রোগের হাত থেকে রেহাই নেই খুদেদেরও। তবে এ যে-সে রোগ নয়। জানা যাচ্ছে, ৬০ শতাংশ খুদে ভুগছে এই একটিই অসুখে। কী সেই বিশেষ অসুখ? শুনে নেওয়া যাক।
রাস্তাঘাটে, ট্রেনে মেট্রোয় হামেশাই চোখে পড়ে অনেক শিশুদের। আর এও চোখে পড়ে যে তাদের বেশিরভাগেরই হাতে ধরা মা কিংবা বাবার ফোন। আশেপাশে কী হচ্ছে সে বিষয়ে তেমন নজর নেই, বরং হাতের স্ক্রিনটিতেই তাদের যাবতীয় অস্তিত্ব যেন বন্দি হয়ে গিয়েছে। হাতে ফোন না থাকলে পাশে অন্য কারও ফোনের দিকেও তাদের নজর চলে যায় সহজেই। সত্যি বলতে, অনেক বয়স্ক মানুষও হয়তো স্মার্টফোন ব্যবহার করতে ততটা পটু নন, যতটা দক্ষ এই খুদেরা। তবে ‘স্মার্ট’ শিশুদের আমরা যতই বাহবা দিই না কেন, গবেষকেরা কিন্তু এই বিষয়ে আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘই দেখছেন। জানা যাচ্ছে, এই সময়ে অন্তত ৬০ শতাংশ খুদে ভুগছে একটিই বিশেষ অসুখে, যার নাম ডিজিটাল অ্যাডিকশন।
মোটামুটি ১০০০ জন মা-বাবাকে নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল সম্প্রতি। আর সেই সমীক্ষাই বলছে, ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সিদের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশের আচরণ এই নেশার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে সোশাল মিডিয়া ও গেমিং, এই দুই দিকেই অত্যধিক আসক্তি দেখা যাচ্ছে তাদের। অন্তত ৮৫ শতাংশ মা-বাবাই জানাচ্ছেন যে, সন্তানরা অনলাইনে কী জাতীয় কনটেন্ট দেখছে, সে বিষয়ে রাশ টানতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ছোটদের এই ধরনের গেজেট ব্যবহারের প্রতি আসক্তি প্রায় তিন গুণ বেড়েছে কোভিড পরিস্থিতির পর থেকে। বর্তমানে, রোজকার যা স্বাভাবিক স্ক্রিন টাইম হওয়া উচিত, সেই সীমা রোজই পেরিয়ে যাচ্ছে এই খুদেরা। যা বড় প্রভাব ফেলছে তাদের সামগ্রিক আচরণে।
হাল আমলের ইংরেজি অভিধানে একটি শব্দ পাওয়া যাবে, ‘ফাবিং’। এর অর্থ হল, যখন আরও এক বা একাধিক মানুষের সঙ্গে রয়েছেন, তখনও তাদের দিকে মনোযোগ দেওয়ার বদলে ফোনে ব্যস্ত থেকে তাদের উপেক্ষা করা। ডিজিটাল নেশা শিশু-কিশোরদের এই আচরণের দিকেই ঠেলে দেয় প্রবলভাবে। সোশাল মিডিয়ায় ডুব দিলেও, সোশালি মেলামেশা করতে দেখা যায় প্রবল অনীহা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন একটি উদ্দীপক মস্তিষ্ককে প্রবলভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, তখন মস্তিষ্ক অন্যান্য উদ্দীপনাকে উপেক্ষা করে। তাই কেউ যদি ইলেকট্রনিক গ্যাজেটটিকে আঁকড়ে ধরে থাকে, সে বাইরের সমস্ত কিছুর থেকেই আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। তার ফলে মানসিকভাবে নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে। আর কেবল মানসিক নয়, শারীরিক সমস্যাও গ্রাস করতে পারে একইভাবে। একই জায়গায় শুয়ে বসে থেকে ফোন ঘাঁটা, শারীরিক পরিশ্রম না করা, এর ফলে ওবেসিটির সমস্যাও গ্রাস করতে পারে এই খুদেদের।
নেশা ছড়ানোর জন্য একসময় নানারকমের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ত। অনেকেই নেশামুক্তির জন্য নানারকম উপায়েরও দ্বারস্থ হতেন। তবে নতুন যুগের এই নয়া নেশা ছাড়ানো যে খুব একটা সহজ নয়, সে কথা বুঝতে পারছেন অনেকেই। তবে সে নেশা যে নতুন প্রজন্মকে এক অন্তহীন চোরাবালিতে টেনে নিচ্ছে, সে নিয়ে সচেতন না হলে বিপদ বাড়বে গোটা সমাজেরই।