বিয়ে হয়েছে বহুদিন। কিন্তু সঙ্গীর দিকে মন নেই। বরং অন্য কারও প্রতি টান বেশি। সিনেমার গল্প নয়, বাস্তবেও এমন উদাহরণ রয়েছে ভূরি ভূরি। সমীক্ষা বলছে ভারতে এমন সম্পর্কের দিকেই ঝোঁক ৬০ শতাংশ বিবাহিতর। আর কী জানাচ্ছে এই সমীক্ষা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সম্পর্কে তৃতীয় কারও প্রবেশ কেউই চান না। বিয়ের পর তো নয়ই। কিন্তু সঙ্গী যদি লুকিয়ে এমন কিছু করেন, তাহলে? পরিণতি কী হতে পারে তা, সিনেমা-সিরিয়ালের গল্পে দেখানো হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সিনেমার গল্প যে বাস্তবকে দেখে তৈরি, সেখানে এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের হাল হকিকত ঠিক কেমন! সম্প্রতি, এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে সেই হিসেব।
স্রেফ নিজের চাহিদা মেটাতে সঙ্গীকে ঠকানো, কোনও সমাজই মান্যতা দেয় না। বাইরের দেশে তাও কিছুটা খোলামেলা পরিবেশ থাকে। কিন্তু ভারতের মতো দেশে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে তৃতীয় কারও প্রবেশ অপরাধ হিসেবেই দেখা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এ দেশে পরকীয়া নিয়ে তেমন মাতামাতি থাকবে না, ধরে নেওয়াই যায়। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা একেবারে উলটো। যে দেশে মন্ত্র পড়ে সাত পাক ঘুরে অগ্নি সাক্ষী রেখে একে অন্যকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চল, সেখানেই বিয়ের পর সেসব ভুলতে সময় লাগে মাত্র কয়েক বছর। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো তাও লাগে না। এর মধ্যেই অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বিবাহিতরা। আর সেই সম্পর্ক যৌনতা অবধি পৌঁছতেও খুব বেশি সময় লাগে না। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, এই প্রবণতা ৬০ শতাংশ ভারতীয়-র। বিয়ের পর অন্য কারও প্রতি দুর্বল হয়ে পড়া, এবং সেদিকে নিজেকে ঠেলে দেওয়ার সংখ্যা বাড়ছে উত্তরোত্তর। আসলে, এই সমীক্ষা আয়োজন করেছিল জনপ্রিয় এক ডেটিং অ্যাপ সংস্থা। তাঁদের মূল কাজই বিবাহিতদের নতুন ‘সুখ’ খুঁজে দেওয়া। এই অ্যাপে বিবাহিতরা স্বচ্ছন্দে অন্য কোনও সঙ্গী খুঁজতে পারেন। তারপর দুজনের সম্মতিতে হতে পারে অনেক কিছু। সাধারণ ডেটিং বলতে যা বোঝায় এক্ষেত্রে তার থেকে বেশি কিছু হবে তা বলাই বাহুল্য।
আর দেশের ৬০ শতাংশ-ই ডেটিং-এর এই অন্য পথে হাঁটতে পছন্দ করছেন। সমীক্ষায় অবশ্য ধরা পড়েছে বিবাহ বহির্ভূত এইসব সম্পর্কের কিছু ধরণ। যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে মানসিক শান্তি খোঁজার বিষয়টা। জানা যাচ্ছে, প্রায় ৫২ শতাংশ মানসিক শান্তি খোঁজার উদ্দেশ্য নিয়েই এই পথে হাঁটেন। সেক্ষেত্রে যৌনতা প্রাধান্য পায় পরে। আগে একে অন্যের মনের কথা জানা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করেন সকলে। এভাবেই এগোতে থাকে সম্পর্ক। অনেক ক্ষেত্রে, বর্তমান সঙ্গীকে নিয়ে হওয়া অশান্তিও অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে। এছাড়া আরও এক বিশেষ কারণ রয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, একঘেয়েমি। কিংবা প্রথম থেকেই সঙ্গীকে পছন্দ নয়। তাই কল্পনায় এসেছে অন্য কেউ। যার মানসিকতা, শরীরের গঠন, কিংবা আরও কিছু বর্তমান সঙ্গীর থেকে বেশ খানিকটা আলাদা। বরং ওই কল্পনা করা হয়েছে যেমনটা, ঠিক তেমন। এমন কাউকে বাস্তবে খুঁজে পেলেই সেদিকে সম্পর্ক গড়ার আশা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন ৩৩-৩৫ শতাংশ। একইসঙ্গে রয়েছে ভার্চুয়াল জগতের বিশেষ উপস্থিতিও। সেখানে সকলের অবাধ বিচরণ। মন্তব্যের ক্ষেত্রেও লাগে না ট্যাক্স। তাই দেদার চলে ভার্চুয়াল ফ্লার্টিং। এর থেকেও অনেক সময় অন্য ধরনের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। আর সেই সংখ্যাটা প্রায় ৩৬ শতাংশ। সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, সিনেমা-সিরিয়ালের গল্পের মতোই বাস্তব জীবনটাও কাটাচ্ছেন ৬০ শতাংশ ভারতীয় বিবাহিত। সবথেকে আশ্চর্যের বিষয়, এই নিয়ে কোনও আক্ষেপও নেই কারও। সকলেই যা করছেন জেনে বুঝে করছেন। নেই কোনও অনুশোচনাও। হয়তো সরাসরি সঙ্গীকে কিছু জানতে দিচ্ছেন না, তাই বলে অন্য কেউ এই কথা জানলে তেমন সমস্যা নেই।