বিশাল এক দেবদূতের মূর্তি। পিঠে ছড়ানো দুই ডানা। অথচ তাঁর মুখে কত যন্ত্রণা। হবে নাই বা কেন? তাঁর গায়ে যে বিঁধে আছে এক লক্ষ ছুরি। যার মধ্যে বেশ কয়েকটা ছুরির গায়ে সত্যিকারের রক্তও লেগে আছে। কোথায় আছে এমন মূর্তি? এরকম অদ্ভুত মূর্তি তৈরির কারণটাই বা কী? আসুন শুনে নিই।
এক লক্ষ ছুরি। যেগুলোর প্রত্যেকটাই ব্যবহার করা হয়েছে কোনও না কোনও অপরাধে। বেশ কয়েকটা ছুরির গায়ে লেগে থাকা রক্ত সহজেই তার প্রমাণ দেয়। আর এই এতগুলো ছুরি দিয়েই তৈরি করা হয়েছে এক বিশেষ মূর্তি। যার নাম ‘নাইফ অ্যাঞ্জেল’।
আরও শুনুন: কেউ যুদ্ধ করেছেন, কেউ সামলেছেন সিংহাসন… ভারতীয় মুদ্রায় কুর্নিশ জানানো হয়েছে যে নারীদের
ছোট্ট একটা শব্দ। অথচ কী সহজে একটা জীবন কেড়ে নিতে পারে ‘ছুরি’। সেই আদ্যিকাল থেকে, কতই না হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী থেকেছে এই ‘অস্ত্র’। যদিও তা কেবলই যে অস্ত্র, এ কথা বলা যায় না। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তো তাকে সেভাবেই চিনে এসেছে। কোথাও বিপদ বোঝাতেও সহজেই ব্যবহার করা যায় একটা ছুরির প্রতীক। আবার সহজলভ্য এই ছুরি ব্যবহার করেই ঘটানো অপরাধের পরিমাণও কম নয়। এইসব দেখেই এক অভিনব চিন্তা মাথায় আসে ব্রিটেনের এক সংস্থার। ওই সংস্থার কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, ছুরি দিয়ে হওয়া অপরাধ কমানোর জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু গোটা দেশে ছুরি নিষিদ্ধ করে দেওয়া তো সম্ভব নয়। তাহলে কী করা সম্ভব, সে কথা ভাবতে গিয়েই নজিরবিহীন এক পদক্ষেপ করে ওই সংস্থা।
ছুরিকাঘাতের পালটা হিসাবে তাঁরা ঠিক করেছিলেন, একটি মূর্তির মাধ্যমেই অহিংসার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু অহিংসার বার্তা দেয় এমন মূর্তি তো অনেক রয়েছে। তাই নতুন মূর্তিটি বানানোর জন্য এক বিশেষ উপকরণের কথা ভাবেন তাঁরা। মূলত যে ছুরি দিয়ে কাউকে খুন করা হয়েছে, বা যেসব ছুরি কোনও না কোন অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, সেইরকম ছুরি দিয়েই মূর্তিটি তৈরি করার কথা ভাবেন তাঁরা।
আরও শুনুন: ১৮ বছর পর্যন্ত নিরক্ষর, অদম্য মনের জোরে কেমব্রিজে অধ্যাপক হলেন ব্যক্তি
তবে একটা দুটো নয়। প্রায় এক লক্ষ ছুরি দিয়ে একটি ২৭ ফুটের মূর্তি বানায় ওই সংস্থা। দেশের বিভিন্ন শহরের পুলিশ স্টেশন থেকে এইসব মারণাস্ত্র সংগ্রহ করেন তাঁরা। মূর্তিটির নাম দেওয়া হয় ‘নাইফ অ্যাঞ্জেল’। সত্যিই এক ডানাওয়ালা দেবদূতের আদলে তৈরি এই মূর্তি। তবে মূর্তির মুখে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যন্ত্রণার ছাপ। এইসব ছুরির আঘাতে ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছেন আক্রান্তরা, সে কথাই যেন মনে করিয়ে দেয় ওই দেবদূত। আপাতত মূর্তিটি দেশের কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় স্থাপন করা হয়নি। বদলে বিভিন্ন শহরে ঘোরানো হয় মূর্তিটিকে। আর এইভাবে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে ঘুরেই অহিংসার বার্তা দিয়ে চলে ওই দেবদূত। যেন লিটল প্রিন্সের সেই রাজকুমারের মূর্তির মতোই, পৃথিবীর বুক থেকে সব দুঃখ যন্ত্রণা মুছে নিতে চায় সে। আর সেই শুভবোধের ছোঁয়াতেই একদিন থেমে যাবে অপরাধের প্রবণতাও, এমনটাই বিশ্বাস তার নির্মাতাদের।