দিনের অনেকটা সময়ই আমাদের কেটে যায় কর্মক্ষেত্রে। সহকর্মীরাই হয়ে ওঠেন আত্মীয়স্বজনের মতো। দেখতে গেলে গোটা জীবনেরই একটা বড় সময় জুড়ে থাকে এই কাজের জায়গা। ইদানীং যে ভাবে ঘন ঘন চাকরি বদলের চল, তাতে খুব বেশি হলে ১০-১৫ বছর একই অফিসে কাটাই আমরা। তবে এই ব্যক্তি একই অফিসে কাজ করেছেন টানা ৮৪ বছর! ভাবতে পারেন? আসুন, শুনে নিই তাঁর কথা।
আর কিচ্ছু নয়! শুধু নিয়মিত অফিস যাওয়া-আসা, আর সেখানকার কাজ। শুধু এটুকু করলেই যে নাম উঠতে পারে গিনেস বুকে, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন এই ব্যক্তি।
তবে ব্যাপারটাকে এতটা সহজ ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। রোজই তো অফিসে যাই-আসি আমরা। কাজও করি মন দিয়ে। কই গিনেস বুকে নাম তো ওঠে না কারওর! কিন্তু এই ব্যক্তি করে ফেলেছেন সেই কাজটাই।
আসুন, গোড়া থেকে খুলেই বলি তবে ব্যাপারখানা। এই ব্যক্তি জীবনের ৮৪ টি শীতবসন্ত কাটিয়ে ফেলেছেন একই অফিসে। পাঁচ-দশ বছর এক অফিসে কাজ করতেই যেখানে কালঘাম ছোটে আমাদের, সেখানে একটানা একই কাজ একই জায়গায় ৮৪ বছর ধরে করে গিয়েছেন এই ব্যক্তি। আর তার জন্যই তাঁর নাম উঠেছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে।
আরও শুনুন: অবিশ্বাস্য! বরফের চাদরের তলায় সাঁতার কেটে নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙলেন এই কন্যা
ব্রাজিলের বাসিন্দা ওয়াল্টার ওর্থম্যান। সান্টা ক্যাটারিনার একটি টেক্সটাইল সংস্থায় শিপিং অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৫। সেটা সম্ভবত ১৯৩৮ সাল। তারপর থেকে একই জায়গায় কাজ করে গিয়েছেন এতগুলো বছর। সব মিলিয়ে তাঁর কর্মজীবনের মেয়াদ ৮৪ বছর ৯ দিন।
মেধাবী ওয়াল্টারের জন্ম সান্টা ক্যাটারিনার একটি ছোট্ট শহরে। আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। কোনও মতে খালি পায়ে স্কুলে যেতে হত তাঁকে। বাকি পড়াশোনা করতে হয়েছে বাড়িতেই। পরিবারের হাল ধরতে কম বয়সেই চাকরিতে ঢুকতে বাধ্য হন। তবে চাকরিক্ষেত্রেও একের পর এক পদোন্নতির শিকে ছিড়েছে ওয়াল্টারের ভাগ্যে। কাজের জন্য প্রায়শই সাও পাওলো যেতে হত তাঁকে। এসব করতে করতে কী করে যে একটি সংস্থাতেই তাঁর জীবনের ৮৪টা বছর কেটে গেল তা বুঝতেও পারেননি ওয়াল্টার। আসলে কাজটা তাঁর এতটাই ভাল লেগে গিয়েছিল, কোনওদিনও কোনও সমস্যাই মালুম হয়নি তাঁর। জীবনে তাঁর প্রিয় জায়গা বলতে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে ওই অফিসই।
আরও শুনুন: অবিশ্বাস্য! মাত্র ১৩ বছরেই স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে তাক লাগাল বালক
গত ১৯ তারিখ একশো বছরে পা দিয়েছেন ওয়াল্টার। পরিবার-পরিজনদের পাশাপাশি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন আট দশকের সহকর্মীরাও। এখনও নিয়মিত শরীরচর্চা করতে পছন্দ করেন ওয়াল্টার। শরীর, মন দুটোই তাতে তরতাজা থাকে বলেই বিশ্বাস তাঁর।
আগামী প্রজন্মের জন্য়ও ওয়াল্টারের একটাই পরামর্শ, কাজের জায়গা এবং সহকর্মীরা যদি মনের মতো হয়, তাহলে জীবনে অফিসের থেকে ভাল জায়গা আর হতেই পারে না। কোনও দিনই জীবনে খুব বেশি পরিকল্পনা করে চলতে পছন্দ করেন না ওয়াল্টার। চলেনওনি। কী ভাবে যে এতগুলো বছর কেটে গেল তা ভেবে ভেবে মাঝে মাঝে অবাকই হন শতায়ু এই বৃদ্ধ। শুধুমাত্র অফিস করেই যে গিনেস বুকে নাম উঠতে পারে, সেটা ছিল ভাবনার বাইরের বিষয়। তবে এত বছর ধরে কাজের যে স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন, তাতে যারপরনাই খুশি এই ব্যক্তি।