ছোটবেলায় রোলকলের সময় প্রক্সি দেওয়ার কথা আপনাদের মনে আছে? পাশের সিটে প্রিয় বন্ধু নেই। তবু স্যার তার নাম ডাকলে টুক করে কণ্ঠস্বর বদলে প্রক্সি দেওয়ার অভ্যাস অনেকেরই ছিল। স্কুলজীবনে সেসবের আলাদা আনন্দ থাকলেও, বাস্তবে এমন কাজ করলে কিন্তু বেজায় সমস্যা। সম্প্রতি ঠিক সেরকমই এক কাণ্ড ঘটিয়েছেন জনৈক মহিলা। কোথায় কাদের হয়ে প্রক্সি দিয়েছেন তিনি? আর তার পরিণতি-ই বা কী হল? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
নিয়মকানুন যতই কড়া হোক না কেন, কেউ কেউ ঠিক তার ভিতর ফাঁক খুঁজে বের করেন। আর সেই ফাঁক গলেই এমন কিছু কাজ মানুষ করে ফেলে, যা প্রকাশ্যে এলে চমকে উঠতে হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়মের ফাঁক খুঁজেছেন বহু মানুষ। আর তাঁদের সহায় হয়েছেন বছর ২৯-এর ইন্দরজিত কৌর। অন্যের হয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষায় বসা-ই ছিল এই যুবতীর কাজ। আর এর জন্য মোটা অঙ্কের অর্থও দাবি করতেন তিনি।
আরও শুনুন: নিয়মের আজব গেরো! কোচের থেকে অন্তর্বাস ধার করে কোর্টে নামলেন টেনিস তারকা
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই মহিলার নিবাস মার্কিন মুলুকের ওয়েলসে। যদিও প্রতারণার দায়ে তাঁর বর্তমান ঠিকানা হয়েছে শ্রীঘরেই। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জনের হয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। বারমিংহাম, কারমারথেন-সহ লন্ডনের বিভিন্ন প্রদেশের পরীক্ষার্থীর হয়ে প্রক্সি দিয়েছেন এই মহিলা। প্রতি ক্ষেত্রে এর জন্য প্রায় ৮০০ পাউন্ড করে রোজগার করেছেন তিনি। ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য প্রায় ৭৬ হাজার টাকা। ঠিকই ধরেছেন ভারতে থাকলে এতদিনে অবশ্যই কোটিপতি হতেন যুবতী।
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন আবদার নিয়ে কারা এসেছিল তাঁর কাছে? আসলে বিদেশে থাকলেও অনেকেরই ইংরাজি বলার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষায় ঝরঝরে ইংরাজি বলতে পারা একেবারে বাধ্যতামূলক। চাইলেও কোনও দোভাষির সাহায্য নিতে পারেন না পরীক্ষার্থীরা। অগত্যা ইন্দরজিতের কাছেই আসতে হয় তাঁদের। টাকা যতই লাগুক, তাঁর উপর পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েই নিশ্চিন্তে থাকতেন তাঁরা।
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসায় পরীক্ষাকেন্দ্রে থাকা বিভিন্ন স্টাফদের সাসপেন্ড করেছে তদন্তকারী সংস্থা। সংস্থার দাবি, বিভিন্ন পরীক্ষার্থী তাঁদের নিজেদের শহর থেকে বেশ দূরে পরীক্ষা দেওয়ার আবেদন করেছে দেখেই তাঁদের সন্দেহ হয়। এরপরেই উঠে আসে ইন্দরজিতের নাম। তদন্তে দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরেই এই যুবতী বিভিন্ন ভুয়ো পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও পরীক্ষার সময় তাঁর আচরণও ছিল যথেষ্ট সন্দেহজনক। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই বহুজন এই ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন। এই ধরনের প্রতারণা চক্র যে পথ-নিরাপত্তার বিস্তর ক্ষতি করছে, তা বলাই যায়। ইন্দরজিত তাঁর কাজের জন্য শাস্তি ভোগ করছেন। কিন্তু তাঁর দৌলতে যাঁরা ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন, তাঁদের শেষ পর্যন্ত কী হিল্লে হল, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি।