সত্তর বছর বয়সে সন্তান প্রসব! অবাক হচ্ছেন! কী মনে হচ্ছে সিনেমার গল্প বলছি? একবারেই নয়। বাস্তবেই ঘটেছে এমন কান্ড। তাও আবার এক নয়, যমজ সন্তানের মা হয়েছেন বছর ৭০-র বৃদ্ধা। কীভাবে সম্ভব হল এমনটা? আসুন শুনে নিই।
সন্তানের সঙ্গে মায়ের বয়সের পার্থক্য ৭০ বছর! শুনতে অবাক লাগলেও, এটাই সত্যি। ৭০ বছর বয়সেই যমজ সন্তানের মা হয়েছেন মহিলা। এবং তিনজনেই একেবারে সুস্থ রয়েছেন। বলাই বাহুল্য, চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে এমন ঘটনা একেবারেই বিরল। একদিকে নির্দিষ্ট বয়সের পর মহিলারা প্রাকৃতিক ভাবেই সন্তানধারণ ক্ষমতা হারান। অন্যদিকে এই বয়সের প্রসবের ধকল সামালানোও খানিক অসম্ভব বলা চলে। তাই এই মহিলার ৭০ বছর বয়সে ২ সন্তানের মা হওয়ার ঘটনায় বেজায় অবাক চিকিৎসকরাও।
আরও শুনুন: মোদি জমানাতেই ‘স্থায়ী স্বামী’ পাচ্ছেন মুসলিম মহিলারা, আর.এস.এস নেতার মন্তব্যে জোর বিতর্ক
ঘটনাটি উগান্ডার। সেখানকার এক হাসপাতালে সদ্য মা হয়েছেন এই সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা। স্বাভাবিক ভাবেই ঘটনার জেরে ওই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন তিনি। সে দেশের প্রায় সমস্ত খবরের কাগজ ঘটা করে একই নবজাতকদের আগমনের খবর ছেপেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই বয়সে এমনটা কীভাবে সম্ভব হল?
আরও শুনুন: সিনেমা নয়, সত্যি! ৪৭-এ অন্তঃসত্ত্বা মা, লজ্জা না পেয়ে বোনকে স্বাগত জানাল ২৩-এর দিদি
সবটাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফল। বিজ্ঞানের জাদুতে দীর্ঘদিন নিঃসন্তান থাকা দম্পত্তিও সন্তানসুখ পেতে পারেন। এবং তার জন্য একটা নয়, রয়েছে একাধিক উপায়। এমনই এক উপায় হল আইভিএফ, বা ইন ভার্টো ফার্টিলাইজেসন। উগান্ডার এই বৃদ্ধাও মা হয়েছেন এই পদ্ধতিতেই। এক্ষেত্রে সন্তান ধারণের জন্য সঙ্গমের প্রয়োজন নেই। শুক্রাণু আর ডিম্বানুর মিলন হয় দেহের বাইরে। প্রথমে নারী ও পুরুষের শরীর থেকে শুক্রাণু ও ডিম্বানু সংগ্রহ করা হয়। তারপর বিশেষ পদ্ধতিতে তার মিলন ঘটিয়ে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। সবটাই হয় গবেষণাগারে। এরপর সেই সদ্য তৈরি হওয়া অপুষ্ট ভ্রূণটি মাতৃগর্ভে প্রপবেশ করানো হয় ইনজেকশনের মাধ্যমে। বাকিটা অবশ্য প্রাকৃতিক ভাবেই সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ মাতৃ জঠরে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে ওই ভ্রূণ। তারপর নির্দিষ্ট সময় প্রসব। উগান্ডার এই বৃদ্ধাও একইভাবে নিজের গর্ভে সন্তানদের ধারণ করেছেন। তবে সেই সন্তানদের ভ্রূণ অবস্থায় তাঁর গর্ভে প্রতিস্থাপিত করা হয়। যদিও বয়স জনিত কারণে মহিলার পক্ষে আর ডিম্বানু উৎপাদন সম্ভব ছিল না। তাই সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে তাঁর স্বামীর শুক্রাণু ব্যবহার হলেও, ডিম্বানুটি অন্য মহিলার। চিকিৎসা জগতে এই ব্যবস্থাও একেবারেই স্বাভাবিক। তবু সন্তান তো সন্তানই। দীর্ঘদিন যাদের গর্ভে ধরেছেন, তাদের সামনে থেকে দেখে আবেগে ভেসেছেন মহিলা। তবে এই বয়সে গর্ভধারণ বা প্রসবের ধকল সামলানো, দুটোই বেশ কঠিন ছিল মহিলার জন্য। তাঁর প্রসবও হয়েছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। কারণ প্রি ম্যাচিয়র অবস্থায় দুই শিশুকে বার করতে হয়েছে। প্রথম কয়েকদিন তাদের অবস্থা তেমন ভালো না থাকলেও, বর্তমানে মা ও খুদে সকলেই সুস্থ। যদিও মহিলার আক্ষেপ দুই সন্তানের জন্ম দেওয়ার বিষয়টা তাঁর স্বামীর একেবারেই পছন্দ হয়নি। এমনকি হাসপাতালে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেও আসেননি তিনি। কিন্তু তাতে কি! স্বামীকে নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও, মায়ের দুঃখ ভুলিইয়েছে দুই খুদে। আপাতত তাদের নিয়ে আনন্দে মেতে রয়েছেন ওই বৃদ্ধা।