কুকুরের ঘ্রাণশক্তি যে লা-জবাব, তা তো আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ঘ্রাণশক্তির কারণেই বহুদিন ধরে অপরাধীকে খুঁজে বের করার কাজে কুকুরদের ব্যবহার করা হয়ে আসছে। যে কোনও পুলিশ বিভাগই অত্যন্ত আস্থা রাখে তাদের ডগ স্কোয়াডের উপর। কিন্তু জানেন কি, কেবল অপরাধীর হদিশ দেওয়া নয়, পাকা গোয়েন্দার মতোই অপরাধীদের শনাক্ত করার কৃতিত্ব দেওয়া চলে এক কুকুরকে? এমনকি, তাকে পৃথিবীর প্রথম গোয়েন্দা বলেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে থাকে?
গোয়েন্দাগিরির কাজে কুকুরের সাহায্য নেওয়া নিতান্তই আধুনিক কালের রীতি। বিশেষ করে বিদেশের শিকার করার অভ্যাস থেকেই এহেন রীতির জন্ম বলেও মনে করেন অনেকে। শিকারে যাওয়ার সময় অনেক শিকারিই সঙ্গে কুকুর নিয়ে যেতেন, যাতে শিকারের খোঁজ পাওয়া যায় সহজে। তবে এ কথাও ভুলে গেলে চলবে না, প্রাচীন ভারতেও এই অভ্যাস বহাল ছিল ভালমতোই। এমনকি মহাভারতেও তার প্রমাণ মেলে। একলব্যের সঙ্গে কুরুপাণ্ডবদের যখন প্রথম সাক্ষাৎ হয়, সেই সময় শিকারে বেরোনো রাজপুত্রদের সঙ্গে ছিল একটি কুকুর, তির ছুড়ে যার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন দ্রোণের মন্ত্রশিষ্য একলব্য। আর আরও প্রাচীন কালে, এ দেশেই সন্ধান পাওয়া যায় এমন এক কুকুরের, যাকে পৃথিবীর প্রথম গোয়েন্দা হিসেবে গণ্য করা হয়।
আরও শুনুন: স্রেফ গন্ধ শুঁকেই নাকি করোনা রোগী চিহ্নিত করে ফেলবে কুকুর! চাঞ্চল্যকর দাবি বিজ্ঞানীদের
কেন এমন ধারণা করেন গবেষকেরা? তার জন্য নজর ফেরাতে হবে আজ থেকে তিন হাজার বছর আগে রচিত প্রাচীনতম সাহিত্যের পাতায়। যার নাম ঋগ্বেদ। ঋগবেদের দশম মণ্ডলের একশো আট সংখ্যক সূক্তেই রয়েছে এই কুকুরটির উল্লেখ। তার নাম সরমা। সারমেয় অর্থাৎ কুকুরদের আদি মাতা সরমা দেবতাদের হারানো সম্পদ উদ্ধার করে এনে দিয়েছিল। কী সেই সম্পদ?
প্রাচীন সমাজব্যবস্থায় গোরুকে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ বলে মনে করা হত। মহাভারতেও গরু দখল করার উদ্দেশ্যেই কৌরবরা বিরাট রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন, মনে আছে তো? আর এই গরুই চুরি হয়ে গিয়েছিল দেবতাদের গোশালা থেকে। ‘পণি’ নামের এক সম্প্রদায়ের একদল ডাকাত বা বেনে, দেবতাদের সব গরু চুরি করে নিয়ে যায়। দেবতারা তাঁদের হারানো গোরুর সন্ধান পেতে সোজা গোয়েন্দা নিযুক্ত করেন। খোঁজখবর করতে করতে অবশেষে সে হদিশ পায় পণিদের। তাদের আড্ডায় হানা দেয় সে, এবং চুরি করা গরু ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চায়। এদিকে পণিরা তাদের এত কৌশলে চুরি করা সম্পত্তি ছাড়বে কেন! তারা উলটে গোয়েন্দাকেই টেনে নিতে চায় তাদের দলে। কিন্তু ভবি ভোলার নয়। এই গোয়েন্দা আর কেউ নয়, সরমা। ঋগ্বেদের এই সূক্তটিতে বর্ণিত আছে পণিদের সর্দারের সঙ্গে তার কথোপকথন।
আরও শুনুন: শার্লক হোমসের সঙ্গেই ভারতে হাজির প্রথম পুলিশ গোয়েন্দাও, নয়া ভূমিকায় কলকাতা পুলিশ
পণিদের জাল কেটে দেবতাদের কাছে ফিরে এসেছিল বিশ্বস্ত সরমা। চোরাই মালের সন্ধান জানিয়ে দিয়েছিল তাঁদের। আর তার দেখানো পথেই পণিদের ডেরায় হানা দিয়ে গোরু উদ্ধার করতে সক্ষম হন দেবতারা। আর সেইসঙ্গেই অমর হয়ে যায় সরমার নামও।