ভোলানাথের প্রিয় মাস। শ্রাবণে দলে দলে শিবের মাথায় জল ঢালতে যান ভক্তরা। বেশিরভাগই সেই জল নিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁক ব্যবহার করেন। কিন্তু জানেন কী এর নেপথ্যে ঠিক কী কারণ রয়েছে? আর এই বাঁকে করে জল নিয়ে যাওয়ার প্রচলনই বা হয়েছিল কীভাবে? আসুন শুনে নিই।
ভোলেবাবা বাবা করেগা! শ্রাবণমাসে, দেশের যে কোনও শিবক্ষেত্র এই ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। সব জায়গায় ভক্তদের ছবিও ধরা পড়ে খানিকটা একইরকমের। প্রায় সকলেই কাঁধে বাঁক নিয়ে শিবমন্দিরের দিকে হাঁটছেন। খালি পা। পরনে ধুতি বা শিবের ছবি আঁকা পোশাক। আর বাঁকের দুপাশে ঝুলছে জলের কলসি। যুগ যুগ ধরে শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য এই বাঁক ব্যবহার করেন ভক্তরা।
আরও শুনুন: জল দিলেও শুকিয়ে যাচ্ছে বাড়ির তুলসীগাছ! বড়সড় বিপদের ইঙ্গিত, কীভাবে সাবধান হবেন?
তবে সর্বপ্রথম এইভাবে শিবের মাথায় কে জল ঢেলেছিল জানেন?
সে তথ্যের হদিশ মেলে পুরাণে। শিবভক্ত হিসেবে পুরাণে অনেকেরই উল্লেখ মেলে। তবে রাবণের মতো শিবভক্তের উদাহরণ খুব একটা নেই বললেই চলে। অসুর হলেও, তিনি শিবপূজা না করে জলস্পর্শ করতেন না। মহাদেবের আশীর্বাদে তাঁর অগাধ শক্তি হয়েছিল। এমনকি রাবণের দশানন হয়ে ওঠাও দেবাদিদেবের বরেই। পুরাণমতে রাবণই সর্বপ্রথম শিবের মাথায় জল ঢালতে বাঁক ব্যবহার করেছিলেন। উত্তরভারতে এই যেসব শিবভক্তরা বাঁকে করে জল নিয়ে যান, তাঁদের কানওয়ারি বলা হয়। আর এই জল ঢালতে যাওয়াকে বলা হয়, কানওয়ার যাত্রা। বেশ কিছু জায়গায় রাবণকেই প্রথম কানওয়ারি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সে প্রসঙ্গে একটি কাহিনীও রয়েছে। কথিত আছে, আরাধ্য মহাদেবের এতটুকু কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না রাবণ। তাই সমুদ্র মন্থনে উঠে আসা বিষ পান করার পর মহাদেব যেভাবে কষ্ট পাচ্ছিলেন, তা রীতিমতো উদ্বিগ্ন করে তোলে রাবণকে। তক্ষনি শিবের মাথায় জল ঢালতে উদ্যত হন তিনি। এদিকে একসঙ্গে অনেকটা জল নিয়ে আসা তাঁর একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। পুরাণমতে তখন এক লম্বা দন্ডের দুপাশে কলসি ঝুলিয়ে গঙ্গাজল নিয়ে আসেন তিনি। প্রভুর মাথায় জল ঢেলে তাঁকে খানিক শান্ত করেন। আর এভাবেই নাকি বাঁকে করে শিবের মাথায় জল ঢালার প্রচলন হয়।
আরও শুনুন: শিবলিঙ্গে জল ঢালার সঠিক নিয়ম জানেন তো? না মানলে রুষ্ট হবেন স্বয়ং মহেশ্বর
যদিও স্রেফ রাবণ নয়। শিবভক্ত পরশুরামও এইভাবে শিবের মাথায় জল ঢালতে যেতেন। কথিত আছে, তিনি গড়মুক্তেশ্বর ধাম থেকে গঙ্গাজল নিয়ে বর্তমান উত্তরপ্রদেশের বগপতের কাছে বিখ্যাত শিবমন্দিরে জল ঢালতে। এখনও হাজার হাজার ভক্ত সেই মন্দিরে জল ঢালতে যান। এখানেই শেষ নয়। তালিকায় শ্রীরাম চন্দ্রের নামও রয়েছে। কথিত আছে বিহারের সুলতানগঞ্জ থেকে গঙ্গাজল নিয়ে দেওঘরের বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গে ঢালতে যেতেন রাঘব। সকলেই অবশ্য শ্রাবণমাস জুড়ে এই নিয়ম পালন করতেন। এখনও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই সময় দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গে ভিড় হয় চোখে পড়ার মত। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিবমন্দিরগুলিতে শ্রাবণমাসে জল ঢালতে হাজির হন শিবভক্তরা। মনে করা হয়, এতে বিশেষ তুষ্ট হন দেবাদিদেব। ভক্তভরে শ্রাবণমাসে শিবের মাথায় জল ঢাললে যে কোনও বিপদের হাত থেকে মুক্তি মেলে বলেই বিশ্বাস ভক্তদের।