বেগুন থেকে শুরু করে চিংড়িমাছ। রকমারি অ্যালার্জির কথা তো শুনেছেনই। তবে এমন আশ্চর্য অ্যালার্জির কথা যে শোনেননি, তা হলপ করে বলতে পারি। বছর পনেরোর এই কিশোরীর নাকি রয়েছে জলে অ্যালার্জি। তাই দুঃখ হলে একটু চোখের জলটুকু অবধি ফেলতে পারে না সে। আসুন, শুনে নিই সেই আশ্চর্য অসুখের কথা।
মাত্র পনেরো বছরের মেয়ে সে। এই বয়সে মাঝেমধ্যে একটু দুঃখ-টুঃখ তো হয়ই। স্কুলের আন্টিদের কাছে বকা বা মায়ের কাছে পিটুনি খেয়ে। মনের দুঃখে যে একটু মন খুলে কাঁদবে, সে জো নেই তার। কাঁদলেই যে চোখ চুঁইয়ে নামবে জল, আর অমনি শুরু হবে লাল লাল ব়্যাশ, চুলকানি আর জ্বালা।
সাঁতার কাটা বা স্নান করা, কোনও কিছুরই উপায় নেই আমেরিকার অ্যারিজোনার বাসিন্দা আবিগেইল বেক নামে সেই কিশোরীর। বৃষ্টিতে ভেজার কথা তো ভুলেই যান। জল তার কাছে অ্যাসিডের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। শরীরে অ্যাসিড পড়লে যেমন ক্ষত ও প্রদাহের সৃষ্টি করে, আবিগেইলের ক্ষেত্রে ঠিক সেই কাজটাই করে জল।
আরও শুনুন: আম খেলে বাড়ে ত্বকের সমস্যা! খাওয়ার আগে জলে ভেজানোই বা হয় কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন…
এমন আশ্চর্য রোগের কথা শুনেছেন কখনও? বছর তিনেক আগে প্রথম বার সেই উপসর্গ দেখা যায় আবগেইলের শরীরে। প্রথমে অবশ্য বুঝতেও পারেননি তাঁর বাড়ির লোকেরাও। ক্রমশ দেখা যায়, জলের স্পর্শ লাগলেই আবগেইলের শরীরে ভয়ঙ্কর ধরণের সব ব়্যাশ দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে যন্ত্রণা। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় ছোট্ট মেয়েটিকে। সেখানে বিস্তর পরীক্ষা-নিরিক্ষার পরে জানা যায় অ্যাকুয়াজেনিক আরটিকেরিয়া নামক একটি বিশেষ অ্যালার্জির শিকার আবিগেইল।
এই অ্যালার্জি বেশ বিরল বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে মাত্র একশো জনের এই রোগ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সাধারণত বয়ঃসন্ধীর পৌঁছনোর সময়েই এ রোগের শিকার হয় ছেলেমেয়েরা। তাঁকে রিহাইড্রেশনের ওষুধ দিয়েছেন চিকিৎসক।
আরও শুনুন: কোথাও পেঁয়াজ, কোথাও বা গিরগিটি! জ্বর সারানোর রকমারি টোটকায় ভরসা গোটা বিশ্বের
এমন আশ্চর্য অ্যালার্জি নিয়ে কার্যত নাজেহাল ছোট্ট আবিগেইল। বৃষ্টি পড়ছে দেখলেও আজকাল ভয়ে মরে সে। স্নানের ধারপাশ মাড়ায় না পর্যন্ত। শুধু তাই নয়। জল খেতে পর্যন্ত পারছে না আবিগেইল। জল খাওয়ার চেষ্টা করলেই শুরু হচ্ছে বমি। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এক গ্লাস জলও খায়নি সে। নরম পানীয়ের ভরসাতেই চলছে তাঁর।
এভাবে চলতে থাকলে খুব শিগগিরই তাঁর শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। তাই বাইরে থেকে ওষুধ দিয়ে সেই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করছেন ডাক্তাররা।।
আবিগেইলের পরিবারে তো ছাড়, আশপাশেও কারওর এমন অসুখের কথা শোনেননি বাড়ির কেউই। প্রাথমিক ভাবে পরিজনেরা ভেবেছিলেন, তাঁদের বাড়ির জল সরবরাহেই কোনও সমস্যা রয়েছে। যার জন্য সমস্যা হচ্ছে আবিগেইলের। প্রথমে ততটা না হলেও দিনে দিনে আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে তার এই অ্যালার্জি। সম্প্রতি একটি স্পোর্টস ড্রিঙ্ক খেয়ে বেজায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ওই কিশোরী। শুরু হয় পেট ও বুকের যন্ত্রণা। প্রায় চার ঘণ্টা কষ্ট পেয়েছিল আবিগেইল সেদিন।
আরও শুনুন: প্রথমে ছিলেন বেঁটে, পরে বেজায় লম্বা… অদ্ভুত রূপান্তরে বিশ্ববাসীকে অবাক করেছিলেন এই ব্যক্তি
জলই নাকি জীবন। কিন্তু সেই জীবনই অভিশাপ হয়ে নেমে এসেছে আবিগেইলের জীবনে। তাঁর এই জলে অ্য়ালার্জির কথা অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না। তাঁদেরকে এ ব্যাপারে আজকাল বোঝানোর চেষ্টা করে আবিগেইল। একদিন ঠিক এই রোগের হাত থেকে নিস্তার পাবে ছোট্ট মেয়েটি, এই আশাতেই বুক পেতে রয়েছে তাঁর গোটা পরিবার।