যা কিছু খেতে ভালো, তাই-ই যে স্বাস্থ্যের পক্ষে সুখকর মোটেও নয়। এ অবশ্য জানা কথাই। তবু আধুনিক জীবনযাপনের অভ্যাসে এই জাঙ্ক ফুড খাওয়া আমাদের প্রায় দৈনন্দিন অভ্যাস। অনেকে ভারী ধরনের জাঙ্ক ফুড খান না। কিন্তু চিপস, বা প্রসেসড বাদাম খেলেও যে একই রকম ক্ষতি হতে পারে, তা তারা মাথায় রাখেন না।
কাজের ফাঁকে টুকটাক চিপস্ মুখে ফেলছেন! কিংবা আয়েশ করে বাড়িতে বসে ওটিটি-তে সিরিজে মগ্ন, সেই ফাঁকে মুখে ফেলছেন চিপ্স। এ তো অনেকেরই অভ্যাস। ফুরসত পেলেই চিপ্সের স্বাদে মশগুল হতে কে না পছন্দ করেন! কিন্তু সেই ফাঁকে কি গলে যাচ্ছে আয়ু? সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, চিপ্সের কল্যাণে শরীরের কোষের বয়স অনেকটাই বেড়ে যায় অজান্তে।
এ কথা ঠিক যে, সাধারণ ভাবে অনেককেই বয়সের থেকে দেখতে বয়স্ক লাগে। সংখ্যার বিচারে বয়স যা-ই হোক না কেন, চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়ার কারণ প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা। বংশগত কারণে তা হতে পারে, কোনও অসুখের কারণেও অনেককে বয়স্ক দেখায়। সেখানে চিপ্স বা এই ধরনের আল্ট্রা-প্রসেসড ফুডের আলাদা কোনও ভূমিকা নেই। তবে, সাধারণ এক প্রবণতার কথা বলা হচ্ছে, যেখানে বয়স বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ এই চিপস, আরও বিশেষ করে বললে আল্ট্রা প্রসেসড ফুড। তিরিশ বা তিরিশের উপর যাঁদের বয়স, এবং যাঁরা নিয়মিত জাঙ্ক ফুড খেয়ে থাকেন, তাঁদের কোষের বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা এবং হার দুটোই বেশি। ইটালিতে প্রায় বাইশ হাজার মানুষের মধ্যে এই সমীক্ষা করেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বিশেষজ্ঞরা। দেখা যাচ্ছে, লাইফস্টাইল বিশেষত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস মানুষের শরীরে কোষের মৃত্যু ত্বরাণ্বিত করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড শরীরে যে প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয় তার দরুন শরীরের স্বাস্থ্যকর বহু মলিকিউল বেশ প্রভাবিত হয়। এর ফলে আবার ডিএনএ-আরএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। যার ফলে কোষের মৃত্যু ঘটে। আর্থারাইটিস, ডায়াবিটিস মতো অসুখগুলোও এই কারণে বাড়ে। সবথেকে বড় কথা, মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও এর যথেষ্ট প্রভাব পড়ে। যে সমস্ত খাবারে সুগার এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেশি, সেই খাবারও কোষের বুড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। হাতে হাত ধরে চলে আসে ওবেসিটি, হাইপারটেনশনের মতো অসুখ এবং হৃদরোগও।
অর্থাৎ যা কিছু খেতে ভালো, তাই-ই যে স্বাস্থ্যের পক্ষে সুখকর মোটেও নয়। এ অবশ্য জানা কথাই। তবু আধুনিক জীবনযাপনের অভ্যাসে এই জাঙ্ক ফুড খাওয়া আমাদের প্রায় দৈনন্দিন অভ্যাস। অনেকে ভারী ধরনের জাঙ্ক ফুড খান না। কিন্তু চিপস, বা প্রসেসড বাদাম খেলেও যে একই রকম ক্ষতি হতে পারে, তা তারা মাথায় রাখেন না। খেয়াল করে দেখা গিয়েছে, গোটা বাদাম খেলে শরীর যে মাত্রায় ফ্যাট শোষণ করে, প্রসেসড বাদামের ক্ষেত্রে তার পরিমাণ অনেক বেশি। এর প্রতিকার একটাই। স্বাস্থ্য সচেতনতার মাত্রা আর একটু বাড়িয়ে তোলা। বেশি তেল বা ফ্যাটযুক্ত খাবারের ক্ষেত্রে যেমন সচেতন থাকেন অনেকেই, সেই সচেতনতা জরুরি চিপস, বাদামের মতো আল্ট্রাপ্রসেসড খাবারের ক্ষেত্রেও। চাইলে এই সব খাবারেরই বিকল্প পাওয়া যায়। সফট্ ড্রিঙ্ক বা প্যাকেজড জুসের বদলে নেওয়া যেতে পারে সহজে। তবে বাঁধ সেধেছে আমাদের লাইফস্টাইলের অভ্যাস। তাই গোড়ায় বদল আনতে হবে সেখানেই। তাহলেই শরীর চলবে নিজস্ব নিয়মে। কোষের বুড়িয়ে যাওয়া বা মৃত্যু এগিয়ে আসবে না।