জন্মদিন হোক বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান। প্রিয় মানুষকে সুন্দর করে গুছিয়ে উপহার দিতে কার না ভাল লাগে বলুন। আর এই উপহার দিতে যে জিনিসটার তুলনা মেলা ভার, তা হল গিফট ব়্যাপ বা রংচঙে ওই মোড়ক। ভিতরে জিনিস যাই থাকুক না কেন, ওই রঙচঙে কাগজই কিন্তু উপহারের মাহাত্ম্য বাড়িয়ে দেয়। তবে প্লাস্টিক বা ওই ধরণের ব়্যাপিং পেপার কিন্তু বাড়ায় পরিবেশ দূষণও। আর এবার সেই সমস্যারই সমাধান করে ফেলেছেন বছর একুশের এক ছাত্রী। নিজের রান্নাঘরেই বানিয়ে ফেলেছেন তিনি এমন একটি উপাদান, যা কেবল উপহারের ব়্যাপার নয়, ভবিষ্যতে হয়ে উঠতে পারে প্লাস্টিকের বিকল্পও। কী সেই জিনিস? শুনে নিন।
উপহার মানেই তো তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে শুভেচ্ছাবার্তা। তা সেই শুভেচ্ছাবার্তার সঙ্গে সঙ্গে যদি পরিবেশকে ভাল রাখার ছোট্ট চেষ্টাটুকুও জুড়ে দেওয়া যায়, বেশ ভাল হত না বলুন! আর সেই চেষ্টাটাই করেছেন দিল্লির এক পড়ুয়া।
প্লাস্টিক বলুন বা গিফট ব়্যাপ হিসেবে ব্যবহৃত বিশেষ কাগজ, সবই কোনও না কোনও ভাবে পরিবেশ দূষণে ইন্ধন জোগায়। এদিকে, পৃথিবীতে প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব নিয়ে রোজই নতুন নতুন করে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদেরা। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে ঠিক কথা, তাই বলে কি সুন্দর করে মোড়া উপহার থাকবে না। নিশ্চয়ই থাকবে। আর সেই ব্যবস্থাই করেছেন নম্যা পারেখ নামে ওই ছাত্রী। তিনি আবিষ্কার করে ফেলেছেন এমন এক ধরণের জৈব ব়্যাপিং পেপার, যা শুধু উপহারে নয়, পরবর্তীকালে আমূল বদল এনে দিতে পারে গোটা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতেই।
জামাকাপড় ও টেক্সটাইলস ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রতিবছর কম করে হলেও ১২০ কোটি টন গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন হয়। যা মারাত্মক ক্ষতি করে আমাদের পরিবেশের। দূষণ কমাতে নম্যা পারেখ নামে ওই কলেজ ছাত্রী নিজের রান্নাঘরেই বানিয়ে ফেলেছেন এমন এক ব়্যাপিং পেপার, যার উপাদান শুনলে চমকে উঠবেন আপনারাও।
আরও শুনুন: পৃথিবীর খাদ্যসংকটের সমাধান করতে পারে ‘নকল কলা’, দাবি বিজ্ঞানীদের
দিল্লির একটি ফ্যাশন ডিজাইনিং কলেজের তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন নম্যা। বহু দিন ধরেই চামড়ার বিকল্প হিসেবে টেকসই অথচ জৈব কোনও উপাদানের খোঁজ চালাচ্ছিলেন তিনি। লকডাউনের সময় থেকেই মাথায় ঘুরছিল চিন্তাখানা। আর সেই উপাদানটি বানাতে কী ভাবে রান্নাঘরের ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র ব্যবহার করা যায়, ভেবেছিলেন সেই ব্যাপারটিও। প্রথমেই মাথায় এসেছিল ডিমের খোলা, সবজি কিংবা কলার খোসার মতো উপাদানের কথা। আলু বা কর্নস্টার্চের সঙ্গে সে সব মিশিয়ে বহু দিন ধরেই পরীক্ষানিরিক্ষা চালাচ্ছিলেন নম্যা। তবে ঠিক যেন জমছিল না ব্যাপারখানা। হয় মিশ্রণটা খুব ঘন হয়ে যাচ্ছিল, না হলে ঠিক মতো মজবুত হচ্ছিল না। শেষমেশ পাতিলেবু ও কমলালেবুর খোসা ব্যবহার করলেন নম্যা এই কাজে। তার সঙ্গে বাইন্ডিং এজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করলেন জৈব জিলেটিন আগর আগর। তিন সপ্তাহের পরিশ্রমের শেষে অবশেষে এল সাফল্য। তৈরি হল টেকসই এক ধরনের জৈব চামড়ার মতো উপাদান, যা জিনিসপত্র প্যাকিং থেকে ব়্যাপিং, ব্যবহার করা যেতে পারে একাধিক কাজে। এমনকি যা হয়ে উঠতে পারে প্লাস্টিকের বিকল্পও। শুধু তাই নয়, এটি লেদার বা চামড়ার বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। উপাদানটি জলে দ্রাব্য হওয়ার পাশাপাশি সম্পূর্ণ রূপে জৈব হওয়ায় এর থেকে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা একেবারেই নেই।
আরও শুনুন: পাখির ভাষায় কথা বলেন এই মানুষেরা, কোথায় শোনা যায় এমন ভাষা?
ইতিমধ্যেই ওই উপাদান দিয়ে দুল, হার, বেল্টের মতো ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজও বানিয়ে ফেলেছেন নম্যা। তাঁর নিজের অ্যাকাডেমির অন্যান্য পড়ুয়াদের সঙ্গে মিলে সেই উপাদানকে আরও কী কী ভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়েই এখন কাজ করছেন এখন নম্যা। যে ভাবে ফ্যাশনের সঙ্গে পরিবেশকে ভাল রাখার ভাবনাকে মিলিয়ে দিয়েছেন নম্যা, তা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য।