিদে পেয়েছে।
ওই ফ্রিজটিকেই অস্থায়ী স্ট্রেচার বানিয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে পায়ে অস্ত্রোপচারও হয়েছে তার। আপাতত ভাল আছে ওই খুদে। তবে যে ভাবে ভয়ঙ্কর বিপদের হাত থেকে উদ্ধার পেয়েছে সে তা দেখে অবাক সকলে। একে মিব়্যাকেল ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছেন না তাঁরা।
আরও শুনুন: ডাউন’স সিন্ড্রোমকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাবার সঙ্গে এভারেস্ট চড়ল সাত বছরের খুদে
গত কয়েকদিনের ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছে ফিলিপ্পিনস। বে-বে এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে আগত হয়েছেন অন্তত ২০০ জন গ্রামবাসী। এখনও পর্যন্ত ১৭২ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ঘরছাড়া ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। এখনও অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে উপস্থিত বুদ্ধির জেরেই যে বেঁচে গিয়েছে ছোট্ট জেসমি, তা একবাক্যে স্বীকার করেছে সকলেই। জেসমির এই বেঁচে ফেরার গল্প ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তবে নিজে বেঁচে ফিরতে পারলেও তাঁর পরিজনদের অবস্থা সঙ্কটজনক। তাঁর মা ও বাকি ভাইবোনদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দু-দিন আগেই অন্য একটি ভূমিধসে মারা গিয়েছেন জেসমির বাবা। তার বছর তেরোর দাদারও খোঁজ মেলেনি এখনও। এই অবস্থায় প্রাণে বাঁচলেও হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে জেসমির জন্য যে অন্য লড়াই অপেক্ষা করছে, তা তো বলাই বাহুল্য।