কেউ তাঁকে বলেন গজানন, কেউ বা বলেন একদন্ত। গোটা দেশ জুড়েই এই রূপেই পুজিত হন সিদ্ধিদাতা গণেশ। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়। ভারতবর্ষের এই মন্দিরে মস্তকহীন গণপতিকেই পুজোর চল। সারা দেশে গণেশের যে মূর্তি প্রচলিত রয়েছে তার থেকে যেন বেশ খানিকটা আলাদা এই মূর্তি। কোথায় রয়েছে এমন মন্দির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ক্রোধের বশে তাঁর মুণ্ডচ্ছেদ করেছিলেন দেবাদিদেব মহেশ্বর স্বয়ং। অগত্যা মুণ্ডহীন দেহে একটি হাতির মাথা জুড়ে জীবিত করা হল গৌরীপুত্র গণেশকে। সেই থেকেই গণেশের মুখ হাতির মতো। সাধারণত গণেশের এই রূপই সকলের কাছে পরিচিত। অনেক জায়গায় তো গণেশের প্রতীকী হিসেবে শুধুমাত্র হাতির মাথাটুকুকেও পুজো করা হয়। তবে এ দেশেই রয়েছে এমন এক মন্দির, যেখানে মুণ্ডহীন মূর্তিকেই পুজো করা হয় গণপতিরূপে।
আরও শুনুন: শিবভক্তির সামনে থমকে গিয়েছিলেন যমও, ঋষি মার্কণ্ডেয়র কাহিনি দেয় অমরত্বের সন্ধান
স্থানীয়রা বলেন মুণ্ডকাটিয়া গণেশ মন্দির। উত্তরাখণ্ডের সোনপ্রয়াগ থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কেদার যাওয়ার পথে পড়ে এই মন্দির। এই জায়গাটাও দেবভূমি নামেই খ্যাত বাসিন্দাদের মধ্যে। মন্দিরের তলা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মন্দাকিনী নদী। কেদার উপত্যকার উপর চারদিকে জঙ্গলে ঘেরা এই মন্দির যেন অপূর্ব সুন্দর। নিশ্চয়ই ভাবছেন, কেন এখানে এমন মস্তকহীন রূপে পুজিত হন গণেশ? আর তার নেপথ্যে রয়েছে একটি গল্প।
শিবপুরাণে দেবাদিদেব মহাদেবের বিভিন্ন লীলাকথার বর্ণনা রয়েছে। তারই মধ্যে অন্যতম গণেশের মুণ্ডচ্ছেদের কাহিনি। কথিত আছে, স্নানের সময় নিজের দেহ নিঃসৃত হলুদ থেকে একটি পুতুল গড়েন দেবী পার্বতী। আর সেই পুতুলেই প্রান সঞ্চার করে তাঁকে পুত্ররূপে বরণ করে নেন দেবী। গণেশের জন্মমুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন না শিব। তাই গণেশের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। একদিন দ্বাররক্ষক হিসেবে গণেশকে নিযুক্ত করে স্নান সারতে যান দেবী। ঠিক সে সময় গুহামুখে এসে হাজির হন দেবাদিদেব। অপরিচিত বালককে তিনি গুহামুখ থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তবে মাতৃআজ্ঞা পালনে অনড় গণেশ। এতটুকু বিচলিত না হয়ে অপরিচিত শিবের পথ আগলে দাঁড়ান তিনি। গৌরীপুত্র গণেশ তখন নিতান্তই বালক। মহাদেবের রোষের সামনে তার কী-ই বা ক্ষমতা। ব্যাস, পরিণাম হল ভয়ঙ্কর। রেগেমেগে নিজের ত্রিশুল দিয়ে ওই বালকের মস্তকটি ছিন্ন করলেন মহাদেব।
আরও শুনুন: নাগপঞ্চমী পালনে তৃপ্ত হন মহেশ্বরও, পুরাণমতে কীভাবে শুরু হল এই উৎসব?
এদিকে স্নান সেরে ফিরে মৃত গণেশকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পার্বতী। শিবের রাগ ততক্ষণে অনেকটাই পড়ে গিয়েছে। মাতৃআজ্ঞা পালন করতে গিয়েই প্রাণ দিয়েছেন বালক গণেশ, তা জেনে খুবই মর্মাহত হলেন দেবাদিদেব। তৎক্ষনাত বালকের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে চেয়েও পারলেন না তিনি। ত্রিশূল দিয়ে কাটা মস্তক যে জোড়া লাগে না আর। সব দিক থেকে খতিয়ে দেখে একটি উপায় বের করলেন মহাদেব। অনুচর নন্দীকে তিনি আদেশ দিলেন, উত্তরদিকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে রয়েছে, এমন একটি মস্তক কেটে আনার। অনেক খুঁজে শেষমেশ একটি হস্তীশাবকের মস্তক সংগ্রহ করে আনলেন শিবের বৃষ নন্দী। অগত্যা সেই মস্তকই গণেশের দেহে স্থাপন করে তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করলেন শিব। উত্তরাখণ্ডের এই জায়গাটিতেই নাকি পুনরায় প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন বিনায়ক। তাই সেই মুন্ডহীন গণেশকেই প্রস্তররূপে পুজো করা হয় এই মন্দিরটিতে।
কেদারনাথ দর্শনে যাওয়ার পথে আগে এই মন্দিরে নিয়ম করে পুজো দিতেন ভক্তেরা। তবে বর্তমানে কেদার যাওয়ার পথে বেশ কিছু বদল আনা হয়েছে। যার ফলে এই মন্দিরে ইদানীং কমেছে ভক্তদের ভিড়। তবে স্থানীয়দের কাছে আজও মহাজাগ্রত এই মুন্ডকাটিয়া মন্দির।