করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে তৈরি হচ্ছে দেশ। সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদেরও।
চোখ রাঙাচ্ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। আর, এবার নাকি শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। চিন্তিত ডাক্তারবাবুরা, চিন্তিত মা-বাবারাও। কিন্তু, এর প্রতিকার ঠিক কী? সম্প্রতি শিশুদের সুরক্ষায় নয়া কোভিড গাইডলাইন প্রকাশ করল কেন্দ্র।
আসুন এক এক করে শুনে নিই শিশুদের জন্য কী নির্দেশ দিচ্ছে কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রক?
গোড়াতেই জেনে নিই, কী করা উচিত নয়। নির্দেশিকায় রেমডিসিভির ব্যবহারের উপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। সেইসঙ্গে জানানো হয়েছে যে, খুব প্রয়োজন পড়লে তবেই যেন স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়।
যাদের বয়স বারো বছর বা তার বেশি, তাদের জন্য আছে মিনিট ছয়েক হাঁটার ফর্মুলা। এতেই বোঝা যাবে অসুস্থতা ঠিক কতখানি। জানানো হয়েছে, আঙুলে পালস অক্সিমিটার লাগিয়ে ঘরের মধ্যেই হাঁটতে হবে একটানা ছয় মিনিট। হাঁটার সময় যদি মাথা ঘোরে, অসুস্থতা বোধ হয়, শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দেয় বা অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৪-এর থেকে কমে যায়, তবে তখনই তাকে হাসপাতালে ভরতি করতে হবে।
আরও শুনুন : কবে থেকে দেশে শুরু হতে পারে কমবয়সিদের টিকাকরণ?
অবশ্য যে সমস্ত শিশু-কিশোর হাঁপানিতে ভুগছে, তাদের জন্য এই পরীক্ষা একেবারেই ঠিক নয়। সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানেই শিশুকে রাখা যেতে পারে।
মা-বাবারা অনেকেই চিন্তিত যে, হঠাৎ যদি বাচ্চার জ্বর কিংবা গলা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয় তবে কী করণীয়? নির্দেশিকায় জানানো হচ্ছে, এরকম পরিস্থিতিতে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা অন্তর খাওয়াতে হবে প্যারাসিটামল গোত্রীয় ওষুধ। সাধারণত এর মাত্রা হবে ১০-১৫ মিলিগ্রাম, তবে ওষুধ দেওয়ার আগে ডাক্তাবাবুদের সঙ্গে একবার কথা বলে নেওয়াই ভালো। সেই সঙ্গে হালকা গরম জলে নুন মিশিয়ে গার্গল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শরীরে তরলের নির্দিষ্ট জোগান এবং সেইসঙ্গে ইলেক্ট্রোলাইট-এর ভারসাম্যের দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। কোনওরকম অসুবিধে হলে দ্রুত ডাক্তারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাসপাতালে পাঠাতে হবে রোগীকে।
এখন অনেক অভিভাবকেরই প্রশ্ন, শিশুরা কি সর্বক্ষণ মাস্ক পরে থাকবে? এই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মাস্ক না-পরলেও চলবে। তবে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সতর্কতা যেন তারা মেনে চলে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবকদেরই। ৬-১১ বছর বয়সি শিশুরা যেন অবশ্যই মাস্ক পরে। তবে, অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে, যাতে শিশুরা বারবার মাস্কে হাত না দেয় বা সেই হাত চোখে-মুখে না দেয়।
এর সঙ্গেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কোভিড পজিটিভ শিশুদের ক্ষেত্রে হাই রেজলিউশন সিটি স্ক্যানের ব্যাপারে চূড়ান্ত সতর্ক হতে হবে, খুব প্রয়োজন না পড়লে কিছুতেই সিটি স্ক্যান করা উচিত হবে না।
এভাবেই করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে তৈরি হচ্ছে দেশ। সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদেরও। মনে রাখতে হবে, অভিভাবকের সচেতনতাই আসলে শিশুর কোভিড জয়ের মূলমন্ত্র।