এক রথযাত্রার দিনে যে গল্প শুরু হয়েছিল, এবার রথের দিনে শুনে নেওয়া যাক সে গল্পই। রথযাত্রায় সংবাদ প্রতিদিন শোনো-র বিশেষ নিবেদন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারাণী’।
গ্রন্থনা: রণিতা চট্টোপাধ্যায়
সূত্রধার: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
অভিনয়: চৈতালী বক্সী, শঙ্খ বিশ্বাস, রণিতা চট্টোপাধ্যায় ও শুভদীপ রায়
শব্দগ্রহণ ও সম্পাদনা: অঙ্কুর নন্দী ও শঙ্খ বিশ্বাস
অলংকরণ: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
নামাঙ্কন: সম্বিত বসু
এই গল্পটা ছোট্ট মেয়ে রাধারাণীর। ঠিকই ধরেছেন, সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে মেয়েটির কথা আমাদের শুনিয়ে গিয়েছিলেন। আপনাদের কি মনে পড়ছে তার কথা? একটু খেয়াল করে দেখুন। ওই যে মাহেশের রথ বসেছে। চারিদিকে লোকে লোকারণ্য। রথ বোধহয় ভাবছে আমিই দেব, পথ বোধহয় ভাবছে আমি! আর সেসব শুনে অন্তর্যামী বুঝি একাই হাসছেন। ওই রথের মেলাতেই মালা হাতে যে বছর এগারোর মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে, ওই-ই রাধারাণী।
রাধারাণীদের এরকম দুরবস্থা আগে ছিল না। মানে, মেলায় এসে মালা বিক্রি করে টাকা রোজগারের মতো গরিব ওরা কোনও কালেই ছিল না। বেচারির বাবার মৃত্যু হল অসময়ে। আর যা সব জ্ঞাতিগুষ্টি! তাদের সঙ্গে মামলায় রাধারানির মা প্রায় সর্বস্ব খুইয়ে বসলেন। ভদ্রাসনটুকুও থাকল না। মেয়ের হাত ধরে মা-কে বাড়ি ছেড়ে একদিন বেরিয়ে যেতে হল। এখন হাল এমন যে, রোজের ভাতই জোটে না। তার উপর রাধারানির মা পড়েছেন অসুখে। বাচ্চা মেয়ে কী আর করে! বনফুলের মালা গেঁথে বিক্রি করতে এসেছে এই রথের মেলায়। এত এত লোক এসেছে মেলায়, পুণ্যের লোভে। ঠাকুরকে দেওয়ার জন্য কেউ কি আর মালা নেবে না!
কিন্তু ওই কথায় বলে না, কপাল খণ্ডাবে কে! মালা তো বিক্রি হলই না। রথে টান দিতে না দিতেই আকাশ ভেঙে নামল বৃষ্টি। ঘন বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে চারিদিক যেন অন্ধকার। সেই দুর্যোগের মধ্যে বাড়ি ফেরার পথ ধরল রাধারাণী। পথ পাবে কি না, শঙ্কা মনে। এমন সময় কে যেন তার গায়ের উপর এসে পড়ল। উদ্বেগে, আতঙ্কে এবার আর নিজেকে সামলাতে পারল না রাধারাণী, ডুকরে কেঁদেই উঠল…
আগন্তুক – কে গো তুমি কাঁদো?
রাধারাণী – আমি, আমি খুব গরিব। আমার কাছে কিছু নেই… আমায় ছেড়ে দাও…
আগন্তুক – ভয় পেয়ো না, ভয়ের কিছু নেই। আমি খারাপ লোক নই। তুমি কোথায় গিয়েছিলে? কোথায় যাবে?
রাধারাণী – রথ দেখতে গিয়েছিলাম… বাড়ি যাব, আমার মা একা বসে আছে… আমি, আমি অন্ধকারে পথ চিনতে পারছি না…
আগন্তুক – তোমার বাড়ি কোথায়?
রাধারাণী – শ্রীরামপুর…
আগন্তুক – আমিও শ্রীরামপুরেই যাব। তুমি আমার সঙ্গে এসো। কোথায় তোমার বাড়ি বলে দাও। আমি পৌঁছে দিচ্ছি। বড় পিছল। আমার হাত ধরো, নইলে পড়ে যাবে।
এক রথযাত্রার দিনে যে গল্প শুরু হয়েছিল, এবার রথের দিনে শুনে নেওয়া যাক সে গল্পই। রথযাত্রায় সংবাদ প্রতিদিন শোনো-র বিশেষ নিবেদন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারাণী’। শুনে নিন সম্পূর্ণ কাহিনি।