শীতের দিনে রাস্তায় হতদরিদ্র এমন কত মানুষই তো থাকেন, যাদের পোশাকআশাক, কম্বল কোনও কিছুই জোটে না। তাঁদের জন্য বরাবরই প্রাণ কাঁদত ছোট্ট মেয়েটির। তবে সে তো নিজেই একরত্তি। সবার জন্য কম্বলের ব্যবস্থা করবে, সেই সামর্থ কোথায় তার! তবে কথায় বলে না, ইচ্ছে থাকলে সবই সম্ভব। তেমনই করে দেখাল এগারো বছরের সেই ছোট্ট মেয়েটি। নিজের উদ্যোগে বানিয়ে ফেলল সকলের জন্য কম্বল। তা-ও আবার চিপসের প্যাকেট দিয়ে। কোথা থেকে তার মাথায় এল এমন অদ্ভুত বুদ্ধি। শুনে নিন।
যাঁদের মাথায় ছাদ নেই। শীতের দিনে পথেঘাটেই রাত কাটে। শীত নিবারণের জন্য নেই একটা কম্বলও, তাদের কথা ভেবে ভেবে ভারী কষ্ট হত এগারো বছরের মেয়েটির। সবাইকে কম্বল কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ নেই তো কী হয়েছে, ভেবে ভেবে দারুণ একটা উপায় বের করে ফেলল একরত্তি সেই মেয়ে।
চিপস খেয়ে তার প্যাকেটগুলো ফেলেই দিত সে অ্যাদ্দিন। তাতে পরিবেশও নোংরা হত। সেই প্যাকেটগুলো দিয়েই যদি বানানো যেত কম্বল, যা শীতকালে গায়ে দিয়ে বাঁচত গরিব-দুঃখী মানুষগুলো।
যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। চিপসের ব্যাগ জোগার করা শুরু করল সে। শুধু জোগার করলেই তো হবে না। চিপসের ব্যাগগুলো তো কেমন কোঁচকানো। তা দিয়ে কী ভাবে হবে কম্বল।
আরও শুনুন: প্রেরক ও প্রাপক দুজনেই মৃত, ৭৬ বছর পর ঠিকানায় গিয়ে পৌঁছল চিঠি
তারও উপায় বের করে ফেলল সে। চিপসের ফেলে দেওয়া প্যাকেটগুলিকে ইস্ত্রি করে টানটান করে ফেলা গেল। তার পর সেইসব জুড়ে জুড়ে তৈরি হয়ে গেল একেকটা পূর্ণ আকারের কম্বল। ব্রিটেনের অ্যালাইজা ডিনের এই কাজে তাকে সাহায্য করেছেন তাঁর মা ডারলেন।
একেকটা কম্বল বানাতে লাগে কম করে হলেও লাগে মোট ৪৪টি চিপসের প্যাকেট। সেই প্যাকেট সংগ্রহের জন্য একটি বক্সও বানিয়েছে সে। পাড়া-প্রতিবেশী খাওয়ার পরে তাঁদের চিপসের প্যাকেটটি ফেলে দিয়ে যান সেই বাক্সে। এখনও পর্যন্ত মোট ৮০ খানা কম্বল বানিয়েছেন মা-মেয়ে মিলে।
অ্যালাইজার মা জানিয়েছেন, প্রত্যেকটি কম্বল ইস্ত্রি করে পুরোপুরি বানিয়ে তুলতে সময় লাগে প্রায় ৪৫ মিনিট করে। জলে-বৃষ্টিতে যাতে কম্বলগুলি নষ্ট না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখেন তাঁরা।
আরও শুনুন: মিষ্টি নয়, এককালে ওষুধ হিসাবেই ব্যবহারের চল ছিল লাড্ডুর
প্রথম দিকে নিজের পকেট থেকেই এই কম্বল বানানোর খরচ বহন করতেন তাঁরাই। তবে এখন বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আত্মীয়-বন্ধু-প্রতিবেশীরা তো সাহায্য করছেনই।
শুধু কম্বলই নয়, ওই চিপসের প্যাকেট দিয়েই ছোট্ট অ্যালাইজা বানিয়ে ফেলেছে টুপি, গ্লাভস ও মোজা। কম্বলের সঙ্গে সঙ্গে সেসবও গরিব মানুষদের বিলিয়ে বেড়ায় একরত্তি মেয়েটি। আর এ সবের সঙ্গেই থাকে আরও একটা জিনিস। তা হল অ্যালাইজা স্পেশাল চকলেট।
ফুটপাতের ওই মানুষগুলোর জন্য আরও বেশি করে কম্বল বানাতে চায় এলাইজা। উৎসবের মরসুমে ইতিমধ্যেই তাদের বাক্সে জমা হয়েছে প্রচুর প্যাকেট। ফেসবুকে ইতিমধ্যে একটা পেজও খুলে ফেলেছে অ্যালাইজারা। সেখানে প্যাকেট সংগ্রহের জন্য মানুষের কাছে আবেদন জানায় তারা। আগামী শীতে যেন তাদের আশপাশের এলাকায় একটাও মানুষ ঠান্ডায় না কষ্ট পান, সেই ব্যবস্থা করতে এখন থেকেই উঠেপড়ে লেগেছে একরত্তি অ্যালাইজা।