গয়নাগাঁটি কার না প্রিয় বলুন তো! তাই বলে দুধ দিয়ে তৈরি! তাও আবার যে সে দুধ নয়। মায়ের বুকের দুধে দিয়ে তৈরি গয়না! অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, তেমন আবার হয় নাকি! তবে এমন গয়না বানিয়েই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এক দম্পতি। শুধু বানিয়েছেন তা-ই নয়। সেখান থেকে কোটি টাকা উপার্জনও করেছেন তাঁরা। কীভাবে সম্ভব হল ব্যাপারটা? আসুন শুনে নিই।
সদ্যোজাতের জন্য তাঁর মায়ের বুকের দুধের কোনও বিকল্প হয় না, এ কথা কে না জানে। শিশুর বেড়ে ওঠার পিছনে মস্ত বড় অবদান ওই স্তনদুগ্ধের। কিন্তু এই বুকের দুধ ঘিরে ট্যাবুরও অভাব নেই সমাজের। লোকসমাজে সন্তানকে দুধ খাওয়াতে গিয়ে কটাক্ষের শিকার হতে হয় অনেক মাকেই।
তবে সেইসব ট্যাবুকেই ভাঙতে চান তিন সন্তানের মা সাফিয়া। সদ্যোজাত সন্তান বহু ক্ষেত্রেই মায়ের বুকের দুধের সবটা খেয়ে উঠতে পারে না। সেক্ষেত্রে বুকের দুধের বড় একটা অংশই নষ্ট হয়। সেই অপচয় কী করে বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই ভাবনা চিন্তা করছিলেন সাফিয়া রিয়াধ ও তাঁর স্বামী আদম রিয়াধ। তাছাড়া স্তন্যপানের মাধ্যমে মা আর সন্তানের মধ্যে যে সুন্দর একটা সেতু গড়ে ওঠে, সেই মুহূর্তগুলোকে কী ভাবে স্মরণীয় করে রাখা যায়, সেটিও ছিল একটা ভাবনা চিন্তার একটা বিষয়।
সেখান থেকেই শুরু। মাতৃদুগ্ধ দিয়ে যে এমন লাভবান অথচ সৃজনশীল ব্যবসা যে করা যায়, তা সত্যিই প্রথমে ভাবেননি এই দম্পতি। প্রাথমিক ভাবে শুরুটা হয়েছিল শখের বশেই। তবে সেখান থেকেই আজ কোটি টাকা আমদানি করছেন সাফিয়া ও আদম।
আরও শুনুন: তাঁর গর্ভেই জন্ম হয়েছিল সন্তানের, ইউক্রেনের সেই মহিলাকে আশ্রয় ইংল্যান্ডের দম্পতির
বিষয়টা কী? গোড়া থেকেই বলি তবে। গয়নাগাঁটি এমন একটা জিনিস, যা পছন্দ করেন না এমন মহিলা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তা এই গয়নাগাটির কিন্তু কম বৈচিত্র্য নেই। দামী গয়নাগাঁটি বলতেই মনে হয় দামী ধাতু, বহুমূল্য হিরে-জহরতের কথা। কমদামী ইমিটেশনেরও বাজারে চাহিদা বিস্তর। কিন্তু বুকের দুধ থেকে বানানো গয়না! ভেবেছেন কখনও। আর সেই ব্যাপারটা বানিয়েই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন লন্ডনের এই দম্পতি।
লকডাউনের সময় অনেকেই নানা ধরনের সৃষ্টিশীল কাজে হাত পাকিয়েছেন। এই দম্পতি কিন্তু করে ফেলেছেন কোটি টাকার ব্যবসা। তা-ও আবার বুকের দুধ থেকে তৈরি গয়নাগাটি বানিয়ে। ২০১৯ সালে ‘ম্যাজেন্টা ফ্লাওয়ার্স’ নামে একটি সংস্থা খুলে ফেলেছিলেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই চার হাজারেরও বেশি অর্ডার তাঁরা ডেলিভারি করে ফেলেছেন। তাঁদের বানানো গয়না এতটাই জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে যে ব্যবসা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সফিয়া আর আদম। ২০২৩ সালের মধ্যে ই ব্যবসা থেকে তাঁরা কম করে হলেও ১৫ কোটি টাকার মুনাফা করতে পারবেন বলেই আশা দম্পতির।
আরও শুনুন: ৪২ লিটার স্তনদুগ্ধ দান হাসপাতালে, ছকভাঙা কাজে কুর্নিশ আদায় করলেন ভারতীয় মহিলা
বুকের দুধ দিয়ে কী ভাবে গয়না বানানো যায়, ভেবে অবাক হচ্ছেন তো! সেই রহস্য ভেঙেছেন সাফিয়া নিজেই। জানিয়েছেন, প্রথমে প্রযুক্তির মাধ্যমে দুধ থেকে অতিরিক্ত জল বের করে দেওয়া হয়। এর পরে সেটিকে আঠার সঙ্গে মিশিয়ে এক ধরনের পাথরের রূপ দেওয়া হয়। তবে খেয়াল রাখতে হয়, সেই আঠা যাতে হলদেটে না হয় এবং দুধ থেকে প্রস্তুত ওই শক্ত পদার্থটির ধবধবে সাদা ভাব যাতে নষ্ট না হয়। বহু নতুন মা-ই সাফিয়ার সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। যাঁরা নিজেদের অতিরিক্ত দুধ সরবরাহ করছেন সাফিয়াকে। সাফিয়ার সংস্থা ইতিমধ্যেই সেই দুধ থেকে থেকে নেকলেস, কানের দুল, আংটির মতো নানা গয়নাগাটি বানিয়ে ফেলেছেন। আর সেসবের দামও নেহাত কম নয়।
বহু মা-ই নিজেদের মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে শরনাপন্ন হচ্ছেন সাফিয়ার সংস্থার। বিস্তর বিক্রি হচ্ছে সাফিয়ার বানানো গয়নাগাটি। মাতৃস্তন্যকে নষ্ট না করে এ ভাবেও যে সেটাকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়, সেই ভাবনাকে কুর্নিশ জানিয়েছে নেটদুনিয়া।