এই চেহারায় এইটুকু খাবার! না না ওকে কেন ডাকছিস, ও অনেক খায়! ধুস তোর সঙ্গে কী বেরোব, তুই হলি গিয়ে থলথলে কুমার… রোজকার রুটিনে এইসব কথা শোনা অনেকেরই অভ্যেস। তাঁরা আদৌ মোটা কি না সেই প্রশ্ন আলাদা। তবে এই ধরনের মন্তব্য তাঁদের মনে মনে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে, আমি মোটা! আসুন শুনে নেওয়া যাক।
খুদেমহলে ‘ডোরেমন’ খুব জনপ্রিয় এক কার্টুন। সবার কাছে হাসির পাত্র হওয়া নোবিতার গল্প। সেখানে জিয়ান নামে এক চরিত্র রয়েছে। যাকে কেউ পছন্দ করে না। কারণ অবশ্য একাধিক। তার বিশালবপু চেহারা। সেই কারণে তার ‘ক্ষমতা’ অনেক বেশি। কার্টুনে নজরে দেখলে এতে হাস্যরস ছাড়া কিছুই মিলবে না। কিন্তু যেসব খুদেরা এই কার্টুন দেখে, তাঁদের অনেকেই আশেপাশে থাকা ‘জিয়ান’দের খুঁজে বের করে। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে তার সঙ্গে মেশে। আর যাই হোক সে বন্ধু নয়। কারণ তার চেহারা ভারী।
আরও শুনুন:
ভ্রূ সুন্দর করতে গিয়েই ফুসফুসের রোগ! বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
ডাক্তারির ভাষায়, স্থূলতা অবশ্যই রোগ। তবে তার নির্দিষ্ট মাপ আছে। একজন চিকিতসকই বলতে পারেন ওবেসিটি কার জন্য সমস্যার হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হওয়া উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম আর খাওয়া দাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ রাখলেই বাড়তি ওজন ঝড়িয়ে ফেলা সম্ভব। কিন্তু এই রোগ যদি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর হয়ে ওঠে তাহলে তা অবশ্যই সমস্যার। বিষয়টা অবশ্য রোগা-মোটা নিয়ে নয়। গোটাটাই কাউকে ছোট করে নিজেকে মহান প্রমাণ করার। এতে কী আনন্দ স্রেফ ব্যঙ্গকর্তাই জানেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যার বিদ্রূপ হচ্ছে তিনি মোটেও ব্যাপারটা সহজভাবে নেন না। আত্মবিশ্বাসটুকুও হারিয়ে ফেলেন সেই ব্যক্তি। ধরেই নেন তাঁর পক্ষে রোগা হওয়া আর সম্ভব নয়। কেউ কেউ সবকিছু উপেক্ষা করে চেষ্টা চালান। ফলও মেলে। তবে সবার সেই মনের জোর নেই। তাই বিদ্রূপের শিকার হয়ে নিজেকে অন্ধকারে ঢেকে নেন তাঁরা। চিকিৎসকের বয়ানে তিনি মোটা না হলেও, সমাজ তাঁকে ভাবতে বাধ্য করে এমনটাই। বিশেষজ্ঞদের মতে নিজেকে মোটা ভাবাও এক ধরনের মানসিক রোগ। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম কাকামরফোবিয়া বা ফ্যাটফোবিয়া।
আরও শুনুন:
বিদেশে নিষিদ্ধ দেশের নামী সংস্থার গুঁড়ো মশলা, দেশবাসীর চোখ খুলবে কি?
আমাদের সমাজে অনেকেরই এই ধারণা রয়েছে, সবাই মোটা হয় নিজের দোষে। মোটা মানেই কুঁড়ে এবং অলস। অবশ্যই অসুস্থ। খাবার দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। অল্পেতে পেট ভরে না। অবশ্য এই ধারণা হবে নাই বা কেন, মহাভারতের ভীম থেকে ডোরেমনের জিয়ান, সবাই তো এমনটাই করে। তাই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল্বপু ছেলে বা মেয়েটিও এক গোত্রের, এমনটা ধরে নেন অনেকেই। বিষয়টা যে হেলাফেলা করার মতো নয়, তা জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ মোটা মানেই নিজের দোষ থাকবে এমন কোনও ব্যাপার নেই। থাইরয়েড জাতীয় রোগের কারনেও চেহারা ফুলতেই পারে। কিছু কিছু স্ত্রী রোগও স্থূলতার কারণ। কাজেই না জেনে না বুঝে কারও মশকরা বোধহয় উচিত না। এমনকি কেউ নিজের দোষে মোটা হলেও তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা শিক্ষিত সমাজের আবশ্যকর্তব্য হতে পারে না। স্থূলতার কারণে কারও সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বাজে কথায় কান না দিয়ে নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া উচিত।