হাতে একটা বড় নোট এলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নেওয়া অনেকেরই অভ্যাস। জাল নোট যাতে পকেটে না চলে যায়, সে জন্য সতর্ক থাকা জরুরি। আর তাই টাকায় কী কী চিহ্ন মুদ্রিত থাকে, কী কী জিনিস দেখে নিতে হয় তা আমাদের অনেকেরই জানা। কিন্তু এই একই জিনিস কয়েনের ক্ষেত্রে খেয়াল করে দেখেছেন কি? অর্থাৎ কয়েনের কোথায় কী চিহ্ন থাকে, তা নিয়ে কি মাথা ঘামিয়েছেন! খেয়াল করে দেখুন তো, কয়েনের যেখানে এক, দুই, বা পাঁচ অর্থাৎ টাকার অঙ্ক লেখা থাকে, তার নিচে খোদাই করা থাকে কয়েকটি বিশেষ চিহ্ন। কিন্তু কেন তা করা হয়?
মন্দিরের প্রণামীবাক্স থেকে লক্ষ্মীর ভাঁড় – সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। পার্সে থাকলে, টাকার অঙ্ক তেমন না বাড়ুক, পার্স বাবাজি দিব্যি ফুলেফেঁপে ওঠে। তা নিয়ে অশান্তিও কম নয়। কেউ কেউ তো তাই তাকে নিতেই চান না। কেউ কেউ আবার অন্যকে জব্দ করতে তাকেই কাজে লাগান। ঠিক ধরেছেন, কয়েনের কথাই বলছি।
আরও শুনুন: কাঁটাচামচ ব্যবহার করলে অভিশাপ দেবেন দেবতারা, কেন ছিল এমন বিশ্বাস?
বড় বড় নোট যদি রাজা, বাদশা গোলাম হয়, তো কয়েন যেন সেখানে নেহাতই সাধারণ, যেন আমজনতা। এখন, আমজনতার মুখের দিকে কে আর কবে ভালো করে তাকিয়ে দেখে? একই রকম ভাবে কয়েনের দিকেও আমাদের নজর কমই যায়। হাতে এলে, আনমনে, মানিব্যাগের ছোট্ট পকেটে চালান করে দেওয়াই আমাদের অভ্যাস। তবে আমজনতার যেমন নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে, এই কয়েনগুলোরও কিন্তু আছে স্বাতন্ত্র্য। আমরা খেয়াল করি বা না করি, ভারত সরকার কিন্তু কয়েনগুলোকে আলাদা করার জন্য ব্যবস্থা করেছে। আপনার হাতের কাছে একটাকা কি দু টাকার কয়েন আছে? যদি থাকে তো বের করে ফেলুন। আর যদি না থাকে পরে বের করে অবশ্যই দেখবেন। একদিকে তো অশোকস্তম্ভ বা বিশেষ কোনও স্মারক থাকে। উলটোপিঠে আছে টাকার অঙ্ক। অর্থাৎ ১, ২ বা ৫ ইত্যাদি লেখা। তার নিচে লেখা থাকে সাল। তারও নিচে থাকে একটি বিশেষ চিহ্ন। খেয়াল করলে দেখবেন, চিহ্নটি কখনও স্টার বা তারার মতো, কখনও আবার তা একটি বিন্দু বা ডট কখনও অন্যরকম। কিন্তু কেন এই চিহ্ন দেওয়া? এই চিহ্ন আসলে কয়েনটির জন্মস্থানকে চিনিয়ে দেয়। অর্থাৎ এর থেকে বোঝা যায়, কোন রাজ্যের মিন্ট থেকে তৈরি হয়েছে ওই কয়েন। ছোট্ট গোল ডট থাকলে ওই কয়েন এসেছে দিল্লির নয়ডা শহর থেকে। তারকা চিহ্ন বোঝায় দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানার অন্তর্ভুক্ত হায়দ্রাবাদ শহরকে। আবার ডায়মন্ড শেপ বা হীরকচিহ্ন খোদাই করা হয় মুম্বই শহরের ট্যাঁকশালে। অবশ্য এই শহরের মুদ্রায় B অথবা M অক্ষর খোদাই করা থাকতেও দেখা যায় কখনও কখনও।
আরও শুনুন: পাহাড়ি ঢালে নিচে না গড়িয়ে উপরে ওঠে গাড়ি! কোথায় ঘটে এই আশ্চর্য ঘটনা?
এই ছোট্ট জিনিসটি আমরা অনেকেই খেয়াল করি না। অতিচেনা কয়েনকেও এভাবে নাহয় একটু নতুন করে চেনা গেল। কী বলছেন? আপনার হাতে যে কয়েন আছে সেখানে কোনও চিহ্নই নেই? ভাবছেন তো, জাল কয়েন হাতে পেয়েছেন কি-না! না, অতটা চিন্তারও কারণ নেই। এই ধরনের চিহ্নহীন কয়েনগুলির জন্ম কলকাতায়। অতএব কী দাঁড়াল! খুচরোকে আমরা বেখেয়ালে যতই খুচরোজ্ঞান করি না কেন, খুচরো কয়েনকে ভালো করে চেনা-জানা কিন্তু মোটেও খুচরো কাজ নয়! যে যত ছোটই হোক না কেন, সবকিছুর দিকেই যে আমাদের সমান মনোযোগে তাকাতে হয়, খুচরোর গায়ের এই ছোট্ট চিহ্ন যেন আমাদের সে কথাই মনে করিয়ে দেয়।