কত রকমের জিনিসেই তো ফোবিয়া বা ভয় থাকে মানুষের। কেউ ভয় পান উচ্চতায়, তো কেউ ভয় পান বিমানে চাপতে। কেউ আবার ভয় পান জন্তুজানোয়ারে কেউ বা আবার অন্ধকারে থাকতে। তবে এই মহিলার ফোবিয়ার কথা শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। বিশেষ ধরনের খাবার খেতে ভয় পান তিনি। এতটাই ভয়, যে তার জন্য তুচ্ছ করে দিতে পারেন বিশাল অর্থের হাতছানিও। কী খেতে ভয় পান তরুণী? শুনে নিন।
এ যেন ধনুক ভাঙা পণ। কোনও কিছুর মূল্যেই তিনি তা ভাঙতে নারাজ। এমন কি তার সামনে তুচ্ছ লক্ষ টাকার হাতছানিও। হ্যাঁ। বিশেষ একটি খাবার খেতে আপত্তি আছে তাঁর। শুধু আপত্তি নয়, সেসব খাবারদাবার হাতের কাছে দেখলেও রীতিমতো ভয় পেয়ে যান ২৫ বছরের ওই তরুণী। টানা ২২ বছর সেই খাবার মুখে পর্যন্ত তোলেননি।
ভাবছেন তো, কী এমন খাবার, যা দেখলেই ভয় পেয়ে যান তরুণী?
না, সে খাবার তেমন ভয়ঙ্কর কিছু একেবারেই নয়। তা না পেলেই বরং চলবে না আমাদের। বাকি থেকে যাবে পুষ্টির অনেকটাই। অথচ সেই ভীষণ জরুরি খাদ্যবস্তুটাকেই খাবারের মেনু থেকে শতহস্ত দূরে রেখেছেন তিনি। ফলমূল থেকে সবজিপাতি, কোনও কিছুরই ধার মাড়ান না তিনি। হাজার চেষ্টা করেও একটা কড়াইশুটির দানা পর্যন্ত তুলে দেওয়া যায়নি তাঁর মুখে। জীবনের একটা বড় সময়ই তিনি কাটিয়েছেন চিকেন নাগেটস, চিপস ইত্যাদির ভরসায়। সেসব খেয়েই বেঁচে রয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: বেলুন বিক্রি করত ছোট্ট মেয়ে, রাতারাতি জনপ্রিয় মডেল… নেটদুনিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছেন কিসবু
শখ করে নয়। আসলে তিনি নাকি একধরনের ফোবিয়া বা অসুখের শিকার। চিকিৎসকের ভাষায় একে নাকি বলা হয় অ্যাভয়ডেন্ট রেস্ট্রিক্টিভ ফুড ইনটেক ডিসঅর্ডার। সবজি বা ফলমূল দেখলে পর্যন্ত ভয়ে দুচোখে আঙুল দেন ব্রিটেনের বাসিন্দা সুমের মনরো। জানা গিয়েছে, তিন বছর বয়স পর্যন্ত তাঁকে জোর করে আলুসেদ্ধ জাতীয় খাবারদাবার খাওয়ানো হত। সেই থেকেই তাঁর ফলমূল-শাকসবজিতে ভয় শুরু। সম্প্রতি তাঁকে এক ব্যক্তি একটি কড়াইশুটির দানা খাওয়ার পরিবর্তে এক হাজার ইউরো দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে ভয়ের কাছে হার মেনেছে অর্থ। কড়াইশুটির একটি দানাও মুখে তুলতে রাজি হননি তিনি।
শেষ কবে সুমের ফলমূল বা শাকসবজি খেয়েছিলেন তা আজ আর মনেও পড়ে না তাঁর। বাড়ির সকলে অনেক চেষ্টা করেছেন সুমেরকে ফলমূল খাওয়াতে। কিন্তু হার মেনেছেন সকলেই। একবার সুমের নিজেও আপেল খাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারেননি শেষপর্যন্ত। অসুস্থ হয়ে পড়েন সে সময়।
আরও শুনুন: পাত্রী চাই… লন্ডনের স্টেশনে বিলবোর্ড ভাড়া করে ২ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন যুবকের
আমিষপ্রিয়রা নিশ্চয়ই ভাবছেন , তাহলে তো এই তরুণীর দারুণ মজা। ফলমূল-শাকসবজি এসব স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার মুখে তুলতেই হয় না। সুমের কিন্তু বলছেন অন্য কথা। তিনি নাকি রোজের এই একঘেয়ে চিকেন আর চিপস ডায়েট খেতে খেতে ভীষণ বিরক্ত। তাই ইদানীং নাকি আর ব্রেকফাস্টও করেন না। লাঞ্চে চিপস আর ডিনারে চিকেন নাগেটস খেয়ে থাকেন। শুধু কি তাই, খুব মুচমুচে খাবারদাবার না হলে খেতে পারেন না তিনি। সেই ছোট্টবেলাকার আলুসেদ্ধর কথা মনে পড়ে যায় সুমেরের। ফলে রোজ রোজ মাছমাংস খেয়েও একেবারেই সুখী নন ব্রিটেনের এই তরুণী। আসলে জীবনে হোক বা খাবারের থালায়, বৈচিত্র্যই রোজ রোজ আনন্দ খুঁজে এনে দেয় আমাদের। আর সেই বৈচিত্র্য থেকেই যে এক্কেবারে বঞ্চিত এই কন্যা।