পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবী যমজ। পেরিয়েছেন শতবর্ষও। আর সেই কারণেই গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠল তাঁদের। কারা তাঁরা? তাঁদের বয়সই বা কত?
১৯১৩ সালের নভেম্বর মাসে যখন নোবেল পুরস্কারের মঞ্চে নাম ডাকা হচ্ছে প্রথম কোনও ভারতীয়ের, তার মাত্র কয়েক দিন আগে জাপানে ঘটে গেছে একটি ছোট্ট ঘটনা। ছোট ঘটনা-ই। সারা পৃথিবী জুড়ে প্রতিদিনই তো কারও না কারও জন্ম হয়। সে আর বেশি কথা কী! কিন্তু সেই জন্মদিনটি যে একদিন গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই করে নেবে, সে কথা তখন কে ভাবতে পেরেছিল!
আরও শুনুন: মাছ ভালোবাসতেন সাহেবরাও, বর্ষার কলকাতায় বেরোতেন মাছ ধরতে
খুলেই বলি।
পশ্চিম জাপানের সোদোশিমা দ্বীপে জন্মেছিলেন দুই বোন। উমেনো সুমিয়ামা এবং কওমে কোদামা। সেটা ১৯১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এগারো জন ভাইবোনের মধ্যে তাঁরা তৃতীয় এবং চতুর্থ। নাকি, যুগ্মভাবে তৃতীয় বলব? কারণ, তাঁরা তো যমজ। ছোটবেলায় স্কুলে এই নিয়ে ঠাট্টা ইয়ার্কিও শুনতে হত তাঁদের। অবশ্য তার মেয়াদ বেশিদিন ছিল না। স্কুলজীবন শেষ করার পরেই কাজের সূত্রে দুই বোন আলাদা হয়ে যান। কোদামাকে পরিচারিকার কাজ করতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দক্ষিণ জাপানের একটি মূল দ্বীপ ক্যুশু-তে। আর সুমিয়ামা রয়ে যান তাঁর জন্মস্থানেই। নিজেদের জীবন, কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ততার কারণে তাঁদের খুব বেশি দেখাও হত না। ৭০ বছর বয়সে পৌঁছনোর পর চাকা ঘোরে। একসঙ্গে তীর্থ করার উদ্দেশ্যে জাপানের ৮৮টি শিকোকু মন্দির পরিভ্রমণ করতে শুরু করেন তাঁরা। আর এবার একসঙ্গেই এক বিরল রেকর্ডের অধিকারী হলেন তাঁরা। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক যমজ। এই কারণেই গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠল তাঁদের। তাঁদের বয়স শুনলে চমকে উঠবেন! ১০৭ বছর পেরিয়ে আরও ৩৩০ দিন!
আরও শুনুন: এখানে ১২ বছর বয়স হলেই মেয়েরা হয়ে যায় ছেলে, জানেন সেই আজব গ্রামের কথা?
জাপানের অধিকাংশ মানুষ এমনিতেই দীর্ঘায়ু হন। স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সে দেশের সাড়ে বারো কোটি জনসংখ্যার মধ্যে কমবেশি ২৯ শতাংশ মানুষের বয়স ৬৫ বছর বা তারও বেশি। আর তার মধ্যে ১০০ বছরের ঘরে পা দিয়েছেন কত মানুষ জানেন? ৮৬ হাজার ৫১০ জন! সুতরাং এই দুই বোনও মাঝে মাঝেই নিজেদের নিয়ে মজা করতেন যে, এর আগের দীর্ঘজীবী যমজের রেকর্ড হয়ত ভেঙে দিতে চলেছেন তাঁরাই। সেই রেকর্ডটিও অবশ্য ছিল জাপানেরই অধিকারে। কিন নারিতা এবং জিন কেনি, দুই যমজ বোনের নামে ছিল এই রেকর্ড। তখন তাঁদের বয়স ছিল ১০৭ বছর ১৭৫ দিন। কিন্তু চলতি বছরের পয়লা সেপ্টেম্বরই তাঁদের রেকর্ড ভেঙে দিলেন উমেনো সুমিয়ামা এবং কওমে কোদামা।
আর কাকতালীয় ভাবে, যেদিন তাঁরা এই রেকর্ড গড়ার স্বীকৃতি পেলেন, সেই দিনটিকে জাপানের জাতীয় ছুটির দিন। বৃদ্ধদের সম্মান জানাবার উদ্দেশ্যে এই দিনটিকে বরাদ্দ করেছে জাপান।