স্বপ্নপূরণের ক্ষেত্রে বয়স যে কোনও বাধা নয়, তা ফের প্রমাণ করে দিলেন তিনি। অভাবের সংসারে চিকিৎসক হওয়ার মতো সঙ্গতি ছিল না। বরং সংসারের জোয়াল টানতে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল লাঙল। তবে স্বপ্নের পিছু ছাড়েননি তিনি। বয়স, অর্থ সব বাধা কাটিয়ে তাই ফের ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসলেন এই ব্যক্তি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তাঁর কথা।
পরিস্থিতির চাপে অনেক সময়ই স্বপ্নের হাত ছাড়তে হয় আমাদের। সংসারের হাজার রকম ঝামেলায় কোথায় যেন চাপা পড়ে যায় সেইসব স্বপ্নেরা। তার আর খোঁজ মেলে না। তবে তামিলনাড়ুর এই ব্যক্তি কিন্তু তেমনটা হতে দেননি। বরং হাজার রকম অর্থাভাব, সংসারের চাপ, নিত্যনৈমিত্তিক দায়িত্ব, তার মধ্যে সযত্নে লালন করেছেন নিজের স্বপ্নটুকুকে। বয়স ৫৫ পেরিয়েছে। তাতে কী? লোকলজ্জার ভয়, অস্বস্তি সমস্ত কিছু ঝেড়ে ফেলে ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসে পড়েছেন পেশায় কৃষক কে রাজ্যাককোড়ি। সম্প্রতি বেলাম্মল বিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে তিনি দিয়ে এলেন মেডিক্যালের ন্যাশনাল এনট্রান্স এলিজিবিলিটি টেস্ট বা NEET।
আরও শুনুন: অনাবৃষ্টিতে চাষের দফারফা, খোদ ‘বৃষ্টির দেবতা’ ইন্দ্রের নামেই প্রশাসনের কাছে নালিশ কৃষকের
বরাবর ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন রাজ্যাককোড়ি। সুযোগও এসেছিল। কিন্তু স্বপ্নের মধ্যিখানে এসে দাঁড়ায় আর্থিক দুরবস্থা। ১৯৮৪ সালে ওই প্রবেশিকা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন অম্বাত্তিয়ানপাত্তির বাসিন্দা রাজ্যাককোড়ি। একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভরতিও হন। তবে সেসময় খরচা সামলাতে পারেনি তাঁর পরিবার। ফলে বাধ্য হয়েই মাঝপথে ছাড়তে হয় স্বপ্নের হাত। পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্নাতক পাশ করার পর লেগে পড়েন চাষের কাজে। সংসার চালাতে আর কোনও রাস্তাই যে খোলা ছিল না তাঁর কাছে। এতদিন দিব্যি ধামাচাপাই পড়ে ছিল তাঁর ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছেটা। গত বছর ওড়িশার এক ব্যক্তি ৬৪ বছর বয়সে মেডিক্যালের প্রবেশিকায় পাশ করেন। আর তাঁর চেষ্টা দেখে ফের জেগে ওঠে তাঁর ঘুমিয়ে থাকা স্বপ্নটা। আবার বইপত্তর নিয়ে বসে পড়েছিলেন রাজ্যাককোড়ি। তাঁর ছোট ছেলে আর বাসুদেবন ইতিমধ্যেই NEET পরীক্ষা পাশ করেছে। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ৫২১ ব়্যাঙ্ক নিয়ে সরকারি কলেজে এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পেয়েছে সে। ছেলের বইখাতা নিয়ে আরও একবার স্বপ্নের পথে হাঁটা শুরু করেন রাজ্যাককোড়ি। শুরু করে দেন জোরকদমে পড়াশোনা।
আরও শুনুন: ‘জোর করে’ খুলে নেওয়া হল দুই দলিত ছাত্রীর পোশাক, যোগী রাজ্যে কাঠগড়ায় খোদ শিক্ষিকা
অবশেষে পরীক্ষায় বসলেন রাজ্যাককোড়ি। তাঁর পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের পরীক্ষা বেশ ভাল হয়েছে বলেই জানান তিনি। ৪৬০-এর বেশি নম্বর পাওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে তাঁর। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়তে চান ৫৫ বছরের এই ব্যক্তি। তাঁর এই অধ্যবসায় দেখে অবাক নেটদুনিয়া। ইচ্ছা এবং মনের জোর থাকলে, কোনও বাধাই যে বাধা নয়, তা ফের একবার প্রমাণ করে দিয়েছেন তামিলনাড়ুর এই কৃষক।