স্নান আমাদের নৈমিত্তিক ব্যাপার। তাঁর যেমন শারীরিক উপকারিতা আছে, তেমন কিছু মানসিক ব্যাপারও জড়িয়ে আছে স্নানের সঙ্গে। বলা হয়ে থাকে, ক্লেদমুক্তি কিংবা অবসাদ দূর করার জন্য স্নান অত্যন্ত জরুরি। আর তাই পুজোপাঠ থেকে শুভকাজ – সবকিছুর আগে অবশ্যই স্নান করে নিতে হয়।
স্নান ব্যাপারটাকে আমরা ভীষণই পবিত্র একটা কাজ মনে করে থাকি। রান্না করতে যাওয়ার আগে, দেবতাকে ভোগ নিবেদনের আগে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে নেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। কিন্তু আসলে কেন? কীভাবে এই স্নানের রীতি এসে পড়ে আমাদের মধ্যে?
আরও শুনুন: Spiritual: শঙ্খধ্বনি কেন মঙ্গলকর? শুভ কাজে শাঁখ কেন বাজানো হয় জানেন?
আমরা এ-জগতের কোনও জীব বা জড়ের সংস্পর্শে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় থাকলে পরস্পরের মধ্যে এনার্জি বিনিময় হয়ে থকে। আমাদের মধ্যে থাকা পজিটিভ বা নেগেটিভ এনার্জি ওই স্থানের ব্যক্তি, ব্যক্তিগণ বা অন্যান্য জীব বা জড়তে থেকে যাওয়া পজিটিভ বা নেগেটিভ এনার্জি দ্বারা সহজেই আকৃষ্ট হতে পারে। ফলে আমাদের মধ্যেকার এনার্জি সিস্টেম সাময়িক ভারসাম্য হারাতে পারে। এজন্যই, লম্বা সফরের পর স্নান করে ফেলা উচিত। তাতে শারীরিক ক্লান্তি যেমন কেটে যায় তেমনই মানসিক ক্লেদও সাময়িক নিষ্কৃতি দেয় আমাদেরে। এই কারণেই ঘুমোতে যাওয়ার আগেও স্নান করা উচিত। এতে আমাদের শরীর থেকে সারা দিনের জমা ক্লেদ সরে যায়। ফলে আপনার ঘুম হয় শান্তির আর দুঃস্বপ্ন দেখার সম্ভাবনাও কমে যায়।
আরও শুনুন: Spiritual: পুজোর সময় প্রদীপ জ্বালানো হয় কেন? এর মাহাত্ম্য কী?
এর পাশাপাশি কোনও শুভ কাজের আগে স্নান করা খুবই জরুরি। রান্না করার আগেও স্নান করে ক্লেদহীন হওয়া জরুরি। তা নাহলে রাঁধুনির মানসিক ক্লেদ পরিবেশিত আহার্যের মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণকারীতে সঞ্চারিত হতে পারে। এভাবে ক্লেদ বা নেগেটিভ এনার্জির স্থানান্তর মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। এ কারণেই ব্রাক্ষণরা অনেকেই স্বপাক খেতে পছন্দ করেন। প্রাচীনকালে অনেক মুনি ঋষিও অত্যন্ত বিশ্বস্ত কারো হাতে ছাড়া খাবার গ্রহণ করতেন না। একই কারণে দেবতাকে ভোগ নিবেদনের আগেও স্নান করে নেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। এতে শুধু আমাদের শরীর শুদ্ধই হয় না, আমাদের পরিমণ্ডলও স্বচ্ছ হয়। আমরা নতুন কিছু পজিটিভ কিছু গ্রহণ করার মত অবস্থা ফিরে পাই। আমাদের মন ও শরীর সুস্থ, স্বাভাবিকভাবে চিন্তা ও বিচার করার স্বাধীনতা পায়। গরম জলে, বা সাবান মেখে রগড়ে রগড়ে গা থেকে ক্লেদ ঘষে মেজে তুলতে হবে, এমনটা নয়। ঠান্ডা শাওয়ারের নীচে কয়েক মিনিট বা ঠান্ডার ধাত থাকলে, ১ বালতি অল্প গরম জল গায়ে ঢেলে নিলেই তা ক্লেদমুক্তির জন্য যথেষ্ট।