পেশার জগতে মেয়েদের নিয়োগ করা হবে? কাজ করতে পারবেন তো? এখনও বলছেন অনেকেই। মেয়েরা পালটা বলছেন, আসলে ঘরে বাইরে সামাল দিতে গিয়েই তাঁদের পেরে ওঠা-টা পিছিয়ে যায়। পরিসংখ্যান কী বলছে? শুনে নেওয়া যাক।
দেশের পেশাদার কাজের বাজারের দিকে যদি নজর দেওয়া যায়, দেখা যাবে সেখানে পুরুষের তুলনায় মেয়েদের অংশগ্রহণ এখনও অনেকটাই কম। আবার সেই কর্মরতা নারীদের মধ্যেও কেউ কেউ প্রোমোশনের সুযোগ নিতে পারেন না কখনও, এমনকি কাজও ছেড়ে দেন, এমনটাও দেখা যায়। সব মিলিয়ে, কেরিয়ারের নিরিখে পুরুষেরা যতখানি এগোচ্ছেন, মেয়েদের ক্ষেত্রে সে অগ্রগতির হার এখনও তুলনায় কম। আর সেখান থেকেই অনেক নিয়োগকর্তা বলে থাকেন, মেয়েরা নাকি অনেক কাজই করে উঠতে পারেন না। কিংবা তাঁরা হয়তো কাজের ব্যাপারে কম গুরুত্ব দেন। বা কেরিয়ার নিয়ে আদৌ ভাবিত নন। এমনই নানা অভিযোগ শোনা যায়। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা চোখ রাখল দেশের আধুনিক পেশাজগতে কর্মরতা নারীদের অবস্থার দিকে। আর ‘উইমেন ইন মডার্ন ওয়ার্কপ্লেসেস ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক ওই সমীক্ষাতেই দেখা গেল, কেন কেরিয়ারে পিছিয়ে পড়েন তাঁরা অনেকে, সে কথা জানাচ্ছেন নারীরাই। সমীক্ষাটি করা হয়েছিল দেশের অন্তত ২ লক্ষ মহিলাকে নিয়ে। মোটামুটি ৭০ শতাংশ নারীই মনে করছেন, কাজকে অবহেলা করে বা কম গুরুত্ব দেওয়ার কারণে তাঁরা পিছিয়ে পড়েন এমন নয়। আসলে ঘর আর বাইরের কাজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার দায় তাঁদের উপর চেপে থাকে। আর সেই ভারসাম্য রাখতে গিয়েই শেষমেশ মার খায় তাঁদের কেরিয়ার।
আরও শুনুন:
বাবার পদবি ব্যবহার করতে লাগবে স্বামীর অনুমতি! এ দেশের মেয়েদের বড় হতে নেই?
সাম্প্রতিক অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির হারে যে আশার আলো দেখা গিয়েছে, তার নেপথ্যে একটি কারণ কাজে মহিলাদের বেশি যোগদান। দেশের ওয়ার্কফোর্সে মেয়েদের যোগদান বেড়েছে বলেই দাবি করা হয়েছে সেসময়। কিন্তু সেই মেয়েদেরই অধিকাংশ মনে করছেন, ঘরে বাইরে সামাল দিতে গিয়েই আসলে কেরিয়ারে পিছিয়ে পড়ছেন তাঁরা। ঘরের কাজ যেন বরাবরই মেয়েদের জন্য বরাদ্দ। এমনকি কর্মসহায়িকা থাকলেও তাকে কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে বাড়ির গৃহিণীকেই, তা তিনি যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন। কাজে বেরনোর আগে বা পরে ঘর গোছানো থেকে সন্তানের দায়িত্ব পালন- এর একটা বড় অংশ, কখনও কখনও আবার সবটাই যে মেয়েদের উপরেই ন্যস্ত, সে কথা অস্বীকার করার জো নেই। সন্তানকে ছেড়ে দূরে কোথাও সেমিনার কি অফিস ট্যুরে যাওয়ার সুযোগ অনেক মহিলাই নিতে পারেন না। কেরিয়ারে উন্নতির জন্য যে সময় ও একাগ্রতা দাবি করে কাজ, মহিলাদের ক্ষেত্রে সেই নিষ্ঠায় ভাগ বসায় সংসার। যদিও সেই গার্হস্থ্য শ্রমে কোনও মজুরি মেলে না, তাকে কাজ বলে গণ্যই করেন না অনেকে। কিন্তু দায়িত্বে বিচ্যুতি ঘটলে ধেয়ে আসে কাজে অবহেলার অভিযোগ। তার ফলে ঘরে বাইরে লাগাতার নিজেকে প্রমাণের দায়িত্ব চেপে বসে মেয়েদের উপরে।
আরও শুনুন:
সুধা মূর্তিকে চাকরি দেননি ইনফোসিস কর্তা স্বামী, অবজ্ঞা নাকি সম্মান জানিয়ে?
একইভাবে অনেক কর্মরতা মহিলা আক্ষেপ করেন, কর্মক্ষেত্রেও নিজেদের প্রমাণ করার জন্য অনেকসময়ই বেশি পরিশ্রম করতে হয় তাঁদের, নিতে হয় বেশি দায়িত্ব পালনের ভার। কারণ মেয়েরা অযোগ্য কিংবা দুর্বল, এমন ভাবনা এখনও পুষে রাখেন অনেকেই। অক্সফ্যাম ইন্ডিয়া থেকে প্রকাশিত ইন্ডিয়া ডিসক্রিমিনেশন রিপোর্ট ২০২২-এ বলা হয়েছিল যে, ভারতে মহিলারা শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতার নিরিখে পুরুষদের সমান হলেও বৈষম্যের শিকার হন। তবে এই সমীক্ষা জানাচ্ছে, ৫৯ শতাংশ মহিলা মনে করছেন, বর্তমানে পেশার দুনিয়ায় পুরুষের সমান সুযোগ সুবিধা পান কোনও মহিলাও। তবে তারপরেও, মেয়েদের কাজের সুযোগ ও উন্নতির জায়গাটি যে এই সময়েও অনেকখানি সমস্যাবহুল, তা অস্বীকার করা যাচ্ছে না।