দেশের যে প্রান্তেই যাওয়া যাক না কেন, একটা না একটা দর্শনীয় মন্দিরের দেখা ঠিক মেলেই। ধর্মপ্রাণ দেশবাসী মন্দির দেখতে ভালোওবাসেন। তবে ধর্মবিশ্বাস বা বিগ্রহদর্শন ছাড়াও এই মন্দিরগুলি আরও একটি বিশেষ কারণে আকর্ষণীয়। তা হল মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী। অপরূপ স্থাপত্যের কারণেই সকলের মন কেড়ে নেয় দেশের বহু মন্দির। প্রাচীনকালের স্থাপত্যকুশলতার নিদর্শন এখনও বহন করে চলেছে এই মন্দিরগুলি। আসুন, এমন কিছু মন্দিরের কথা এখন আমরা শুনে নিই।
অসামান্য নির্মাণশৈলী। যার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়। ভারতবর্ষের মন্দিরগুলি যেন প্রাচীন ইতিহাসকে ধারণ করে রেখেছে শরীরে। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে রাজা-রাজড়াদের নামই ইতিহাসে লেখা থাকে। তবে স্মরণ করতে হয়, সেইসব অসামান্য শিল্পীদের কথাও, যাঁদের কল্পনা-শ্রমে তৈরি হয়েছিল এই অপরূপ স্থাপত্য। এরকমই আশ্চর্য মন্দিরগুলির তালিকায় প্রথমেই রাখতে হয় উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথের মন্দিরটিকে।
আরও শুনুন: মন্দিরের ছাদ থেকে ঝুলছে বিশাল আকারের স্তম্ভ, কোথায় দেখা মেলে এই বিস্ময়ের?
শোনা যায়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৮ হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই মন্দির নাকি তৈরি হয়েছিল সেই মহাভারতের সময়কালে। মন্দির নির্মাণের ইতিহাসেও উল্লেখ পাওয়া যায় পঞ্চ পাণ্ডবের। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এই মন্দিরে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ তীর্থ করতে আসেন। তবে এই মন্দিরের এহেন জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হল এর পরিবেশ। তুষারশৃঙ্গে অবস্থানের দরুণ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় ছাড়া এই মন্দিরে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। তাই বছরের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে এই মন্দির। এমনকী শীতকালে মন্দিরের বিগ্রহটিকেও কিছুটা নীচে সমতলভূমে নামিয়ে আনা হয়। মন্দাকিনী নদীর ধারে অবস্থিত এই মন্দিরটি স্থাপত্যগত দিক দিয়েও অনন্য। এমনকী এই মন্দিরের ভিত্তি এতটাই মজবুত যে ২০১৩ সালের ভয়াবহ বন্যাতেও মন্দিরের মূল অংশের কোনও ক্ষতি হয়নি।
আরও শুনুন: শাহজাহান একা নন, ‘তাজমহল’ বানিয়েছিলেন আরও অনেকেই! কোথায় কোথায় রয়েছে সেগুলি?
এরপরেই বলতে হয় রাজস্থানের ‘বড়া বাগ’ মন্দিরের কথা। এই মন্দির তৈরি করেছিলেন ষোড়শ শতাব্দীর এক রাজা। সম্পূর্ণ রাজকীয় শৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরটি জয়সলমীর শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। বছরভর বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ এই মন্দিরের অসাধারণ কারুকাজ দেখতে ভিড় জমান। বলা হয়, রাজস্থানের রাজপরিবারের ঐতিহ্যকে যথার্থই তুলে ধরে এই মন্দির।
এছাড়াও কোনারকের সূর্যমন্দিরের কারুকাজ রীতিমতো অবাক করে। ওড়িশার এই মন্দিরটি কলিঙ্গরাজের আমলে নির্মিত। রথের আদলে তৈরি এই মন্দিরটি পাথরের তৈরি। মন্দিরের দেওয়ালে রয়েছে পাথর কেটে বানানো ২৪টি বিরাট চাকা। বলা হয় এই মন্দিরটি আসলে সূর্যের রথের প্রতীকী। তাই এই মন্দির থেকে দেখতে পাওয়া সূর্যোদয়ের বা সূর্যাস্তের দৃশ্যও ভারী অদ্ভুত। দিনের এই সময়ে মন্দিরটি সামনে থেকে দেখলে মনে হয় স্বয়ং সূর্য তাঁর রথে চড়ে এগিয়ে আসছেন।
তালিকায় এরপরেই রয়েছে তামিলনাড়ুর মীনাক্ষী মন্দির। উচ্চতার নিরিখে দেশের অন্যান্য মন্দিরগুলির থেকে বেশ এগিয়ে এটি। বলা হয়, দ্রাবিড় শিল্পের অন্যতম প্রধান উদাহরণ এই মন্দির। এর চূড়ায় বিভিন্ন দেবদেবীর মুর্তি খোদাই করা রয়েছে। এই মন্দির নির্মাণের ইতিহাসেও উল্লেখ রয়েছে পঞ্চপাণ্ডবের।
তালিকায় সব শেষে উল্লেখ করা যেতে পারে কর্ণাটকের ভিত্তাল মন্দিরটিকে। হাম্পিতে অবস্থিত এই মন্দিরটি স্থাপত্যের দিক দিয়ে সারা দেশের মধ্যে অনন্য। এমনকি টাকায় বা নোটেও এটির ছবি দেখতে পাওয়া যায়। এই মন্দিরও প্রস্তরনির্মিত। মন্দির চত্বর জুড়ে রয়েছে ছোটবড় থাম। বিভিন্ন আকারের রথ। সর্বোপরি বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই মন্দিরের প্রতিটি অংশেই অসাধারণ শিল্পের ছোঁয়া দেখা যায়।
ভারতীয় শিল্পের উৎকর্ষের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এই মন্দিরগুলি। মানুষ যখন বিগ্রহ দর্শনে এই মন্দিরগুলিতে যান, তখন অলক্ষে কুর্নিশ জানান সেইসব নাম-না-জানা শিল্পীদেরও।