যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন। প্রাণ বাঁচাতে রোজ পালাচ্ছেন দেশবাসী। পড়শি দেশে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে হন্যে অসংখ্য শরণার্থী। আর তাঁদের সাহায্য করতেই অভিনব ভাবনা ভেবেছে বছর পনেরোর ভারতীয় এই কিশোর। শরণার্থীদের সাহায্যে সে মাত্র দু-সপ্তাহেই বানিয়ে ফেলেছে তাক লাগানো একটি অ্যাপ। খুদে এই প্রযুক্তিবিদের মগজের ধার দেখে চমকে উঠেছে নেটদুনিয়া। আসুন, শুনি তার গল্প।
একমাসেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। তবু শান্তি ফেরেনি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে। রাশিয়ার লাগাতার হামলায় বিপর্যস্ত গোটা দেশ। যুদ্ধ মাথায় করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন হাজার হাজার বাসিন্দা। প্রতিবেশী দেশগুলিতে ক্রমশই বাড়ছে ইউক্রেন শরণার্থীদের ভিড়। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইউরোপের বহু দেশই। প্রত্যেকেই যে যার মতো করে চেষ্টা করেছেন যুদ্ধক্রান্ত দেশ থেকে আসা মানুষগুলোকে আশ্রয় দিতে। ঘরদোর, নিজের দেশ ছেড়ে আসা মানুষগুলোর তবু অসহয়তার শেষ নেই।
আরও শুনুন: যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে মানবিকতার নজির! চিড়িয়াখানার প্রাণীদের বাঁচাতে মরিয়া একদল স্বেচ্ছাসেবী
খবরে রোজ এসব দেখে-পড়ে দেখে ভারী মন খারাপ হত ছোট্ট ছেলেটির। অথচ এত এত দূরে বসে কী-ই বা করতে পারে সে। তবু বারবার মনে হত, মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে পারলে যেন বড্ড ভাল হত।
আর এসব ভাবতে ভাবতেই তার মাথায় এসেছিল অভিনব একটি পরিকল্পনা। শারীরিক ভাবে পাশে থাকা সম্ভব নয় তো কী হয়েছে! ইউক্রেনের শরণার্থী মানুষদের পাশে থাকবে সে প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। মাত্র দুসপ্তাহেই বানিয়ে ফেলল সে দুর্দান্ত একটি অ্যাপ। যার মাধ্যমে সহজেই দেশহারা মানুষগুলো খুঁজে পেতে পারেন নতুন বাসস্থান। যেখানে ফের নতুন করে জীবন শুরু করতে পারবেন তাঁরা।
বাবা নামী বেসরকারি সংস্থার ম্যানেজার। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির ছায়ায় বেড়ে উঠেছে তেজাস রবিশঙ্কর নামে ওই কিশোর। নিজেই টুইটারের তার বানানো অ্যাপের লিঙ্ক শেয়ার করেছে তেজস। ইতিমধ্যেই গুগল প্লে-স্টোরেও পাওয়া যাচ্ছে ‘লঞ্চিং রিফিউজি’ নামে ওই অ্যাপটি।
আরও শুনুন: তাঁর গর্ভেই জন্ম হয়েছিল সন্তানের, ইউক্রেনের সেই মহিলাকে আশ্রয় ইংল্যান্ডের দম্পতির
তেজসের বানানো অ্যাপটিকে ‘বাচ্চো কা খেল’ ভাবলে ভুল করবেন কিন্তু। বেশ কিছু অভিনব ফিচার রয়েছে তাঁর এই অ্যাপটিতে। কী রকম?
অ্যাপটিতে রয়েছে একটি বিশ্বম্যাপ। যেখানে শরণার্থীদের জন্য চিহ্নিত করা রয়েছে সব থেকে কাছের এবং সুরক্ষিত দেশের ঠিকানা-সহ যাবতীয় তথ্য। খাবারদাবার,ওষুধপত্র থেকে শুরু করে আরও নানাবিধ সুযোগসুবিধা- সব কিছুরই খোঁজ জানাবে এই অ্যাপ। মাত্র দুটি ক্লিকেই ওই অ্যাপের মাধ্যমে সাহায্য পেতে পারবেন কোনও শরণার্থী। ইংরেজির পাশাপাশি ১২টি অন্যান্য ভাষায় কাজ করে অ্যাপটি। কিছুদিন আগে নিজের তৈরি অ্যাপটি নিয়ে গুগুল প্লে-স্টোরের দ্বারস্থ হয়েছিল ছোট্ট তেজস। আনন্দের কথা, তারা সাগ্রহে গ্রহণ করেছে তেজসের বানানো এই অ্যাপটি।
একরত্তি ছেলের এ হেন কাজ দেখে অবাক বাবা জি ভি রবিশঙ্কর। পাশাপাশি ছেলের জন্য গর্বও বোধ করছেন তিনি। টুইটারে সে কথা জানিয়েছেন নিজেই। ছোট্ট তেজসের প্রতিভা দেখে পঞ্চমুখ নেটদুনিয়াও। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইঞ্জিনিয়ারেরাও যা করতে হিমশিম খান, তা নিমেষে করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে খুদে এই প্রযুক্তিবিদ।