শেষপাতে মিষ্টি না হলে বাঙালির খাওয়া-দাওয়া সম্পূর্ণই হয় না। বাঙালির মেনুতেও তাই শেষে মিষ্টির জায়গা পাকা। তবে শুধু বাঙালি খাদ্যাভাসেই নয়, গড় খাওয়া-দাওয়া নজর করে দেখলেই বোঝা যাবে, শেষপাতে মিষ্টির বাজিমাত। ডেসার্ট ছাড়া কি আর মেনু কমপ্লিট হয়। মোট কথা, ভরপেট খাওয়ার পরও জেগে থাক মিষ্টি খাওয়ার স্পেশাল খিদে। কিন্তু কেন? উত্তর খুঁজলেন বিজ্ঞানীরা।
বাঙালির ঘরদুয়ারে দুটো কথা চালু আছে। চোখের খিদে আর মনের খিদে। অর্থাৎ হিসাবমতো খিদে পাওয়ার কথা নয়। তবু লোভনীয় খাবার চোখে পড়লেই মনে হয়, খাই খাই! আর এক হল, পেট ভরা থাকলেও খাওয়ার ইচ্ছে জাগছে মনে। মনে হচ্ছে, একটু কিছু না খেলে যেন চলে না! আর এরকম ক্ষেত্রে মিষ্টির জুড়ি মেলা ভার। বিশেষত বাঙালিদের ক্ষেত্রে। শেষপাতে মিষ্টি না হলে বাঙালির খাওয়া-দাওয়া সম্পূর্ণই হয় না। বাঙালির মেনুতেও তাই শেষে মিষ্টির জায়গা পাকা। তবে শুধু বাঙালি খাদ্যাভাসেই নয়, গড় খাওয়া-দাওয়া নজর করে দেখলেই বোঝা যাবে, শেষপাতে মিষ্টির বাজিমাত। ডেসার্ট ছাড়া কি আর মেনু কমপ্লিট হয়। মোট কথা, ভরপেট খাওয়ার পরও জেগে থাক মিষ্টি খাওয়ার স্পেশাল খিদে।
কিন্তু কেন? যখন মাথা জানান দিচ্ছে যে, খাওয়া সম্পূর্ণ, অর্থাৎ পেট ভরে গিয়েছে, তখন মিষ্টির জন্য আবার বিশেষ খিদের ডাকডাকি কেন! আসলে এই খিদে বা সুগার ক্রেভিং-এর নেপথ্যে আছে আমাদের মস্তিষ্কই। মিষ্টি-খিদের অনেকানেক কারণের কথাই বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। যার মধ্যে অন্যতম হল, সুষম পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া। অর্থাৎ শরীরে যদি প্রোটিন, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদির অভাব থাকে, তখন শরীরে মেটাবলিজমের গণ্ডগোল দেখা যায়। খিদের নিয়ন্ত্রণও বেসামাল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় বাড়ে সুগার ক্রেভিং। অর্থাৎ শরীরে যখন বিভিন্ন পুষ্টি-উপাদানের অভাব দেখা যায়, তখন শরীর চেয়ে নেয় হাই এনার্জির খাবার-দাবার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয়ে ওঠে মিষ্টি। আবার এই যে মনের খিদে, যাকে ‘ইমোশনাল ইটিং’ বলা যায়, তা অনেকাংশে স্ট্রেসের উপর নির্ভর করে। অতিরিক্ত ক্যাফিন বা অ্যালকোহল শরীরের ঢুকতে থাকলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তা সুগার ক্রেভিং-কে ইন্ধন দেয়।
তবে, এ তো গেল একটা দিক। আর একটা বিষয় হল, ভরপেট খাওয়ার পর মিষ্টির বায়না। যে কারণে মেনুতে শেষপাতে আগমন ডেসার্টের। এর নেপথ্যে কী কারণ? সম্প্রতি সেই খোঁজ চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। মিষ্টি খাওয়ার দরুন ওজন বাড়া বা ওবেসিটির সমস্যা বাড়তে পারে বলে অনেকেই শঙ্কিত থাকেন। অথচ মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে তো দিব্যি থেকে যায়। তথ্য বলছে, ১৯৯০-২০২২ এই সময়পর্বের মধ্যে শিশু এবং কিশোরদের ক্ষেত্রে ওবেসিটির হার হয়েছে দ্বিগুণ। তাহলে মিষ্টি খাওয়ার এই যে খিদে, সেখানে নাটের গুরু কে? ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর মেটাবলিসম রিসার্চের (Max Planck Institute for Metabolism Research) বিজ্ঞানীরা বলছেন, মস্তিষ্কের বিশেষ কোষই এর জন্য দায়ী, যাদের বচিহ্নিত করা যেতে পারে ‘ডেসার্ট স্টমাক’ হিসাবে। মজা হল, যে স্নায়ুকোষ বলে যে, পেট ভরে গিয়েছে। সেই কোষই আবার মিষ্টি-খিদের বার্তা পাঠায়। প্রথমে ইঁদুরদের মস্তিষ্কের উপর পরীক্ষা চালানো হয়। ভরাপেট খাওয়ার পর তাদের মিষ্টি দিয়ে দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট পথেই এই বার্তা আসছে। মিষ্টি দিলে মস্তিষ্ক তৃপ্তি পাচ্ছে। আর যদি এই পথটিকে কোনওভাবে বন্ধ করে দেওয়া যায়, তাহলে আর এই মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে থাকছে না। পরবর্তী পর্যায়ে মানুষের উপর পরীক্ষা করে দেখা যায়, মস্তিষ্কের ওই নির্দিষ্ট অংশের কোষরাই এই খিদে জাগিয়ে তোলে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিবর্তনের পথ ধরে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। মিষ্টি খুব একটা যে সুলভ তা বলা যায় না। অতএব মস্তিষ্কের গঠন এমন ভাবেই বদলেছে যে, মিষ্টি থাকলে খেতে ইচ্ছে করে, যাতে শরীর দ্রুত এনার্জি পেয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই গবেষণা ওবেসিটি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। নির্দিষ্ট ওষুধের মাধ্যমে এই ক্রেভিং কমানো যেতে পারে। আবার যেহেতু মূল কারণটি চিহ্নিত করা গিয়েছে, তাই থেরাপির মাধ্যমেও এই নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা সম্ভব। বা ওষুধ এবং থেরাপি দুইই চলতে পারে। তবে, এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলেই মনে করছেন তাঁরা। তবে এতদিনে একটা স্পষ্ট যে, মনের খিদে কথাটা নেহাত মিথ্যে নয়। মিষ্টি খেয়ে ওজন বাড়ছে বলে যদি হাত পড়ে মাথায়, তবে বুঝতে হবে সেই সমস্যার মূলে আছে মাথারই হাত।