বই পড়ার অভ্যাস নাকি দিনে দিনে কমছে! নানা দিকে কান পাতলে এমন কথাই শোনা যায়। আর সেই আবহে ব্যতিক্রমী নজির এক স্কুলপুড়ুয়ার। নিজের হাতে ৭টি লাইব্রেরি করে ফেলেছে ১১ বছরের ছাত্রীটি। আসুন শুনে নিই তার কথা।
এই কিছুদিন আগের কথা। গ্রাম-মফস্সলের পাড়াগুলোর দিকে তাকালে একটা জিনিস সবার চোখে পড়ত। ছোট্ট একটা লাইব্রেরি। লাইব্রেরির পাশেই এক চিলতে মাঠ। পড়াশনার সে এক মুক্ত পরিসর। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে বটেই, পাড়ায় পাড়ায় থাকা সেই সব পাঠাগারের বইপোকাদের ভিড় করার স্মৃতি এখনও আমাদের অনেকের কাছেই টাটকা। স্মৃতি এই কারণে যে, দুর্ভাগ্যবশত সেই সব লাইব্রেরিদের দরজা এখন অনেক ক্ষেত্রেই বন্ধ। বইপোকার সংখ্যাও কমেছে। কর্মীর অভাব তো আছেই। আগ্রহ আর উৎসাহের অভাবই যেন বেশি। আর সেই ঠেলায় লাইব্রেরির সংস্কৃতি প্রায় উঠে যেতেই বসেছে। নেহাত অ্যাকাডেমিক কাজের প্রয়োজন ছাড়া লাইব্রেরি যাওয়ার রীতিও কমে এসেছে। ঠিক এই আবহেই একেবারে অন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে বছর এগারোর খুদে বইপোকা আকর্ষণা সতীশ। নিজের হাতে ইতিমধ্যেই ৭টি লাইব্রেরি তৈরি করেছে সে। এখন তার লক্ষ্য দশটি লাইব্রেরি তৈরি করা।
আরও শুনুন: AI রাজত্বেও হারাতে হবে না চাকরি! কোন কোন কর্মক্ষেত্রে কখনও হানা দেবে না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা?
তরুণদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ ক্রমশ কমছে। এমন একটি অভিযোগ আজকাল প্রায়ই শোনা যায়। তা অমূলক নয়। আবার এ-ও বলতে হয় যে, পড়াশোনার মাধ্যমও গিয়েছে পালটে। ছাপা বইয়ের বদলে অনেকেই হাতে তুলে নিয়েছে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে পাওয়া বই। ফলত পড়ার আগ্রহ থাকলেও একটা প্রজন্ম আর কিছুতেই লাইব্রেরিমুখো হচ্ছে না। একটা সময় ছিল, যখন আট থেকে আশি সকলেই লাইব্রেরিতে যেতেন। নিজের পছন্দের বইপত্র নিয়ে আসতেন বাড়িতে। কাজের পড়ার বাইরেও, অন্য পড়াশোনা, বিশেষত গল্প-উপন্যাস পড়ার চল তখন অনেকটাই বেশি ছিল। বলা যায়, বই ছিল বহু মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রথমে টিভি, আর পরে মোবাইল এসে সেই অভ্যাসে থাবা বসিয়েছে। বই পড়া যে উঠে গিয়েছে তা নয়। তবে তা অনেকটাই কমে গিয়েছে, এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। আর ঠিক সেই জায়গাতে দাঁড়িয়েই আকর্ষণার কাজ যেন বয়ে এনেছে খোলা হাওয়া।
আরও শুনুন: লটারি কিংবা গুপ্তধন নয়! বাবার পুরনো পাসবই খুঁজে পেয়েই রাতারাতি কোটি হলেন ব্যক্তি
নিজের সাধ্যমতো ছোট ছোট খান সাতেক লাইব্রেরি তৈরি করেছে এই বছর এগারোর বইপোকা। নিজে বই পড়তে ভালবাসে। বইয়ের পাতায় পাতায় অজানাকে জানার যে হাতছানি, তা তাকে বুঁদ করে রাখত। খুব ইচ্ছে ছিল যে, নিজের সেই ভাল-লাগা যেন অন্য অনেকের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু উপায় কী! জনে জনে তো আর হাতে গিয়ে বই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। অতএব শুরু লাইব্রেরি তৈরির ভাবনা। নিজের সংগ্রহে ছিল অনেক বই। এ ছাড়া বাড়ির বড়দের থেকে চেয়েচিন্তে, আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের থেকে জোগাড় করে বেড়েছে বইয়ের সংখ্যা। এখন তার সংগ্রহে থাকা বইয়ের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। এই এত বই দিয়েই সে নানা জায়গায় ছোট ছোট লাইব্রেরি তৈরি করেছে। সাত নম্বর লাইব্রেরিটি হয়েছে হায়দরাবাদ শহরের এক স্কুলে। মেয়ের কাজে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তার বাবাও। তার একটাই ইচ্ছে, যে বই পড়তে চায়, সে যেন হাতে বই পায়। বই না পাওয়ার দরুন যেন কারও পড়াশোনা থমকে না যায়। অতএব নিজের লাইব্রেরিতে শিক্ষামূলক বইও সে রেখেছে। এমন অনেক বাচ্চা আছে, যাদের পড়াশোনার সাধ থাকলেও সামর্থ্য নেই। তারা আকর্ষণার লাইব্রেরি থেকে বই নিয়েই নিজেদের ইচ্ছে পূরণ করতে পারে। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে এগোতে এগোতে ইতিমধ্যে সাত-সাতটি লাইব্রেরি তৈরি করে ফেলেছে আকর্ষণা। তার লক্ষ্য, আপাতত মোট দশটি লাইব্রেরি তৈরি করা।
যে সময়ে বই পড়ার অভ্যাসই ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে, তখন আকর্ষণার মতো বইপোকার এই লড়াকু উদ্যোগ যে আশার আলো দেখায়, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।