কোনও রাষ্ট্রে সুশাসন জারি রাখার জন্য রাজার কী দায়িত্ব, তার নীতি বেঁধে দিয়েছিলেন চাণক্য। কিন্তু কেবল রাষ্ট্র নয়, বিবাহ এবং সেই সূত্রে গড়ে ওঠা পরিবারকে সুখে রাখতেও যে এমনই নীতির প্রয়োজন হয়, সে কথাও বলেছিলেন তিনি।
ভারতবর্ষে অর্থনীতি ও কূটনীতির ক্ষেত্রে চাণক্যের দর্শন ভবিষ্যতের কাছেও আলোর দিশারী। রাজার আচরণ কেমন হলে রাজ্যে সুখ শান্তি বজায় থাকবে, সুশাসনের সেই রীতি নীতি বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরিবারও তো আদতে একটা ছোট রাজ্যের মতোই। সেই রাজপাটেও সুশাসনের নীতি প্রয়োজন হয় বইকি। শুধু রাষ্ট্র নয়, সেই ব্যক্তিগত রাজ্যেও কূটনীতি কাজে লাগে। আর সে কথাও মনে করিয়েছিলেন চাণক্য নিজেই। বিয়ের সূত্রে যে পরিবারটি তৈরি হচ্ছে, সেই পরিবারে সুখশান্তির জন্য স্ত্রীকে কেমন ভূমিকা পালন করতে হবে, তার নীতি ঠিক করেছিলেন তিনি।
চাণক্য নীতির এই দিকটি কেমন?
ভালো স্ত্রী হওয়ার জন্য কী কী গুণ আবশ্যক, তার প্রথমেই চাণক্য বলছেন তীক্ষ্ণবুদ্ধির কথা। ‘যে যা বলে সবার কথা মেনে/ নামিয়ে চক্ষু মাথায় ঘোমটা টেনে’ চলাই যে লক্ষ্মী বউ হয়ে ওঠার নিয়ম, এ কথা আদৌ বলছেন না তিনি। বরং বলছেন স্ত্রীকে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে, আর সেই কারণেই বুদ্ধির প্রসঙ্গ টানছেন। কেননা চাণক্যর মতে, যেসব বুদ্ধিমতী নারী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তাঁদের সেই পদক্ষেপ স্বামীর জীবনে উন্নতি ঘটায়।
এই উন্নতির প্রসঙ্গে নারীদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন চাণক্য। রাজ্যের সুখের জন্য রাজাকে যেমন শাসন এবং অর্থনীতির বিষয়ে পটু হতে হয়, তেমনই সংসারেও পরিচালনা এবং আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে পাকাপোক্ত হতে হবে বলেই চাণক্যের মত। এ থেকে এ কথাও বোঝা যায় যে, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মতো স্ত্রীকে দায়িত্বহীন পুতুল সাজিয়ে রাখায় আদৌ মত নেই তাঁর।
ভালো স্ত্রীকে কথা বলতে হবে ভালোভাবে, সে কথাও বলছেন চাণক্য। মায়া মমতা শ্রদ্ধা সংবেদন, এই গুণগুলি যেন কথার মধ্যে প্রকাশ পায়, সচেতন করছেন চাণক্য। একইসঙ্গে জোর দিচ্ছেন নৈতিক চরিত্রে। বিশ্বস্ত থাকার প্রতি। নীতিবোধ এবং আদর্শের প্রতি গুরুত্ব, আর কাজেও সেই সততা ও আদর্শের ছাপ- এইসব মিলিয়েই একজন নারী ভালো স্ত্রী হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করেছেন চাণক্য।
মনে রাখা ভালো, কেবল নারী নয়, বিবাহিত পুরুষের কর্তব্যের কথাও বলেছিলেন চাণক্য। দম্পতির শারীরিক সুখের কথা মাথায় রেখে উভয়ের মধ্যে বয়সের ব্যবধান কম রাখার কথাও তিনিই বলেছেন। সেখান থেকেই মনে হয়, কেবল ভালো স্ত্রী হয়ে ওঠার উপায় বাতলে দিতে চাননি এই প্রখর কূটনীতিবিদ। বরং রাজ্যের মতোই, বিয়েতেও প্রয়োজনমাফিক কূটনীতি প্রয়োগ করে যে সুখ-শান্তি বজায় রাখা সম্ভব, সেই পরামর্শই দিয়েছিলেন চাণক্য।