উলুবনে মুক্তো ছড়ানোর কথা শুনেছেন। পৃথিবীর শুষ্কতম মরুভূমিতে আঙুর ফলানোর ইচ্ছাটাও বোধহয় খানিকটা তেমনই। কিন্তু ওই যে বলে, সদিচ্ছা থাকলে অসম্ভব কিছুই না। তেমনই এক অসম্ভব কাণ্ডকে সম্ভব করে ফেলেছেন এই ব্যক্তি। শুষ্ক মরুভূমির উপরেও ফলিয়ে ফেলেছেন রসে টুপটুপে আঙুর। আসুন, শুনে নিই তাঁর কথা।
বাগান করার শখ তো অনেকেরই থাকে। নিজের বাগানের গাছে সুমিষ্ট সব ফল ধরবে, এমন সাধই বা কার না হয়। বাড়ির উঠোন কিংবা ছাদ, এমনকি ছোট্ট একফালি বারান্দা। বাগানের শখ মেটাতে এসবই হয়ে ওঠে একফালি অরণ্য। তবে তাই বলে শুষ্ক খটখটে মরুভূমিতে বাগান করার শখ! শুনলে একটু অবাকই লাগে।
কথায় বলে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। এমনটাই করে ফেলেছেন ৭১ বছরের হেক্টর ইস্পিন্ডোলা নামে এক ব্যক্তি। চিলির আটাকামা মরুভূমির মাঝে তিনি বানিয়ে ফেলেছেন একটা গোটা আঙুর খেত।
আরও শুনুন: পৃথিবীটা মানুষের মতো পশুপাখিদেরও, অভয়ারণ্যের পাঠশালায় খুদেদের শেখাচ্ছেন সঞ্জীব
না, মোটেও সহজ ছিল না ব্যাপারখানা। এই আটাকামা মরুভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আট হাজার ফুট উঁচুতে। এমনিতেও পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্কতম মরুভূমি আটাকামা। চিলির উত্তরে টোকোনাও অঞ্চলে একটি ওয়েসিসে আঙুর চাষ শুরু করেন হেক্টর। মরুভূমি মানেই দিনে মারাত্মক গরম। আর সূর্য পাটে বসলেই নামতে থাকে ঠান্ডা। রাত বাড়তেই সেই ঠান্ডা অনেক সময় শূন্যের নিচে নেমে যায়। ফলে এই দুই চরম আবহাওয়া সম্পন্ন এলাকায় আঙুর চাষ কিন্তু রীতিমতো কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
আরও শুনুন: এলন মাস্ক বা আম্বানির নাম শোনা, কিন্তু বিশ্বের প্রথম কোটিপতি ব্যক্তিকে কি চেনেন?
কিন্তু সেই কষ্টসাধ্য ব্যাপারকেই সাফল্যের সঙ্গে করে দেখিয়েছেন হেক্টর। কখনও রাত এগোরোটায় তো কখনও রাত তিনটেয় উঠে আঙুর খেতে জল দিতে হত তাঁকে। আবহাওয়ার মর্জি বুঝে খেয়াল রাখতে হত গাছেদের। সব মিলিয়ে মোট আঠারোটি ছোট আঙুর খেত রয়েছে হেক্টরের। আয়লু কোঅপারেটিভ নামে একটি সংস্থার কাছে নিজের ফসল বিক্রি করেন তিনি। ২০২১ সালে কম করে হলেও ১৬ টন আঙুর সেই সংস্থাকে সরবরাহ করেছেন হেক্টর। এ বছর আঙুরের ফলন আরও ভাল হয়েছে তাঁর। তা সব মিলিয়ে ২০ টনের কাছাকাছি তো হবেই। তাঁর খেতের আঙুর সেখান থেকে সোজা যায় ওয়াইন তৈরির কারখানায়। হেক্টরের ফলানো আঙুর থেকে তৈরি হয় উৎকৃষ্ট মানের সব ওয়াইন।
ওয়াইন সংস্থার তরফে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, এই চরম আবহাওয়ায় থেকে আঙুরগাছগুলি বেশ কিছু অভিযোজন করেছে। নিম্ন বায়ুচাপের কারণে এখানকার আঙুরের খোসা বেশ মোটা বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। দিনে দিনে আরও বাড়ছে হেক্টরের খেতের আঙুরের চাহিদা। পরের মরসুমে দ্বিগুণ আঙুরের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ইতিমধ্যেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ৭১ বছরের হেক্টর। সব মিলিয়ে তাঁর আঙুরচাষ যে দুর্দান্ত সফল, তা বলাই বাহুল্য।