বিছানা ঠিক না হলে ঘুম আসে না! বালিশ বদলে গেলেও ঘুম আসে না! এমনকি শোওয়ার ধরন বদলালেও ঘুমের দফারফা! তাই প্রতিদিন এক জায়গায়, এক ভাবে, এক নিয়মে, ঘুমানোর অভ্যাস অনেকেরই। কিন্তু এমনটা কী আদৌ স্বাস্থ্যকর? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কেউ পাশ ফিরে, কেউ উপুড় হয়ে, কেউ আবার চিত হয়ে উপর দিকে তাকিয়ে ঘুমোন! এই একটা অভ্যাসে দোসর পাওয়া কঠিন। অবশ্য প্রয়োজনও নেই। ঘুমানোর সময় নিজের মতো থাকতেই পছন্দ করেন সবাই। কীভাবে আরামের সর্বোচ্চ ধাপে নিজেকে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেটাই সার্বিক চেষ্টা। কিন্তু এই আরাম খুঁজতে গিয়েই অনেক সময় গোলমাল হতে পারে।
কীভাবে ঘুমানো হচ্ছে তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। পরেরদিন শরীর কেমন থাকবে সেটা তো বটেই, আগামী সময়টা কেমন কাটবে সেটাও ঠিক হয় ওই ঘুমের কয়েক ঘণ্টাতেই। বিজ্ঞানের নিয়মে ঘুমের সময় স্নায়ু শিথিল থাকে। তার উপর একভাবে বেশ কয়েক ঘণ্টা কাটবে। তাই ঘুমের সময় কায়দা ভুল হলে, একাধিক সমস্যা হতে বাধ্য। অনেক সময় ঘুম ভেঙে দেখা যায় একহাতে বেজায় ব্যথা। কারণটা সহজেই অনুমেয়! হয়তো ওই হাতে চাপ দিয়েই গোটা রাত কেটেছে। সকালে তা জানান দিচ্ছে। একইভাবে কোমর, পা, ঘাড় বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হতে পারে শোওয়ার দোষে। তবে সবথেকে বেশি প্রভাব পড়ে শিরদাঁড়ায়। কারন ঘুমের সময় শিরদাঁড়ার কোনও কাজ নেই! শরীরকে ঋজু রাখার প্রয়োজন পড়ে না। বিছানায় শুয়ে থাকলে তা এমনিই সোজা থাকে। তাই ভুল করে যদি শিরদাঁড়ায় চাপ পড়ে তা বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে। এক্ষেত্রে যে অভ্যাস সবথেকে ভাবনার, তা হল সিলিংয়ের দিকে মাথা করে ঘুমানো। ভাবছেন তো এমনটা বরাবরের অভ্যাস, কই সমস্যা তো হয়নি?
এখানে একটু বোঝার ভুল হতে পারে। এমনিতে চিত হয়ে শুলে সরাসরি সিলিং-এ চোখ যায় না। বরং তার থেকে একটু নিচে চোখ পড়ে। কিন্তু মাথার নিচে যদি বালিশ থাকে, তাহলে ঘাড় এমনই অবস্থানে থাকবে যে চোখ সরাসরি সিলিং-এ পড়তে বাধ্য। বালিশের সংখ্যা যত বাড়বে বা উঁচু হবে, সিলিংয়ের দিকে ততই সোজাসুজি চোখ যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে এটাই ঘাড়ের সমস্যার প্রধান কারণ। কেউ যদি দীর্ঘদিন এইভাবে সিলিং-এর দিকে মুখ করে ঘুমোন তাহলে স্পনডেলাইটিসের মতো সমস্যাও হতে পারে। এবং তা একটা সময়ের পর এমনই মারাত্মক আকার নেবে যে, নিয়ন্ত্রণের উপায় থাকবে না। তাই বালিশের সংখ্যা একটার বেশি না হওয়াই ভালো। হলেও তা খুব উঁচু যেন না হয়। ১৫-২০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে মাথা রাখা যেতে পারে, তার বেশি না। যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের এই ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত। সাইনাসের রোগীরাও এই দিকটা খেয়াল রাখলেই সুস্থ থাকবেন। তবে ঘুমের মধ্যে বারবার ধরন বদলানোর অভ্যাস যাদের রয়েছে তাদের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে কম। এক্ষেত্রে কোনও জায়গাতেই একভাবে চাপ পড়ে না। ফলত, ঘাড় বা শিরদাঁড়া সুস্থ থাকে। এছাড়া কেউ যদি সারারাত উপুড় হয়ে ঘুমান, তাহলেও চাপ পড়ে বুকের উপর। সেই অভ্যাসও অন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। সোজা হয়ে ঘুমানোই সবথেকে ভালো, স্রেফ খেয়াল রাখতে হবে, বালিশ যেন অতিরিক্ত উঁচু না হয়।