শুঁড় নেই। কুলোর মতো কানও নেই। এমনকি তাঁর চেহারাও স্থূল নয়। একেবারে সাধারণ মানুষের মতো দেখতে। কিন্তু তাঁকেই সবাই গণেশ রূপে পুজো করেন। ভাবছেন তো, হাল ফ্যাশানের কোনও থিম পুজোয় এমন মূর্তি বানানো হয়েছে? একেবারেই নয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশের এক মন্দিরে পূজিত হয়ে আসছেন গণেশের এই বিশেষ রূপ। কোথায় রয়েছে সেই মন্দির? আসুন শুনে নিই।
তথাকথিত সৌন্দর্যের ব্যতিক্রম তিনি। খর্বাকৃতি, স্থূলকায় এক দেবতা যার মস্তক হাতির মতো। চেহারায় রয়েছে আরও বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট। হাতির মতো মাথার সঙ্গে রয়েছে দুই দাঁতও। তার মধ্যে একটা আবার ভাঙা। সেই নিয়ে একাধিক কাহিনীও প্রচলিত রয়েছে। তবে ধ্যানমন্ত্রে গণেশের দেহাকৃতির যে বর্ণনা মেলে তা এমনই। সুতরাং এর বাইরে গণেশ মূর্তি তৈরি করা একপ্রকার শাস্ত্রবিরুদ্ধ। কিন্তু দেশে রয়েছে এমন এক গণেশ মন্দির যেখানে আরাধ্যের চেহারা প্রচলিত গণেশ মূর্তির মতো নয়।
আরও শুনুন: ঈশ্বরের ম্যাজিক! কোমা থেকে ফিরেই পায়ে হেঁটে অমরনাথ পৌঁছলেন ভক্ত
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। তামিলনাড়ুর এক মন্দিরে দেখা মেলে অদ্ভুত এক গণেশ মূর্তি। বলে না দিলে, ওই মূর্তি যে গনেশের তা বোঝার উপায় নেই। বলে দিলেও হয়তো অনেকে বিশ্বাস করতে চাইবেন না। কিংবা কেউ কেউ একেবারে শাস্ত্রবিরোধী তকমাও দিতে পারেন। কিন্তু তামিলনাড়ুর এই মন্দিরে রীতিমতো শাস্ত্র মেনেই পূজিত হন ‘আদি বিনায়ক’। আসলে গণেশ যখন তৈরি হয়েছিলেন তখন তাঁর রূপ সাধারণ মানুষের মতোই ছিল। থুড়ি অন্যান্য দেবতাদের মতোই ছিল। নাক কান চোখ মুখ একেবারেই সাধারণ। পরে তার মুন্ডচ্ছেদ হলে হাতির মস্তক দিয়ে পুনরায় প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই থেকেই গনেশের চিরাচরিত মূর্তি হিসবে এই রূপকেই চিনে এসেছে সকলে। কিন্তু তামিলনাড়ুর থিলাথারাপানাপুরি অঞ্চলে মুক্তেশ্বর মন্দিরে নিত্য পূজিত হন বিনায়কের সেই আদি মূর্তিই। এখানে গণেশের রূপ একেবারে মানুষের মতোই।
আরও শুনুন: জগন্নাথকে ছেড়ে যাওয়া বারণ, সোনার শিকলে বাঁধা পুরীর এই মন্দিরের হনুমান বিগ্রহ
তবে এই মন্দিরের সঙ্গে বেশ কিছু জনশ্রুতি জড়িয়ে রয়েছে। স্থানীয় বিশ্বাস, এই মন্দিরে পুজো দিলে পিতৃপুরুষের আত্মা মুক্তি পায়। স্বয়ং রামচন্দ্র পিতা দশরথের মৃত্যুর পর এখানে পুজো দিয়েই পিন্ডদান সেরেছিলেন। তার আগে কিছুতেই পিন্ডদান সম্পন্ন করতে পারছিলেন না রঘুপতি। সেই থেকেই বিনায়ক মন্দির সম্পর্কে এই ধারণা জন্ম নিয়েছে। মন্দিরের বিগ্রহটিও বেশ প্রাচীন। লম্বায় প্রায় ৫ফুট। কালো পাথরের তৈরি মূর্তি। বিগ্রহের হাতও দুটি। চোখ বন্ধ, খানিকটা যোগী রূপ প্রকাশ পায় এই বিগ্রহে। তবে পুজোর উপকরণ বা আয়জন সাধারণ গণেশ পুজোর মতোই। এছাড়া দক্ষিণের বেশিরভাগ মন্দিরেই একাধিক বিগ্রহ চোখে পড়ে। আদি বিনায়ক মন্দিরও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানেও রয়েছে বেশ কিছু শিবলিঙ্গ। এছাড়া আদি শংকরাচার্য, দেবী গায়ত্রী সহ একাধিক দেবদেবীর মূর্তি এই মন্দিরে চোখে পড়ে। স্রেফ অদ্ভুত দর্শণ গণেশের জন্য নয়, মন্দিরের বাকি দেবতাদের পুজো দিতেও প্রতিদিনে বহু ভক্তের ভিড় জমে এই মন্দিরে। মূর্তির নীচে দেখা মেলে বাহন মূষিকেরও। তবে গণেশের এই বিশেষ রূপ যে গোটা দেশে স্রেফ এই একটা মন্দিরেই দেখা যায় তা বলাই বাহুল্য।