জনতার সেবা করার জন্যই নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন তাঁরা, এমনটাই দাবি করে থাকেন দেশের নেতামন্ত্রীরা। অথচ তাঁদের অনেকেরই নাকি সম্পত্তির পরিমাণ কোটি টাকারও বেশি। সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছে এক সমীক্ষা। কোটিপতি মন্ত্রীর দৌড়ে সবথেকে এগিয়ে রয়েছে কোন রাজ্য? আসুন শুনে নিই।
তাঁরা সকলেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। অর্থাৎ, তাঁরা জনতারই একজন, সাধারণ মানুষের সুযোগসুবিধা দেখাই তাঁদের কাজ। এমনকি জনতার সেবা করার জন্যই নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন বলেও দাবি করে থাকেন তাঁরা। কিন্তু সম্পত্তির হিসেব নিলে দেখা যাবে, আমজনতার সঙ্গে তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণের কোনও তুলনাই হয় না। তাঁদের বেশিরভাগের সম্পত্তিই নাকি কয়েক কোটি টাকার বেশি। শুনতে অবাক লাগলেও, এমনটাই জানাচ্ছে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা।
আরও শুনুন: টাকাপয়সার লোভ নেই, জানলা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে বাথটবে স্নানের শখ মেটাল চোর
রূপকথার গল্পে শোনা যায়, কাজে খুশি হলে কিংবা রাজার সুরে সুর মেলালেই মন্ত্রীদের কপালে জুটত বহুমূল্য সব উপহার। কারও কাজে খুশি হয়ে অর্ধেক রাজ্যপাট দিয়ে দেওয়ার গল্পও ইতিহাসের পাতায় রয়েছে। কিন্তু সেসবই প্রাচীন কালের কথা। বর্তমান যুগে না আছে সেই রাজা, না আছে তাঁর মন্ত্রী। সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়ে রাজ্যের নির্দিষ্ট কোনও বিভাগের দায়িত্ব পান একজন মন্ত্রী। যে কাজের জন্য সরকারের তরফে নির্দিষ্ট অঙ্কের বেতন বরাদ্দ করা হয়েছে তাঁদের জন্য। অথচ ব্যক্তিগত সম্পত্তির হিসেব নিলে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের অনেকেরই মোট সম্পত্তির পরিমাণ সেই বেতনের অঙ্ককে বহুদূর ছাড়িয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপরেই একটি সমীক্ষা চালিয়ে এই দাবি করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস্’। মূলত দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্যের মন্ত্রিসভাতেই এই সমীক্ষা চালিয়েছিল সংস্থাটি। আর সেই সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক এবং পন্ডিচেরি— এই তিন রাজ্যে যতজন মন্ত্রী আছেন, তাঁরা সবাই নাকি কোটিপতি। সম্প্রতি একটি রিপোর্টে বিস্তারিত ভাবে এইসব মন্ত্রীদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ উল্লেখ করেছে ওই সংস্থা। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, তেলেঙ্গানায় ১৭ জন, কর্ণাটকে ২৭ এবং পন্ডিচেরিতে ৬ জন এমন মন্ত্রী রয়েছেন, যাঁরা সকলেই কোটি কোটি টাকার মালিক। ওই সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, দেশের মোট ১১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মন্ত্রীসভার ১০০ শতাংশ মন্ত্রীই কোটিপতি। এর মধ্যে সবচেয়ে বিত্তশালী মন্ত্রীরা রয়েছেন কর্ণাটকে। তাঁরা প্রত্যেকেই গড়ে প্রায় ৭৩ কোটি টাকার মালিক বলে দাবি করেছে ওই সমীক্ষা।
আরও শুনুন: নাবালিকা বিয়ের ধুম! বাল্যবিবাহ আইন ভেঙে অসমে গ্রেপ্তার ১৮০০ জন
নির্বাচনের আগে কমিশনের কাছে প্রার্থীরা নিজেদের সম্পত্তি সম্পর্কে যে হলফনামা জমা দেন, তার উপর ভিত্তি করেই সমীক্ষা করেছিল ওই সংস্থা। আর সেই অনুযায়ীই দেশের সবচেয়ে ধনী ৫ জন মন্ত্রীর তালিকাও প্রকাশ করেছে তারা। যাঁদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন কর্নাটকের মন্ত্রী এন নাগারাজু। ভারতীয় জনতা পার্টির এই মন্ত্রীর মোট সম্পত্তির মূল্য ১,২২৪ কোটি টাকা। তালিকায় এরপরেই রয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগন মোহন রেড্ডি। তিনি প্রায় ৫১০ কোটি টাকার মালিক। তবে গোটা দেশের নিরিখে বিচার করলেও কোটিপতি মন্ত্রীর সংখ্যা নেহাতই কম নয়। দেশের মোট ২৮টি রাজ্য ও দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জুড়ে কোটিপতি মন্ত্রী রয়েছেন ৫৫৮ জন। মোটামুটি দেখা গিয়েছে, দক্ষিণের ওই রাজ্যগুলি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ধনী মন্ত্রীদের বাস অরুণাচল প্রদেশ, ছত্তিসগঢ়, গোয়া, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, এবং উত্তরাখণ্ডে। জনতার তুলনায় জনপ্রতিনিধিদের সম্পদের মধ্যে যে আকাশপাতাল ব্যবধান রয়েছে, আরও একবার তা প্রকাশ্যে এনে দিল এই সমীক্ষা।