কাশ্মীরে দেখা দিলেন দেবী দুর্গা। ঘটালেন এক আশ্চর্য সুন্দর সমন্বয়ও। অবাক হচ্ছেন শুনে? তাহলে আসুন, শুনে নেওয়া যাক পুরো গল্পটাই।
আর মাত্র কদিন। তারপরেই ঢাকে পড়বে কাঠি। মণ্ডপে আসবেন দুর্গাপ্রতিমা। পুজোর সাজে সেজে উঠবে বাংলা। আর এমন পুজো পুজো আবহাওয়ার মধ্যেই মিলল দুর্গা আসার খবর। তবে বাংলায় নয়, কাশ্মীরে। জানা গেল, তাঁর বয়স নাকি গুনে গুনে ১২০০ বছর!
খুলেই বলি।
আরও শুনুন: Lucknow-এর রামায়ণ যোগ, লক্ষ্মণের নাম থেকেই কি হয়েছে নামকরণ?
শ্রীনগরের পান্দ্রেথান নামে এক জায়গা। ঝিলম নদী বয়ে যাচ্ছে সেখান দিয়ে। নদী থেকে বালি তোলার কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। হঠাৎই বালির সঙ্গে উঠে আসে একটি ভাস্কর্য। বালি ঝেড়েঝুড়ে তাঁরা তো অবাক। দেখা গেল সেটি যে কোনও ভাস্কর্য নয় মোটেই। সেটি আসলে একটি দেবীমূর্তি। কষ্টিপাথরে খোদাই করা মূর্তিটির দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ৮ ইঞ্চি। দেবী সিংহবাহিনী। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও চারজন পার্শ্বচর। মূর্তিটি যে যথেষ্ট পুরনো এ কথা বোঝা যাচ্ছিল সেটি দেখেই। ভাগ্যিস, ভাস্কর্যটির শরীরে যতই সময়ের ছাপ পড়ুক, তা অন্তত চেনার অবস্থায় ছিল। নয়তো তাকে আবর্জনা মনে করে হয়তো ফেলেই দিতেন ওই শ্রমিকেরা। কিন্তু অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মতো সে দুর্ভাগ্য হয়নি এই মূর্তিটির। কিংবা প্রাচীনত্বের নিরিখে দাম আন্দাজ করে মূর্তিটিকে নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখার মতো কাজও করেননি কেউ। বরং ১৩ আগস্ট এই মূর্তিটি উদ্ধার করার পর খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। খানসাহিব এলাকা থেকে মূর্তিটিকে নিজেদের অধিকারে নেয় বুদগাম পুলিশ।
আরও শুনুন: পাক তীর্থস্থানে আশ্চর্য সম্প্রীতি, হিন্দুর কোট্টারি দেবীই হয়ে ওঠেন মুসলমানের ‘নানি’
মূর্তিটি নিয়ে আসার পর পুলিশের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয় পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের সঙ্গে। শুরু হয় পরীক্ষানিরীক্ষা। অবশেষে জানা যায় মূর্তিটি প্রায় ১২০০ বছরের পুরনো। মূর্তিটিকে দেবী দুর্গার বলে শনাক্ত করা হয়। এবং জম্মু ও কাশ্মীরের ‘Archives, Archaeology and Museums Department’ চূড়ান্ত রায় দেয়, মূর্তিটির সময়কাল সপ্তম বা অষ্টম শতাব্দী।
দেবী দুর্গার প্রাচীন মূর্তির সন্ধান পাওয়া নিশ্চয়ই ঐতিহাসিক এবং পুরাতাত্ত্বিকদের ক্ষেত্রে নতুন কোনও গবেষণার দিগন্ত খুলে দেবে। কিন্তু এই ঘটনার মধ্যে যে মানবিক দিকগুলি রয়ে গেল, তাও তুচ্ছ করার মতো নয়। একদিকে যেমন রইল কয়েকজন দরিদ্র মানুষের নির্লোভ আচরণ, অন্যদিকে রইল সমন্বয়ের এক অদ্ভুত দৃষ্টান্ত। পুলিশের যে অফিসার মূর্তিটি পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের হাতে তুলে দেন, তাঁর নাম তাহির সালেম খান। এবং পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের পক্ষ থেকে যে ডেপুটি ডিরেক্টর মূর্তিটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তাঁর নাম মুশতাক আহমদ বেগ। আজকাল যে কোনও ছুতোতেই যেভাবে ধর্ম নিয়ে অস্বাভাবিক হানাহানি তৈরি হচ্ছে, সেখানে এমন ঘটনা মনে করিয়ে দেয় যেন বাংলার কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির সেই গান, “আমার খোদা যে, হিন্দুর হরি সে”।