সাপ ধরা তাঁর বাঁ হাতের খেল। আর শুধু সাপ কেন, ভাল্লুক থেকে লেপার্ড, কোনও জানোয়ারকে ধরতেই পিছপা হননি তিনি। যেসব প্রাণী দেখলে অধিকাংশ মানুষই ভয়ে চম্পট দেন, তাদের সামনে অকুতোভয় এই মহিলা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তাঁর কথা।
তাঁর নামও আলিয়া। তবে পদবি ভাট কিংবা কাপুর নয়। তাতে কী, নায়িকার চেয়ে কোনও অংশে কম নন তিনি। না, সৌন্দর্যের বিচার করতে যাচ্ছি না। কিন্তু নায়কসুলভ গুণ বলতে যদি শৌর্য বীর্য সাহস বোঝায়, তবে সেইসব গুণই ষোলো আনা রয়েছে এই মহিলার মধ্যে। আর সেই কারণেই ভয়ংকর বন্যপ্রাণীদের সামনেও তিনি নির্ভয়ে এগিয়ে যান। দুহাতে তুলে আনেন বিপন্ন বন্য পশুদের। তারপর তাদের ফিরিয়ে দেন সুস্থ জীবন। কাশ্মীরের বন্যপ্রাণী উদ্ধারকারীদের মধ্যে প্রথম মহিলা তিনিই। নিজের কাজের জোরেই সকলের কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছেন আলিয়া মির।
আরও শুনুন: ছকভাঙা পথেই সাফল্য, বাইকে চড়ে ‘স্বাস্থ্যকর’ ফুচকা বিক্রি বি.টেক পাশ তরুণীর
কাশ্মীর বললে সকলের মনেই ভেসে ওঠে এক সুন্দর উপত্যকার ছবি। কিন্তু সিনেমার পর্দায় কিংবা বেড়াতে গিয়ে যা দেখা যায়, তার বাইরেও থেকে যায় আরও অনেক কিছু। কেবল সন্ত্রাসী হানাই নয়, বন্য জন্তুদের উপদ্রবেও তটস্থ হয়ে থাকেন কাশ্মীরের অনেক অঞ্চলের বাসিন্দারা। সেই কারণেই কাশ্মীরে কাজ করে ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দলছুট হয়ে জনপদে এসে পড়া কোনও পশু কিংবা কোনও বিপন্ন প্রাণীকে উদ্ধার করাই তাদের কাজ। আর এই সংস্থার প্রোগ্রাম হেড এবং শিক্ষা আধিকারিক হয়েই কাজ করেন আলিয়া।
বিজ্ঞান এবং অঙ্কে যুগ্ম স্নাতকোত্তর আলিয়া ছাত্রাবস্থা থেকেই এই সংস্থায় যুক্ত। তাঁর স্বামী পেশায় পশুচিকিৎসক, মূলত তাঁর উৎসাহেই আলিয়ার চোখের সামনে এই নতুন জগৎ খুলে গিয়েছিল। আর তারপর, ২০০৬ সালে জনবসতিতে ঢুকে পড়ার জেরে একটি ভাল্লুকের মৃত্যুর ঘটনা আলিয়াকে আরও বদলে দেয়। মানুষ ও বন্যপশুর এহেন সংঘাত, একে অন্যের বাসস্থানে ঢুকে পড়া, এই সবকিছু নিয়েই সমীক্ষা চালাতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি, আহত ও বিপন্ন পশুদের পুনর্বাসন দেওয়ার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়। এই প্রকল্পে এশিয়াটিক ভাল্লুক, হিমালয়ান ভাল্লুক, লেপার্ড, নানারকমের পাখি এবং পশুকে উদ্ধার করেছেন আলিয়া। তবে সাপ নিয়ে কাজ করার জন্যই তিনি খ্যাতি পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি। বসতির মধ্যে, বাড়িঘরে সবচেয়ে বেশি ঢুকে পড়ে এই প্রাণীটিই। কিন্তু অভাবনীয় সব জায়গা থেকেও সাপ খুঁজে তাদের ধরে ফেলেছেন দুঃসাহসী আলিয়া। এমনকি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকেও ভয়ানক বিষাক্ত লেভ্যান্টাইন ভাইপার ধরে তাকে জঙ্গলে পুনর্বাসন দিয়েছেন আলিয়া।
আরও শুনুন: আর এক মালালা! তালিবান হানায় ভাঙা দেওয়ালে ছবি আঁকেন কাবুলের অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণী
এই কাজ যে সহজ ছিল না, সে কথা নিজেই স্বীকার করেছেন আলিয়া। বন্য পশু বা সাপের প্রতি ভয় তো ছিলই। তা ছাড়া ছকভাঙা কাজে এগিয়ে যেতেও তো সাহসের দরকার হয়। কিন্তু সব বাধা কাটিয়ে বন্য প্রাণীদের উদ্ধার করাকেই নিজের জীবনের ব্রত করে নিয়েছেন আলিয়া মির।