প্রায় ১৩০ বছরের গবেষণা। অবশেষে মিলল স্বীকৃতি। বিশ্বের মানচিত্রে যোগ হল নতুন এক মহাসাগর। কী নাম তার? নয়া এই মহাসাগরের বিশেষত্বই বা কী?
পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল। এ তো আমাদের সকলেরই জানা। এখনও পর্যন্ত বিশ্বেরমানচিত্র খুলে বসলেই নজরে আসেচারটি মহাসাগর-আটলান্টিক, প্রশান্ত, ভারতএবংউত্তর মহাসাগর। কিন্তু এবার হয়তো সেই পুরনো ম্যাপ বদলে ফেলার সময় হয়েছে। কেননাএবারম্যাপে জুড়বে নতুন একটি মহাসাগর। প্রায়১৩০ বছরের গবেষণার পর তবেই পাওয়া গিয়েছে এই মহাসাগরকে। নতুন এইমহাসাগরের নাম ‘সাদার্ন ওশান’।
১৯১৫ সাল থেকে বিশ্বের মানচিত্র তৈরি করছে‘ন্যশানাল জিওগ্রাফি’ নামেসংস্থাটি। ২০২১-এই প্রথম, নয়ামহাসাগর বিষয়ে মেলে সবুজ সংকেত। সংস্থার পক্ষে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘অনেকদিন আগেইবিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছিলেন নতুন মহাসাগর সাদার্ন ওশান। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনও মান্য চুক্তিপত্র ছিলনা, তাই আইনি পক্রিয়ায় এতদিন সেটির স্বীকৃতি মেলেনি।’
কেমন এই নতুন মহাসাগর? জানা যাচ্ছে, এই সাদার্ন ওশান অন্যান্য মহাসাগরের থেকে বেশ আলাদা। এটিকে আন্টার্কটিকাসার্কুমপোলার কারেন্ট বা সংক্ষেপে ‘এসিসি’ নামেও ডাকা হয়। এই জলরাশির জন্ম হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন কোটি বছর আগে। আন্টার্কটিকার পশ্চিম থেকে পূর্বে বয়ে যেতএই জলধারা।বিজ্ঞানীরা বলছেন,এই জলধারাই অ্যান্টার্কটিকাকে দক্ষিণ আমেরিকার ভূখণ্ড থেকে আলাদা করত। এটিই ছিল দুটি মহাদেশের মধ্যে বিভাজিকা। এই মহাসাগরের শেষ সীমা যেখানে নির্ধারিত হয়েছে, সেখানের জল প্রচণ্ড ঠান্ডা এবং অন্যান্য সাগরের জলের থেকে অনেক কম লবণাক্ত।
সাদার্ন ওশান-এ প্রচুর তিমি, পেঙ্গুইন এবং সিল মাছেদের বাস। কিন্তু ব্যবসায়িক কারণে ক্রিল, প্যানটাগোনিয়ান টুথফিশের যথেচ্ছ শিকার পরিবেশের ভারসম্য বিঘ্নিত করছে। সেটাই বিজ্ঞানীদের কপালে ফেলছে চিন্তার ভাঁজ। এছাড়া গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলে তাপমাত্রা পরিবর্তনে, বরফের গলে যাওয়া, বিপজ্জনক এবং মাত্রাছাড়া ভাবে বাড়িয়ে তুলছে সাদার্ন ওশানের জলস্তর।২০২১-র মে মাসেই আন্টার্কটিকার রনে আইস সেলফ থেকেবিশালাকায় একটিবরফখণ্ডটি ভেঙে পড়েছে। কয়েক দশক ধরে প্রকৃতির ওপর চলা এই মাত্রাছাড়া অত্যাচারের ফলে বদলে যাচ্ছে জলের তলার বাস্তুতন্ত্রও। ক্রমেই বিপন্ন হচ্চে নীল তিমি, পেঙ্গুইন এবং সিলেদের জীবন যাত্রা।
এসবই বহুদিন ধরে বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন। তা নিয়ে চলেছে পর্যালোচনা। যদিও সাদার্ন ওশানের কপালে মহাসাগরের স্বীকৃতি মেলেনি। অবশেষে ‘উইনাইটেড বোর্ড অন জিওগ্রাফিক নেমস’ এবং ‘ন্যাশানাল ওশিয়ানিক এন্ড অ্যাটমসফিয়ার অ্যাডমিনিসট্রেশন’ – বিশ্বেরদুটি মান্য সংস্থাই ‘সাদার্ন ওশান’ নাম এবং সেটির অস্তিত্ব বিষয়ে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ‘এইবার থেকে ভূগোলের পাঠক্রমে পঞ্চম মহাসাগর হিসেবে সাদার্ন ওশানকে অবশ্যই যোগ করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের এই বিষয় বেশি করে না পড়ালে মহাসাগরের বিশেষত্ব এবং গুরুত্ব বিষয়ে সচেতন করে তোলা যাবে না।’
অতএব, কাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি যখন মিলেছে তখন মহাসাগরের তালিকায় পাকাপাকি জায়গাই করে নিতে চলেছে সাদার্ন ওশান। আর তাই নয়া প্রজন্মের হাতে এবার থেকে উঠবে বদলে যাওয়া বিশ্বের মানচিত্র।