পেট ব্যথা। তাই মন বসছে না কোনও কাজে। এমনটা হামেশাই হয়ে থাকে। সেই হিসেবে পেটের সঙ্গে মনের একটা সম্পর্ক রয়েছে তা ধরে নেওয়া যেতেই পারে। কথার কথা নয়, বিজ্ঞানীদেরও দাবি এক্কেবারে তেমনটাই। বরং পেটের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়াই নাকি মানসিক চাপ কমা-বাড়ার জন্য দায়ী। ঠিক কীভাবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অফিসে কাজের চাপ। তার মধ্যেই পেটের গন্ডগোল। হজমের সমস্যা থেকে নানা গোলমাল। এদিকে মেজাজও তিরিক্ষি হয়ে রয়েছে। অনেকেই বলেন মন-মেজাজ খারাপ হওয়ার জন্য আসলে দায়ী ওই পেটের সমস্যা। কথাটা যে খুব একটা ভুল নয়, সম্প্রতি সেটাই প্রমাণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও শুনুন: লিকার চায়ের স্বাদ বাড়াতে ভরসা লেবুর রস, মারাত্মক ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো?
ভাবছেন তো, পেটের সঙ্গে মনের যোগ ঠিক কীভাবে?
বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে এই বিষয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। আর সেখান থেকেই জানা যাচ্ছে, ঠিক কীভাবে পেটের মধ্যে থাকা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঙ্গে মনের যোগ তৈরি হল। একথা বলাই বাহুল্য, আমাদের শরীরের যে কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মস্তিস্ক বা স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সেই হিসেবে পেটের ভিতরে থাকা আভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজও যে মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রণ করবে। এখানেই পেটের সঙ্গে মাথার যোগ তৈরি হয়। এদিকে মাথা আর মনের ব্যালান্স ঠিক না থাকলে মেজাজ বিগড়োতে বাধ্য। যদিও মানসিক চাপের সঙ্গে পেট ব্যাথার মতো সমস্যা জড়ানোর অন্য একটা কারণ রয়েছে। যার মূলে রয়েছে বিশেষ এক ব্যাকটেরিয়া।
আরও শুনুন: কিছুতেই সারছে না সর্দি-কাশি, কমলালেবু খেয়েই বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
গবেষণা বলছে, পেটের মধ্যে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যাদের ঠিকানা অন্ত্র। সেখান থেকেই মন আর মগজের ব্যালান্স ঠিক করে ওই ব্যাকটেরিয়ার দল। আসলে এরা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নয়। বরং এদের জন্যই কমতে পারে স্ট্রেস। এমনটাই দাবি বিজ্ঞানীদের। এই ব্যাকটেরিয়াকে ‘মুড মাইক্রোবস’ বা ‘সাইকোবায়োটিকস’ বলা হয়। যারা খাবার হজমের সময় ফাইবার অংশটা ভাঙতে সাহায্য করে। যার দরুন এমন এক রাসায়নিক পরিবর্তন হয় যা ফ্যাটি অ্যাসিডের এক বিশেষ যৌগ তৈরি করে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই যৌগ মানুষের চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই অনুজীব শরীরে ঠিক্টহাক পরিমানে থাকলেই মঙ্গল। ওষুধ খেয়ে বা অন্য কোনও উপায়ে এদের নষ্ট করে ফেললে আদতে মানসিক চাপ বাড়বে। শুধু তাই নয়, হতে পারে মস্তিষ্কের আরও নানা সমস্যা। এমনকি যারা অটিজম বা পারকিনসনের শিকার, তাঁদের অন্ত্রেও এই ব্যাকটেরিইয়ার পরিমাণ আলাদা মাত্রায়। বিজ্ঞানীদের মতে, এই কারণেই এমন মস্তিষ্কের রোগে ভুগতে হয় তাঁদের। এছাড়া খাদ্যাভ্যাসে বদল, জলবায়ি পরিবর্তন, সম্পূর্ণভাবে রোজকার রুটিন বদলে ফেললেও এই ব্যাকটেরিইয়া কমে যেতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ে মানসিক চাপ। তাই আগামী দিনে এই ব্যাকটেরিয়া কাজে লাগিয়েই মানসিক চাপ কমানোর উপায় খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। জানা গিয়েছে, বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা সফলও হয়েছে। এবার পাকাপাকি এর সমাধান কবে হয়, তা সময়ের অপেক্ষা।