সাম্প্রতিক ভোট আবহে নাগরিকত্ব ইস্যুতে টালমাটাল মতুয়া ধর্ম সম্প্রদায়। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও নাগরিকত্বের দাবিতে সরব হয়েছিলেন এক সন্ন্যাসিনী। একইসঙ্গে দুই দেশের নাগরিকত্ব দাবি করেছিলেন তিনি। কী ঘটেছিল ঠিক? শুনে নেওয়া যাক।
সংসদীয় রাজনীতির সঙ্গে সাধু সন্ন্যাসীদের জড়ানো যাবে না, এ কথা এই মুহূর্তে আর হলফ করে বলা যাচ্ছে না। ভোটের আবহে সাধু-সন্তদের নিয়ে কোনও কোনও ঘটনার জেরে চাপানউতোরে জড়িয়েছেন খোদ মোদি-মমতাও। সাম্প্রতিক কালে রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, ইস্কনের রাজনীতি যোগের কথা নিয়ে বিতর্ক চলছে। তারও বহুদিন আগে থেকেই রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে মতুয়াদের নিয়ে। নাগরিকত্ব ইস্যুতে এই বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ের ভোট টানতে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি ও তৃণমূল দুই দলই। তবে আদৌ নাগরিকত্ব মিলবে কি না তাঁদের, কে জানে! এই প্রসঙ্গেই ফিরে আসছে এমনই এক ঘটনার কথা, যেখানে নাগরিকত্বের দাবিতে সরকারকে কার্যত বিপাকে ফেলেছিলেন এক সন্ন্যাসিনীই। ভারত সরকারের কাছে তিনি নাগরিকত্ব দাবি করেছিলেন। তবে কেবল এ দেশের নয়, একইসঙ্গে দুই দেশের যৌথ নাগরিকত্ব লাভ করতে চেয়েছিলেন এই সন্ন্যাসিনী।
কী ঘটেছিল ঠিক? তাহলে বরং খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন:
কথায় বলে সাধু সাবধান! কোন সাধুদের সাবধানে থাকতে হয়, কেনই বা?
সেটা ১৯৫৪ সাল। ভারতে বিদেশি শাসন শেষ হলেও, সব বিদেশি তখনও ভারত ছাড়েননি। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই ১৯৫৫ সালে নাগরিকত্ব আইন আনবে সরকার। কিন্তু তার আগেই, এই বিদেশিদের মধ্যেই একজন, ১৫ আগস্টের আগে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন খোদ রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদকে। তিনি আর কেউ নন, পণ্ডিচেরির অরবিন্দ আশ্রমের মাদার। প্যারিসের ইহুদি আলফাসা ভারতে এসেছিলেন স্বামীর হাত ধরে। পরে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। আধ্যাত্মিকতার আশ্রয় নিয়ে অরবিন্দের বাড়িতে চলে আসেন এই বিদেশিনি। অরবিন্দ আশ্রম গড়ে তোলার পিছনে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। তাঁর মনে হয়েছিল, জন্মসূত্রে এবং শিক্ষাসূত্রে তিনি ফরাসি হলেও, ভারতকে তিনি নিজের দেশ হিসেবে নির্বাচন করেছেন। সুতরাং পাকাপাকিভাবেই এ দেশে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি, আর সেই কারণেই নাগরিকত্ব চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতিকে।
কিন্তু আইনি পথে নাগরিকত্বের আবেদন না করে আলাদাভাবে রাষ্ট্রপতিকে কেন চিঠি পাঠান এই সন্ন্যাসিনী? আসলে বিশেষ এক অনুরোধ ছিল তাঁর। ঋষি অরবিন্দের আদর্শ মেনেই তাঁর বক্তব্য ছিল, বিভাজন নয়, মিলনের মধ্যেই সত্যের বাস। ভারতের নাগরিক হওয়ার জন্য যদি তাঁকে ফরাসি নাগরিকত্ব ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে সেই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবেন বলে তাঁর মনে হয়েছিল। তাই একইসঙ্গে দুই দেশের নাগরিকত্ব বজায় রাখতে চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছিলেন মাদার।
আরও শুনুন:
পাপ, প্রায়শ্চিত্ত, উপবাস: ভোট যেন পঞ্জিকায় বাঁধা শাস্ত্রীয় ধর্মকর্ম
এহেন অনুরোধ পেয়ে দ্বন্দ্বে পড়ে যান রাজেন্দ্র প্রসাদও। প্রধানমন্ত্রী নেহরুর সঙ্গেও এ নিয়ে তাঁর চিঠি চালাচালি চলে। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমোদন দেওয়ার কথা কখনোই ভাবেনি সরকার। আর ১৯৫৫ সালে নাগরিকত্ব আইন পাশ হলে সেই সিদ্ধান্তেই সিলমোহর পড়ে। ফলে একইসঙ্গে ভারতীয় ও ফরাসি নাগরিক হওয়া সম্ভব হয়নি এই খ্যাতনামা সন্ন্যাসিনীর পক্ষেও।