আত্মার বিনাশ নেই, আত্ম’র বিলোপও সহজ নয়। মৃত্যু পেরিয়েও তাই ব্যক্তি আছে ধরে নিয়েই বলছি, সাক্ষাৎকারে ব্যক্ত মতামত ভূতেদের ব্যক্তিগত। আমরা নগণ্য মানুষ মাত্র!
এর যে এমন চমকপ্রদ একটা দিক থাকতে পারে আগে ভাবিনি।
দিন কয়েক আগে অফিসের সিকিউরিটি বিভাগের তুহিনের ফোন, ‘আজ আপনাদের কোনও কাজ চলছে?’ তখন মাঝরাত প্রায়। ঈষৎ বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘কাজ আছে তোমায় কে বলল?’ খুব ক্যাজুয়ালি সে বলল, স্টুডিওয় আলো জ্বলছে, তাই বললাম।’ রাতবিরেতে আমাদের কাজকর্ম হয় বটে। তবে সেদিন ছিল না। বুঝলাম, আমাদের টিমের শঙ্খর কাজ। মাঝেমধ্যেই সে ভুলোমনে আলো, কমপিউটর জ্বালিয়ে রাখে। দেখে মনে হয়, স্টুডিও চালু।
পরদিন অফিসে গিয়ে আবার একই প্রশ্ন। এবার টিমের অঙ্কুর- ‘কাল রাতে আমাদের কাজ হয়েছে, বলোনি তো?’ ভুরু কুঁচকে বললাম, ‘কী হয়েছে বল তো? রাতে ঘুম হয়নি!’ সে বিড়বিড় করে, ‘আমার না তোমার?’, বলতে বলতে কমপিউটরে বসে আর একটা রেকর্ড দেখিয়ে বলে, ‘এটা কী?’
রুদ্ধশ্বাসে শুনি। এমন একটা রেকর্ড যে শোনো-র স্টুডিওতে হয়েছে আমি জানিই না। গলা শুনে মনে হল আমাদের টিমের সিনিয়র সদস্য সুযোগদা আর চৈতালীর। দু’জনকেই ফোন করে বললাম, ‘ভালো সারপ্রাইজ দিলে!’ উলটে দেখি ওরাই সারপ্রাইজড! কে রসিকতা করছে বুঝলাম না। কেউ বা কারা যে ওদের মতো গলা করেই রেকর্ড করেছে, সন্দেহ নেই। অথচ কেউ ঘুণাক্ষরে এ বিষয়ে কিছু জানে না। অদ্ভুত! রণিতা, শুভদীপকে জিজ্ঞেস করলাম। বলল, আগের দিন বেরোনোর সময় ওরা স্টুডিওর আলো বন্ধই দেখে গেছে। মাঝরাতের ফোনটার তাহলে কী অর্থ হতে পারে!
ধন্দে পড়ে গেলাম। সব শুনে সম্বিত আর অরিঞ্জয় বলল, রেকর্ডে যা আছে তা সকলকে শোনানোই ভালো। ভালো জিনিস শোনানো ছাড়া শোনো-র আর কী কাজ থাকতে পারে! অতএব থাকল এই সাক্ষাৎকার। অদ্ভুত এবং অ-মানবিক।
একটা কথা শুধু শেষে বলার, আত্মার বিনাশ নেই, আত্ম’র বিলোপও সহজ নয়। মৃত্যু পেরিয়েও তাই ব্যক্তি আছে ধরে নিয়েই বলছি, সাক্ষাৎকারে ব্যক্ত মতামত ভূতেদের ব্যক্তিগত। আমরা নগণ্য মানুষ মাত্র!