মহিলাদের বেজায় ভয় পান। কাছাকাছি যাওয়া দূর, কোনও মহিলা তাঁকে দেখে ফেলবেন এমনটাই কল্পনা করতে পারেন না। তাই সবার থেকে আলাদা হয়ে দীর্ঘ ৫৫ বছর প্রায় গৃহবন্দি হয়েই কাটিয়েছেন এই ব্যক্তি। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
ভয় কত ধরনেরই না হতে পারে! কেউ জলে ভয় পান, কেউ উচ্চতায়, কেউ বা অন্ধকার ঘোরে একা থাকতে। ভূতে ভয় পাওয়ার কথা নাহয় বাদই দিলাম। কিন্তু মহিলাদের ভয় পেতে শুনেছেন কাউকে? কোনও নির্দিষ্ট একজন নয়, গোটা নারীজাতিকেই ত্রাস মনে করেন আফ্রিকার এক ব্যক্তি। আর সেই ভয়েই, দীর্ঘ ৫৫ বছর প্রায় গৃহবন্দি হয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: পছন্দের পুরুষ কি ‘সিঙ্গল’? গন্ধ শুঁকেই বুঝে নিতে পারেন মহিলারা, বলছে গবেষণা
কথা বলছি, আফ্রিকার ক্যালিক্স জাম্বিতা সম্পর্কে। বছর ৭১-র এই বৃদ্ধ জীবনের অর্ধেকও বেশি সময় কাটিয়েছেন ঘরের ভিতর। শুধু তাই নয়, ঘরের চারপাশে প্রায় ১৫ ফুট উঁচু বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন ক্যালিক্স। আর এমনটা করার একমাত্র কারণ মহিলাদের প্রতি ভয়। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। বাঘ, ভাল্লুক, টিকটিকি, সাপ, কিংবা ভুত নয়, ক্যালিক্স ভয় পান মহিলাদের। তা সে যে কোনও বয়সেরই মহিলা হোক। দূর থেকে তাঁদের দেখতে পেলেই, ভয়ে গুটিয়ে যান ক্যালিক্স। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার বুঝতে পারেন এই ভয়ের ব্যাপারটা। প্রথমদিকে মহিলাদের সংস্পর্শ খানিক অস্বস্তিতে ফেলত তাঁকে। ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন, এ ঠিক অস্বস্তি নয়, পুরোদস্তুর ভয়। তারপর নিজেকে গৃহবন্দী করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন ক্যালিক্স। পরিবারের মহিলাদের সঙ্গেও দূরত্ব বজায় রেখেই চলতেন। কালে ভদ্রে ঘরের বাইরে পা রাখলেও, কোনও মহিলাকে ত্রিসীমানায় দেখলেই দে দৌড়! এভাবেই ৫৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। এদিকে, ঘরে বসে থাকলে খাবার আসবে কোথা থেকে? তাই প্রথমদিকে মাঝে মধ্যে উপোস করে দিন কাটাতেন ক্যালিক্স। পরবর্তীকালে তাঁর সমস্যার কথা বুঝতে পেরে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন গ্রামের মহিলারাই। তাঁরাই নিয়মিত রান্না করে ক্যালিক্সের কাছে পৌঁছে দিতেন। এদিকে খাবার নেওয়ার জন্য দরজা খুলতেও ভয় পেতেন ক্যলিক্স। তাই দরজার বাইরেই খাবার রেখে চলে আসতেন তাঁরা। পরে চারদিক ফাঁকা হলে খাবার নিয়ে ভিতরে যেতেন ক্যালিক্স। যদিও এর জন্য গ্রামের মহিলাদের বিশেশ ধন্যবাদও জানাতেন তিনি। কিন্তু মুশকিল একটাই সামনে আসতেন না।
আরও শুনুন: জন্মের পরেই আলাদা দুই যমজ বোন, ১৯ বছর পর ফের দেখা হল কীভাবে?
আসলে, ক্যালিক্সের এই অবস্থা এক বিশেষ মানসিক রোগ বলা যেতে পারে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম, ‘গাইনোফোবিয়া’। যা থাকলে, এইধরনের অবস্থা হওয়াই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে মহিলাদের দেখলেই অদ্ভুত অস্বস্তি শুরু হতে পারে। জোর করে কাউকে এমনটা করতে বাধ্য করলে, শ্বাসকষ্টও হতে পারে। একইসঙ্গে প্রেসার বেড়ে যাওয়া, বুকে ব্যাথার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই এই ধরনের রোগীদের চিকিৎসার পরামর্শ দে বিশেষজ্ঞরা। যদিও ক্যালিক্স তেমন কোনও চিকিৎসা পেয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য মেলে না। তবে তাঁর এই রোগ যে বিরলতম তা বলাই বাহুল্য।