ছোটবেলার ট্রেন স্টেশন ছেড়েছে অনেকদিন। রিটার্ন টিকিট নেই। স্মৃতির গায়ে তবু ফেরার ডাক। সেইসব জমানো চিঠিতেই শোনো-র ডাকঘর। পড়ে-শুনে নিন।
আজ দুপুরে অফিসের কিউবিকলে বসে তোর কথা মনে পড়ল। কতদিন দেখা হয় না আমাদের। তোর আর আমার দুপুরবেলাগুলো কত আলাদা। তোর তো কাজ ছিল না তেমন কোনও। অলস দুপুরে
বাড়িময় ঘুরে বেড়াতে বড্ড ভালো লাগত তোর। মাঝে মাঝে আলনা থেকে মার শাড়ি নিয়ে এলোমেলো করে দিতিস। মা সঙ্গে থাকলেও শাড়ির মধ্যে লেগে থাকা মা মা গন্ধটা তোর বড্ড প্রিয় ছিল, আমি জানতাম।
আর সেই বাগানময় যখন কুবকুব পাখিটা গরমের দুপুরে ডেকে উঠত, তোর মন কেমন করে উঠত, আমায় বলেছিলি সে-কথা। এখন কি আর দেখতে পাস সেসব? তখন বাড়ির প্রত্যেকটা
খাটের তলায় ছিল তোর রাজত্ব। সেখানে কত মণিমুক্তো। মা-বাবার বিয়ের কার্ড, পুরনো সোলার কুকারটা, চিঠি, কবেকার পুজোসংখ্যা সব গা জড়াজড়ি করে পড়ে থাকে। সেখানে বসেই লুকিয়ে পড়ে
ফেলেছিলি সুনীলের প্রেমের উপন্যাস। সত্যি বড্ড পাকা ছিলি তুই!
অবশ্য ওই বয়সে এরম একটু-আধটু সব্বাই করে। সেসময় ছেলেমানুষিটা ঠিক পোষায় না, তাই না?
তোর তো রোজ মনে হত, কবে বড় হব, চাকরি করব। খাটের ওপর বালিশদের সাজিয়ে গম্ভীর মাস্টারমশাই সাজতে বেশ লাগত তখন, তাই না? আজ আমি যখন গম্ভীর মুখে ক্লাসরুমে রোজ দিদিমণি সাজি তখন তোর কথা বড্ড মনে পড়ে জানিস। নিজের মনেই হেসে ফেলি আবার কোনও কোনোদিন বুকের ভেতরটা অল্প চিনচিন যে করে না, তা নয়। জানিস অঙ্কটা আমি এখনও মেলাতে পারি না। নিয়ে বসে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
একদিন আসবি? দু’জনে মিলে আমাদের না-মেলা অঙ্কটা ফের নিয়ে বসতাম আর একটিবার। গোড়া থেকে। এবার হয়তো মিলতেও পারে।
ইতি
তোর মধুমিতা