পাহাড়ে একটা বাড়ি থাকবে। এ স্বপ্ন অনেকেই দেখেন। বাস্তবে এমন কিছু করা খুব একটা সহজ নয়। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেই কিছু একটা উপায় হয়। যেমনটাই হয়েছে দিল্লির দুই যুবকের সঙ্গে। পাহাড়ে বাড়ি তৈরির স্বপ্ন সত্যি করেছেন তাঁরা। আর সেই কাজে সঙ্গে পেয়েছেন ১৮ দেশের ৯০ জন বন্ধুকে। কীভাবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শহুরে কোলাহল নেই। অযথা যানজটে আটকে পড়ার ভয়ও নেই। রয়েছে প্রকৃতির কোলে শান্তিতে সময় কাটানোর সুযোগ। এমন জীবনের স্বপ্ন কে না দেখেন! কিন্তু চাইলেই আর মিলছে কই? মাঝেমধ্যে নগরজীবনে হাঁপিয়ে উঠে নির্জন কোনও পাহাড়ে ছুটে যান কেউ কেউ। কিন্তু পাকাপাকিভাবে সেখানে কাটাতে পারা অনেকেই কাছেই স্বপ্নের মতো।
:আরও শুনুন:
সরকারি স্কুলের নামেও ‘জাত’ বোঝাতে হবে? আপত্তি তুলল মাদ্রাজ আদালত
সেই স্বপ্নকেই বাস্তবে পরিণত করেছেন দিল্লির দুই যুবক। শহুরে জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন দিল্লির রাঘব এবং অংস। ঠিক করেন দূরে কোনও পাহাড়ের কোলে বাড়ি তৈরি করবেন। ভাবলেই তো হল না, তার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। ধৈর্য ধরে সবকিছু করেছেন দুই ভাই। প্রথম সমস্যা ছিল জায়গা খোঁজা। দুইভাই ঠিক করেন ঠিক পাহাড়ের কোলে নয়, পাহাড়ি কোনও গ্রামে থাকবেন তাঁরা। খোঁজ নিয়ে হাজির হন ঋষিকেশের প্রত্যন্ত এক গ্রামে। সেখানে ফাঁকা জায়গা পেতে তেমন অসুবিধা হয়নি। কিন্তু একটা জিনিস দেখে তাঁদের বেশ দুঃখ হয়। তা হল, সেই গ্রামের ঘড়বাড়ি। শহরের মতোই সেখানকার মানুষজন, ইট, বালি সিমেন্ট দিয়ে ঘর তৈরি করেছেন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এমনটা হওয়াই অবশ্য স্বাভাবিক। কিন্তু রাঘবরা ভেবেই ছিলেন, নতুন জীবনে শহরের এতটুকু ছাপ রাখবেন না। তাহলে উপায় কী?
:আরও শুনুন:
সংস্কৃত নয় ইংরাজি বলুক পড়ুয়ারা, ছাত্রের গীতাপাঠ থামিয়ে ABVP-র রোষের মুখে প্রিন্সিপাল
অনেক ভেবে দুজনে ঠিক করেন মাটির ঘর বানাবেন। কিন্তু তাতেও সমস্যা। শুধুমাত্র মাটি দিয়ে ঘর বানালে তা মজবুত হবে না। তাই মাটির সঙ্গে খড়, বালি, কাদা, মিশিয়ে বিশেষ এক মণ্ড তৈরি করেন তাঁরা। সেই দিয়েই বানিয়ে ফেলেন আস্ত একটা ঘর। কিন্তু এই কাজ দুজনের পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। তাই ঋষিকেশের ওই গ্রামে ঘুরতে আসা পর্যটকদের সাহায্য নেন তাঁরা। এমনিতে এইসব জায়গায় বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। তাঁদের সঙ্গে আলাপ করে নিজেদের উদ্দেশ্য বোঝান রাঘবরা তাতেই খুশি হয়ে বাড়ি তৈরির কাজে হাত লাগান পর্যটকদের অনেকে। সম্পূর্ণ বাড়ি তৈরিতে সময় লেগেছিল এক বছরেরও বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৯০ জন পর্যটকের সাহায্য পেয়েছেন তাঁরা। এঁরা সকলেই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে হাজির হয়েছিলেন ওই গ্রামে। তাও প্রায় ১৮টি দেশের বাসিন্দা রাঘবদের সঙ্গে ওই বাড়ি তৈরিতে হাত লাগিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে তৈরি হয় স্বপ্নের বাড়ি। বাইরে থেকে দেখে মনে হবে হ্যারি পটারের রূপকথা রাজ্য থেকে উঠে আসা কোনও বাড়ি। তবে এই বাড়িটি স্রেফ নিজেদের থাকার জন্য তৈরি করেননি দিল্লির দুই যুবক। তাঁদের মতো আরও অনেকেই যেন প্রকৃতির কোলে কিছুদিন সময় কাটানোর সুযোগ পান, সেই ব্যবস্থাই করে দিচ্ছেন এই দুজন। বাড়িটিকে একটি হোমস্টে হিসেবেই রাখবেন বলে ঠিক করেছেন রাঘবরা। অতিথিদের জন্য সবরকম ব্যবস্থাও করেছেন। তবে শহুরে হোটেলের মতো নয়। মাটির বাড়ির অন্দরে সব আসবাবও একেবারেই অন্য রকমের। আর বাইরে বেরোলেই পাহাড়ের খোলা বাতাস। চলতি বছরে সকলের জন্য এই হোম স্টে-র দরজা খুলে দিয়েছেন দুই ভাই। ঋষিকেশ গিয়ে এক-দুদিনের জন্য নিশ্চিন্তে রাত কাটানো যাবে এই বাড়িতে। সঙ্গে বাড়তি পাওনা হিসেবে জুটবে, পুরনো দিনের জীবন কাটানোর স্বাদ।